ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মিলন ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষ থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসক চৌধুরী ফাহিম আরেফিনের (২৮) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আলামত দেখে প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা আত্মহত্যা করেছেন ওই চিকিৎসক । আর পরিবারের দাবী এটি পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টায় ফতুল্লা জামে মসজিদে নিহত চিকিৎসকের নামাজে যানাজা শেষে চৌধুরী বাড়ি পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় । এমন ঘটনায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর ফতুল্লার কয়েকটি মসজিদে নিহত চিকিৎসকের জন্য বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসে ইন্টার্ন চিকিৎসক চৌধুরি ফাহিম আরেফিন আত্মহত্যা করেননি, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরোধের জের ধরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
স্বজনদের অভিযোগ, মূল ঘটনা আড়াল করতে মাদক সেবন ও আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবি করছেন স্বজনসহ স্থানীয় সাংবাদিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রাত এগারোটায় আরেফিনের মরদেহ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নিজ বাড়িতে আনা হয়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন আরেফিনের বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশি ও নিকট আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার শত শত মানুষ।
স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে এলাকার পরিবেশ। বার বার জ্ঞান হারিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন আরেফিনের মা-বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। মধ্য রাতে হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেখানে। শোকের মাতম শুরু হয় পুরো এলাকা জুড়ে। রাত বারোটায় স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে আরেফিনের মরদেহ দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার ডিআইটি বালুর মাঠ এলাকার মেধাবি সন্তান আরেফিন সবার খুব আদরের ছিলেন। পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা দেশের সরকারি বিভিন্ন পেশায় উচ্চপদে কর্মরত আছেন। দাদা প্রয়াত ডা. হাবিবুর রহমান ছিলেন মেডিসিন চিকিৎসক ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা, যিনি মাত্র নয়দিন আগে যিনি মারা গেছেন। বাবা চৌধুরি মোস্তফা হাবিব চিশতি পল্লী বিদ্যুতের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
মেঝ চাচা প্রয়াত চৌধুরি আশরাফুল আলম শিবলি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক, যিনি গত মার্চ মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেজ চাচা চৌধুরি জাফর সাদেক ঢাকা বিজ্ঞান কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এবং ছোট চাচা ডা. ইকবাল বাহার চৌধুরি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ঢাকা ডিভিশন ডিজিএইচএস এর সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) পদে আছেন। একমাত্র ফুপু চৌধুরি বদৌরা বিনতে হাবিবা রুম্মান নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ।
স্বজনরা জানান, ২০১৩ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন কলেজ থেকে এইসএসসি পাশ করে সিলেট মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হন আরেফিন। পরে যশোর মেডিকেলে তাকে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে চলতি বছর ১১ মে ময়মনসিংহ মেডিকেলে সার্জারি বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। তার স্বপ্ন ছিল বিদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে পিএইচডি করবেন। এ নিয়ে গত কিছুদিন যাবত প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন আরেফিন।
সমাজের উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পরিবারের মেধাবি সন্তান আরেফিন ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। পারিবারিক সুশিক্ষায় বেড়ে ওঠা এই তরুণ মানবসেবার স্বপ্ন নিয়ে নিজের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই অদম্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। মাত্র এক বছর আগে পরিবারের সম্মতিতে পছন্দের এক সহপাঠী এবং ইন্টার্ন চিকিৎসককে বিয়ে করেন। তাদের মধ্যে কোন ধরণের মনোমালিন্য বা দূরত্ব ছিলো না। হতাশা, মাদক সেবন ও আত্মহত্যা বলে যে ধরণের প্রচার করা হচ্ছে সেটা মেনে নিতে পারছেন না তার বন্ধু-বান্ধব, নিকট আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা। এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্টু তদন্তের দাবি করছেন তারা।
স্বজনদের পাশাপাশি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি বলেন, সরকার আন্তরিকভাবে তদন্ত করলে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসবে।
উল্লেখ্য, বুধবার রাত আটটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মিলন ছাত্রাবাসের ২০৭ নম্বরের নিক কক্ষ থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয় ইন্টার্ন চিকিৎসক চৌধুরি ফাহিম আরেফিনের মরদেহ। পরে আরেফিন নেশাজাতীয় দ্রব্য শরীরে গ্রহণ করে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান পুলিশ ও হাসপাতাল কতৃপক্ষ। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ সদর থানায় মামলা করেছেন আরেফিনের পরিবার।









Discussion about this post