নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রমিকলীগের নবঘোষিত কমিটিকে পকেট কমিটি দাবি করে এই কমিটিকে অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পদবঞ্চিত জেলা শ্রমিকলীগের নেতারা। রাতের আধাঁরে অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে অগঠনতান্ত্রিকভাবে এই পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে যা অবৈধ বলে দাবি করেছেন তারা। এছাড়া দীর্ঘ ২০ বছর পূর্বে শ্রমিকলীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা যিনি এই দীর্ঘ ২০ বছরেও শ্রমিকলীগের কোন কর্মকান্ডে ছিলেন না তাকে আহবায়ক হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি ত্যাগীদের বাদ দিয়ে হাইব্রীড নেতাদেরকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ৫ জন নেতা স্থান পেলেও নবঘোষিত আহবায়ক কমিটির বিষয়ে তারা কিছুই জানেনা বলে জানান নেতৃবৃন্দ।
রোববার ৩ অক্টোবর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শ্রমিকলীগের বিবদমান দুই গ্রুপের নেতৃবৃন্দ যাদেরকে বাদ দিয়েই গত ১ অক্টোবর শ্রমিকলীগের নতুন আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারী।
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, শ্রমিকলীগের প্রয়াত সভাপতি শুক্কুর মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মাইনউদ্দিন আহমেদ বাবুল, সহসভাপতি মো: শহীদুল্লাহ, শ্রমিকলীগের আরেকটি জেলা কমিটির সভাপতি জনতা ব্যাংক সিবিএ নেতা মো: আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক ও সোনালী ব্যাংক সিবিএ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সভাপতি আকতার হোসেন, সহসভাপতি হুমায়ন কবির।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, শ্রমিকলীগের প্রয়াত সভাপতি শুক্কুর মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিটির সহসভাপতি স্বপন দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহআলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিআইডব্লিউটিসি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের একাংশের নেতা জাকির হোসেন চুন্নু মাস্টার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিজামউদ্দিন বিপ্লব, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক সোহেল সরদার, কবির হোসেন প্রমুখ।
অপরদিকে শ্রমিকলীগের আরেকটি জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মো: সাহাবুদ্দিন, ফিরোজ কায়সার আজম, মো: ইসহাক উল্লাহ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, দেড় যুগ আগে ২০০৪ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিকলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল আব্দুল কাদিরকে। এরপর থেকে আব্দুল কাদির বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকলীগের সুনাম ও ঐক্যের ঐতিহ্য বিনষ্ট করতে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলকে সঙ্গে নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিভাজন সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
গত ১ অক্টোবর সেই বহিস্কৃত নেতা আব্দুল কাদিরকে আহবায়ক করে শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কেএম আজম খশরু স্বাক্ষরিত একটি আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে যা কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত সভায় অনুমোদিত কার্যবিবরনী অনুযায়ী আহবায়ক কমিটি অবৈধ। এর আগে শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারী ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা কোন বিতর্কিত এবং কোন পকেট কমিটিকে অনুমোদন দিবেন না। তাদের সে ঘোষণা অনুযায়ী এই পকেট কমিটি অবৈধ।
এর আগে কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে সম্মেলন ব্যতীত জাতীয় শ্রমিকলীগের জেলা, মহানগর, আঞ্চলিক শাখা, থানা, পৌর ও ইউনিয়নসহ কোন ধরনের আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করা হবেনা। সে হিসেবেও নারায়ণগঞ্জের যে পকেট কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেটিও সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। ২০ ধরে পূর্বে বহিস্কৃত নেতাকে শ্রমিকলীগের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত করায় এবং আহবায়ক কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে হাইব্রীড বিতর্কিত নেতাদের স্থান দেওয়ায় এই নতুন আহবায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন নেতৃবৃন্দ। অবিলম্বে এই অবৈধ আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ জেলার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ জেলার প্রকৃত শ্রমিকলীগের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের জন্য দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে ৫ জন নেতা মনোনীত হয়েছেন। তারা হলেন, সহ-সভাপতি পদে মো: শাহাবুদ্দিন (আদমজী জুট মিল) মহসীন ভূইঁয়া (বিআইডবিøউটিসি), সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কাউসার আহমেদ পলাশ, আইন ও দর কষাকষি বিষয়ক সম্পাদক পদে তিতাস গ্যাসের মো. কাজিম উদ্দিন, ট্রেড ইউনিয়ন সমন্বয় বিষয়ক সম্পাদক পদে সোনারগাঁয়ের সন্তান মো. ফিরোজ হোসাইন। অথচ এই ৫ জন নেতাতো বটেই শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও সহসেক্রেটারী, দফতর সম্পাদকসহ অন্যান্য পদে থাকা নেতৃবৃন্দও এই আহবায়ক কমিটির বিষয়ে কিছু জানেনা বলে দাবি করেছেন তারা।
রাতের আধাঁরে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে এই পকেট কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন। তারা অবিলম্বে এই অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবি করেন।
উল্লেখ্য এর আগে জাতীয় শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পত্রের নির্দেশ অনুসারে গঠনতন্ত্রের ১৩ (ক) ধারা মোতাবেক নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিকলীগের গত ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি পদে দ্বিতীয় কোন প্রতিদ্ব›দ্বীতা না আসায় ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিকলীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ। মূলত এরপর থেকেই শ্রমিকলীগের দ্বিধাবিভক্তির সূত্রপাত ঘটে। সেক্রেটারী পদে মাঈনউদ্দিন আহমেদ বাবুল পুণরায় নির্বাচিত হন।
ওই কমিটি গঠনের ৪১ দিন পরে পাল্টা একটি কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয় জেলা শ্রমিকলীগের একাংশের নেতারা। ২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারী জনতা ব্যাংকের সিবিএ নেতা আব্দুস সালামকে সভাপতি ও সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা আক্তার হোসেনকে সেক্রেটারী করে ৭১ সদস্যের একটি কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দেন।
সর্বশেষ গত ১ অক্টোবর জাতীয় শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম আজম খসরুর ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেয়া হয়। পোস্টে কমিটির কাগজ সহ ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যাতে উল্লেখ করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিকলীগের ২৭ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আব্দুল কাদিরকে আহবায়ক ও কামাল হোসেনকে সদস্য সচিব করে এই আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আহবায়ক কমিটির কাগজ আব্দুল কাদিরের হাতে তুলে দেন আজম খসরু। এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক এম এ রাসেল সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
নতুন এই কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে রয়েছে আব্দুল কাদির, যুগ্ম আহবায়ক হাজী আব্দুল মান্নান মেম্বার, সিরাজুল হক, সদস্য সচিব মো. কামাল হোসেন, সদস্য মোখলেছুর রহমান, মজিবর রহমান, মো. আলী হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান মিজান, অনীল কুমার বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর হোসেন, আলমগীর মিয়া, হুমায়ুন কবির, জাহাঙ্গীর হোসেন, মোসলেউদ্দিন জীবন, মো. আসলাম, মো. সাহাবউদ্দিন পাঠান, মো. ওমর ফারুক, মো. আনোয়ারুল হক সুমন, মো. বোরহান মিয়া, মো. মোজাম্মেল হক, মো. সোহেল আহম্মেদ, সোনিয়া আক্তার, মো. তাজুল ইসলাম, এস এম কাদির, পাভেল খান, মো. রবিউল আলম।
আগামী ছয় মাসের মধ্যে জেলার অধীনে থাকা উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি সম্মেলন করে কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে জেলা শ্রমিকলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।









Discussion about this post