হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে জেলা পুলিশ সুপারসহ আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সকাল থেকেই হেফাজত ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এতে ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজত ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হতে দেখা গেছে। সেখানে পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে মাদ্রসাছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। উভয় পক্ষ সতর্ক অবস্থানে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত আছেন।
এর আগে সকালে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা সড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ার, গাছের গুঁড়ি ও বাঁশে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। সকাল সোয়া ১০টার দিকে হরতাল চলাকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। যানবাহন চালু করার চেষ্টা চলছে।
জায়েদুল আলম , নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম সাংবাদিকদেরক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। যানবাহন চালু করার চেষ্টা চলছে। সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা তিনি শুনেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁরা শিমরাইল ইউটার্ন এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন। তাঁরা সড়কে টায়ার, বাঁশ, কাঠ, চৌকি, বেঞ্চসহ বিভিন্ন আসবাবে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা মহাসড়কের যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
হরতালকে কেন্দ্র করে শহরের ডিআইটি, চাষাঢ়া, সাইনবোর্ড, শিমরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মোতায়েন রয়েছে বিজিবি ও র্যাব।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, হরতালের সমর্থনে মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে অবরোধ তৈরি করে বিক্ষোভ করেছেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।
হেফাজতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা আমাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
মোস্তাফিজুর রহমান, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন)
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘হেফাজতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা আমাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’
এদিকে হরতালের সমর্থনে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার টোলপ্লাজা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি, গাছ, পিলার ও পাথর ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর দাউদকান্দি টোলপ্লাজা এলাকা থেকে ধীতপুর পর্যন্ত বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্স ও ব্যক্তিগত গাড়ি আটকা পড়েছে।
হেফাজতে ইসলামের দাউদকান্দি উপজেলা শাখার নেতা আবু বকর সিদ্দিক ও আবু ইউসুফ জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী মুসল্লিদের ওপর হামলা ও হত্যার’ প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম আজ সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। হেফাজত নেতারা আজকের হরতাল সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সংগঠনের মহাসচিব নুরুল ইসলাম হরতালে সংঘর্ষের কোনো ঘটনা যেন না হয়, সে জন্য সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। হেফাজতের আজকের হরতাল কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।









Discussion about this post