নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির কথা উঠলেই প্রথমেই এই প্রজন্মের সকলের সামনে শামীম ওসমানের নাম উঠে আসবেই । যিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে হাতে – পায়ে – মাথায় ব্যান্ডেজের কাপড় বেধে রাজপথে ছিলেন দীর্ঘদিন। সেই শামীম ওসমান নানা চড়াই উৎরাই শেষে দেশের রাজনীতিতে সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করায় তাক লাগিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য রেখেছেন তুখোড় রাজনীতিবিদ হিসেবে । মামলা, হামলা, প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধাচারণ করে সারাদেশের গডফাদারের তকমাও লেগেছে শামীম ওসমানের ললাটে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য প্রদান করায় খোদ খালেদা জিয়ার কাছ থেকে “চুপ বেয়াদপ“ বলে ধমকও হজম করেছেন শামীম ওসমান। সেই শামীম ওসমানকে রাজনৈতিক মেকারদের মেকার বলে আখ্যায়িত করা হলেও বিগত নাসিক নির্বাচনের মতো এবারো নাসিক নির্বাচনে একেবারেই চুপ থাকায় আলোচনা সমালোচনা চলছে নগরীজুড়ে । তারই ধারাবাহিকতায় সমকালের প্রতিবেদন নিয়ে চলছে নানান বিশ্লেষণ
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি এ কে এম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যকার শীতল সম্পর্ক দীর্ঘদিনের পুরোনো। এ অবস্থায় এখনই সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব-বিবাদ না মেটালে আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে- এমন ভাবনা থেকেই গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর এবং জেলা শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির যৌথ সভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ড দেখভালের জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ডাকে সাড়া দেননি এ কে এম শামীম ওসমান।
গতকালের সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে শামীম ওসমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। এই চার নেতাকে কথা দিয়েও তিনি শেষতক সভায় আসেননি। এ নিয়ে শামীম ওসমানের দিকে ইঙ্গিত করে অনেক নেতাই রীতিমতো বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সভায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন নেতা গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রায় সব নেতাই মতপার্থক্য ভুলে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নেতাদের বক্তব্য, দায়িত্বশীল ব্যক্তিকেও মনে রাখতে হবে- তিনি আওয়ামী লীগে একমাত্র অপরিহার্য নন। আওয়ামী লীগে না থাকলে কেউ সালামও দেবে না। তাই অহংকার ছাড়তে হবে। মতবিরোধ কিংবা প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। তা নিয়ে আলোচনা হবে দলীয় সভায়। জনসভায় সেই আলোচনা আনা যাবে না। তা ছাড়া রাজনীতিতে আবেগের জায়গাও নেই।
এদিকে, নাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ড দেখভালের জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়েছেন, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তাকে সমর্থন করার বিষয় নিয়ে নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সেইসঙ্গে জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আলোচনার প্রস্তুতি রয়েছে। উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটিই জাতীয় পার্টির। তারা হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষে ২৪ ডিসেম্বর শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের শেখ রাসেল পার্কে বিজয় সমাবেশ করা হবে। সেই সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। অন্যদের মধ্যে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদ বাদল ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দন শীল জানিয়েছেন, গতকালের সভায় ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।









Discussion about this post