মাত্র দুই বছর পূর্বে অর্থাৎ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী তৎকালীর বিতর্কিত পুলিশ সুপার মইনুল হোসেন, বিতর্কিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান (বর্তমান এসপি সাতক্ষিরা), এএসপি (ক) শরফুদ্দিনের পেশাদারিত্বহীনতার কারণে নারায়ণগঞ্জে ঘটেছিলো লংকাকান্ড।
তৎকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা থেকে পরিকল্পিতভাবে হকার ইস্যুতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিন শাহ পারভেজকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করার কারণে ওসি শুণ্য ছিলো থানা । আর তখন সদর থানার অস্থায়ী ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় ইন্সপেক্টর তদন্ত আবদুর রাজ্জাককে ।
সেই সময় শহরের শুধু বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নিজেই পায়ে হেটে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী নগর ভবন থেকে চাষাড়ায় আসার পথে ফুটপাত দখলকারীচক্রের হামলার শিকার হয়ে আহন হন আইভীসহ আরো অনেকেই।
চাষাড়া হকারসহ তাদের শেল্টারদাতাদের হামলায় রণকেত্রে পরিণত হলেও পুলিশের বিতর্কিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান হকারদের সাথে অবস্থান করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন । আর তৎ সময়ে এএসপি শরফুদ্দিন তার বডিগার্ডকে সাথে নিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আমলাপাড়া বড় মসজিদের সামনে রিক্সায় বসে বেতারযত্রে খোজখবর রাখছিলোন । তৎকালীস সময়েও পুলিশের এমন শীর্ষ কর্মকর্তাগণ ফুটপাত থেকে উত্তোলিত লাখ লাখ টাকার বিশাল একটি অংশ নিজেদের পকেটস্থ করায় শহরবাসীর কথা তারা মনে না রেখে পেশাদারিত্ব কে তোয়াক্কা করেন নাই। পরবর্তীতে এসপি হারুন হাজারো বিতর্কের জন্ম দিলেও শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে কোন হকার বসতে দেন নাই ।
এখানে পুলিশের স্বদিচ্ছা থাকায় অর্থাৎ হকারদের চাঁদার টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করবে না এমন মনোভাবের কারণে এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জে থাকাকালে বঙ্গবন্ধু সড়কে পসরা নিয়ে বসতে পারেন নাই কোন হকার । আর সেই সময়ে হকার ফুটপাতে বসতে না পারায় চাঁদাবাজিও কেউ করতে পারে নাই । এসপি হারুন বিতর্কের জন্ম দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলী হলে আবারো চাঁদাবাজ চক্র নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত দখল করতে মহোৎসব অব্যাহত রাখে । এমন মহোৎসবের পর শহরব্যাপী ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার পর নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে জেলা পুলিশ ‘অপারেশন ক্লিন সুইপ’ অভিযান চালায় পুলিশ ।
শনিবার ১০ অক্টোবর দুপুর থেকে এক দফায় উচ্ছেদের পর রাত সাড়ে সাতটা (এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময়) পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহেরর বঙ্গবন্ধু সড়কে কোন হকার কে ফুটপাতে হকারদের বসতে দেখা যায় নাই । এমন অভিযানের ফলে পথচারীরা বিনা বাধায় চলাচল করতে দেখা যায় ।
শনিবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর নেতৃত্বে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের দুইপাশে এই অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় রাস্তার পাশে থাকা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেওয়া হয়। এবং ফুটপাতে ও রাস্তার পাশে অবৈধভাবে পার্ক করে রাখা গাড়ি চালকদের সতর্ক করা হয় যাতে রাস্তায় গাড়ি পার্ক না করে।
পরে দুপুরে চাষাড়া শহীদ মিনারের পাশে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকা সিএনজিগুলোকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় উচ্ছেদ অভিযানের টিমের সদস্যরা। এসময় শহীদ মিনার ও ভাষা সৈনিক সড়কে অবৈধ স্থাপনা ও অবৈধ দোকানগুলো দুপুর ৩টার মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন জাহেদ পারভেজ। অবৈধ স্থাপনা ও অবৈধ দোকানগুলোকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সময় দেন তিনি। এইসময়ের মধ্যে না সরালে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামানকে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে একটি ট্রাকে করে সবকিছু সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন তিনি।
উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের নির্দেশে এই অপারেশন ক্লিন সুইপ। অপারেশন ক্লিন সুইপের আন্ডারে শহরের যত গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো আছে সবগুলো থেকে হকারমুক্ত করবো। এবং দেখা যাচ্ছে যে যারা বৈধ দোকানদার তারাও ফুটপাতের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ করে দখল করে বসে আছে। এগুলো আমরা মোটামুটি উচ্ছেদ করেছি। আজকে উচ্ছেদ হয়েছে কালকে থেকে মামলা হবে। জরিমানা বা মোবাইল কোর্ট না, আমরা মামলা করবো।
এসময় অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওসি আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
শহরের বঙ্গবন্ধু সড়েকের ফুটপাতে কোন হকার না থাকায় পথচারীদের অনেকেই বলেন, পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা যদি হকারদের উচ্ছিষ্ট খাবারে মুখ না দেয় তেবে কেউ আর এই ফুটপাতে বসতে পারবে না । পুলিশ যে সব পারে তার প্রমাণ হলো আজ শনিবারের ফুটপাত মুক্ত শহর । পুলিশের বিতর্কের কর্তাদের মনস্থির করতে হবে তারা এই ফুটপাতের চাঁদাবাজদের কাছ থেকে বখড়া দেবেন কি না। কমপক্ষে শহরের ২০ জন লাইনম্যানের কাছ থেকে আনুপাতিক হারে থানা পুলিশ, ডিউটি পুলিশ, পুলিশের কর্তা ব্যাক্তিরা উৎকোচ (উচ্ছিষ্ট) গ্রহণ না করেন তবে এই শহরে কোন হকার বসতে পারবে না ।
শহরের সকল সড়কেই লাইনম্যানদের মাধ্যমে পুলিশের অসাধুরা নিয়মিত মাসোয়ারা আদায়ের অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে । এই লাইনম্যানদের চাঁদাবাজি যদি পুলিশ বন্ধ করে, তবেই বন্ধ হবে শহরের নৈরাজ্য ।









Discussion about this post