নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক শিমরাইল মোড়ে সড়ক ও জনপদের জরসাধারনের চলাচলের রাস্তা অবৈধভাবে দখলকারীদের স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন সড়ক ও জনপদ (সওজ) এর কর্তৃপক্ষ।
সোমবার সকাল ১০ টার থেকে শুরু করে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক চিটাগাংরোডের দুই পাশে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।
এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা সড়ক ও জনপদের যুগ্নসচিব মোঃ মাহবুবুর রহমান ফারুকীর নেতৃত্বে শিমরাইল মোড়ে প্রায় ১ হাজারেরও বেশী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। জন সাধারনের চলাচলের রাস্তাটিতে একটি কুচক্রি মহল অবৈধভাবে হকার বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগে গত কয়েকদিন আগে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশত সংবাদের পর উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে এসব অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়। উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা সড়ক ও জনপদের যুগ্নসচিব মোঃ মাহবুবুর রহমান ফারুকী বলেন, সড়ক ও জনপদের রাস্তা অবৈধভাবে দখল করতে দেওয়া হবে না । অবৈধভাবে কেউ যেন দখল করতে না পারে সে জন্য এসব বিষয়ে আমরা স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছি।
শিমরাইল মোড়ের যে রাস্তাটি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে ঐ রাস্তা দিয়ে যদি গাড়ী চলাচল করে তাহলে রাস্তাটি দখল হওয়ার সম্ভাবনা কম । তাই উচ্ছেদের পরপর রাস্তাটা দিয়ে গাড়ী চলাচলের ব্যবস্থা করবো ।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলো।
পথচারীরা বলেন, সড়ক ও জনপদ (সওজ) এর কর্তৃপক্ষ যতবার উচ্ছেদ অভিযান করে চলে যাওয়ার পরপর আবার রাস্তাটি দখল করে নিয়েছে হকাররা। রাস্তাটির উপর এমন ভাবে ব্যবস্থা করতে হবে যেন আর কোনো হকার বসতে না পারে। প্রভাবশালীদের শেল্টারে একচি চাঁদাবাজচক্র রাস্তাটি দখল করে ফুটপাত বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
চলাচলের রাস্তাটি দখল হওয়ার কারনে জনসাধারনকে অনেক দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। তাই অস্থায়ী সমাধান নয়, স্থায়ী সমাধান চান জনসাধারন এবং দখলদারীদের আইনের আওতায় আনারও দাবী জানান ভুক্তভোগীরা।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও এলাকাবাসীর জোড়ালো অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের কুখ্যাত অপরাধী সাত খুনের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী চাচা নূর হোসেন যে কায়দায় প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ, রাজনীতিবিদদের ম্যানেজ, বিশেষ পেশার তালিকাভূক্ত কয়েকজনকে ম্যানেজসহ সংশ্লিষ্ট অনেককেই ম্যানেজ করে ঠিক অনুরূপ কায়দায় নানা অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ভাতিজা কাউন্সিলর বাদল ।
সিদ্ধিরগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সাম্রাজ্য দখল করে মাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তাঁর ভাতিজা শাহ জালাল বাদল। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদল একই ওয়ার্ড ছাত্রলীগের আহ্বায়কও।
নূর হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রথম দিকে ভাতিজা বাদল আত্মগোপনে চলে যান। পরে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পর এলাকায় ফিরে চাচার হারানো সাম্রাজ্য নিজের কবজায় নিয়ে নেন। বর্তমানে তাঁর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ডিএনডি খালের ওপর অবৈধভাবে গড়ে উঠা বিশাল মার্কেট, মহাসড়কের একাংশ দখল করে তৈরি বাস কাউন্টার-দোকানপাট। এ ছাড়াও বিভিন্ন পরিবহন থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় চলছে নিয়মিত। আছে অন্যান্য অবৈধ ব্যবসাও।
গত শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকায় বিভিন্ন পরিবহন মালিক, শ্রমিক, দোকানদার, কাউন্টার, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে ডিএনডি খালের ওপর প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান নির্মাণ, পুলিশ বক্সসংলগ্ন সওজের জায়গা দখল করে শতাধিক পরিবহনের কাউন্টারের জন্য স্থাপনা নির্মাণ, মহাসড়কের একাংশ দখল করে কনফেকশনারি, খাবারের হোটেল, ফোন-ফ্যাক্স, ফটোকপি, এলপি গ্যাস, গাড়ির যন্ত্রাংশ, মুরগির দোকান, চায়ের দোকান, ফলের দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের শতাধিক দোকান নির্মাণ করে এককালীন অ্যাডভান্স বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া ছাড়াও এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করে থাকেন। সিএনজি অটোরিকশাা, লেগুনাসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয়। প্রতিদিন দেড় হাজার পরিবহন থেকে এভাবে চাঁদা আদায় করে বাদলের ক্যাডাররা। এ ছাড়া জমির দালালি, দখল বাণিজ্য করেও হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা।
সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের উত্তর পাশে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) প্রকল্পের অবৈধ মাটি দিয়ে ভরাট ও দখল করে প্রায় তিন শতাধিক সেমি পাকা দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকানঘর ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নিয়ে মাসিক দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অথচ জমির মালিক হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু পাউবো কর্মকর্তারা তাঁর দাপটের কাছে অসহায় বলে জানা গেছে।
এদিকে ডিএনডি খালের উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় পাউবো স¤প্রতি তাদের মালিকানাধীন জায়গা থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা দুই সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার জন্য দুই দফায় মাইকিং করলেও প্রভাবশালীরা তাতে কান দিচ্ছে না।
পরিবহন সেক্টর থেকে মাসে শাহ জালাল বাদল ৩০ লাখ টাকা চাঁদা নেন বলে জানান পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। শিমরাইল মোড় থেকে ডেমরা হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত লেগুনা, অটোরিকশা, মহেন্দ্রসহ প্রায় আট শতাধিক পরিবহন থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করে তাঁর লোকজন। এ ছাড়া খানকা মসজিদের সামনে থেকে ছেড়ে যাওয়া অটোরিকশা, মহেন্দ্রসহ পাঁচ শতাধিক পরিবহন থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলা হয়। কয়েকজন চালক ও মালিক বলেন, মাসিক হারে ও দৈনিক হারে চাঁদা দিতে হয় কমিশনারের লোকদের। চাঁদা দিতে দেরি হলে আমাদের ওপর মারধরসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
জানা গেছে, নয়ামাটি ও মুক্তিনগর এলাকায় জমি কেনাবেচা করতে হলে বাদলের অনুমোদন ছাড়া তা হয় না বললেই চলে। তাঁর নিয়োজিত বেতনভুক্ত ৮-১০ জনের একটি বাহিনী সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসবের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চাহিদামতো চাঁদা না দিলে জমির মালিকরা বাড়িঘর নির্মাণ করতে পারেন না। এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসাও রয়েছে তাঁর দখলে। এ দুই খাত থেকে মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয় হয় বাদলের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সওজের জায়গা দখল করে মানুষ চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে কয়েক শত দোকান ও কাউন্টার নির্মাণ করে মাসে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ পর্যন্ত চাঁদা উঠানো হয়। এ ছাড়া মহাসড়কে চলাচলরত বিভিন্ন যাত্রীবাহী পরিবহন প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা চাঁদা দেয়। স¤প্রতি শীতলক্ষ্যা নদী থেকে রসুলবাগ এলাকায় ড্রেজারের পাইপ বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ভরাটের কাজ শুরু করেছেন বাদল।
সব সেক্টর থেকে কাউন্সিলর বাদলের অবৈধ মাসিক আয় এক থেকে দেড় কোটি টাকা বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুই মেয়াদের কাউন্সিলর বাদলের একাধিক বহুতল বাড়ি, গাড়ি, ঢাকায় ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে বিভিন্ন এলাকায় বিস্তর জায়গা-জমি ও বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা রয়েছে। সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের বিশেষ অভিযানে বাদল পলাতক ছিলেন। তবে এখন আগের মতো বহাল তবিয়তে থেকে সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেই চাচা নূর হোসেনের অপরাধ আর চাঁদাবাজির সাম্রাজ্যে এখন কর্তৃত্ব করছেন বাদল।
২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনার পর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে তাঁর ভাতিজা কাউন্সিলর শাহ জালাল বাদল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এক বছর পর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পর বাদল এলাকায় ফিরে এসে ধীরে ধীরে নূর হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, নূর হোসেনসহ তাঁর স্বজনরা এলাকা থেকে পলাতক থাকার পর তারা শান্তিতে ছিলেন। বাদলসহ ওই পরিবারের লোকজন এলাকায় ফিরে তাদের ওপর স্টিম রোলার চালাচ্ছে। তারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চান।
এতো অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর শাহ জালাল বাদল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত নই। আমার প্রতিপক্ষের লোকেরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিসহ কোনো অপকর্মে জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।









Discussion about this post