তথাকথিত হকার নেতারা এসপি সাবরে দিতে হবে, ওসি সাবরে দিতে হবে বলে ফুটপাতের প্রতি দোকান থেকে দুইশ’ থেকে পাঁচশ’ করে টাকা নেয়। আসলে পুরাটাই ভন্ডামী। ওই টাকা ওরা নিজেরা খায়। ওরতো কোনো রোজগার নাই। ওর নিজের দোকানই নাই। ওয় কিসের নেতা?
এভাবেই কড়া ভাষায় মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম ফুয়াদ ।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা প্রাঙ্গনে ‘ওপেন হাউজ ডে’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসপি বলেন, এই ধরনের কিছু নেতা আছে। আমার কাছে তারা মাঝে মাঝে গেছে, আমি না করে দিছি। আমি বলছি আমি কোনো নেতা মানি না। হকারের আবার নেতা কী? যার নিজের বাড়ি ঘরই নাই, ছিন্নমূল। তাকে আমি কোথায় খুঁজে পাবো। এরা আপনাদের চোখে ধুলা দিয়া নেতাগিরি করে টাকা ওঠায় বিভিন্ন জনের নাম বলে।
পুলিশ সুপার বলেন, এখানে শাহ নিজাম সাহেব উনারা চাইলে ফুটপাতে হকার বসবে আমি এটা বিশ্বাস করি না। উনাদেরকে চাইতে হবে।
তিনি বলেন, আমার আগে এখানে পুলিশ সুপার হিসেবে অনেকেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের সময়ে পুলিশ ফুটপাত নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে এবং চেষ্টা করেছে। আমিও চেষ্টা করছি। কিন্তু এই চেষ্টায় ফুটপাত দখলমুক্ত হয়নি। আমি সারাদিন চেষ্টা করলেও বন্ধ হবে না। একার চেষ্টা বন্ধ হবে না। ফুটপাত নারায়ণগঞ্জের জাতীয় সমস্যা। ফুটপাত সরাতে হলে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিসি সাহেব কিংবা এসপি সাহেব ফুটপাত সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। জনপ্রতিনিধিদের আসতে হবে।
তিনি বলেন, যারা ফুটপাতে বসে তাদের মধ্যে শতকরা ৯৫ জন অন্য জেলার অধিবাসী। তাহলে অন্য জেলার অধিবাসীর জন্য মায়া দেখিয়ে লাভ আছে ? কান্নাকাটি করে লাভ আছে ? তারা ওই জেলায় গিয়ে বসতে পারে না ? ওই জেলায় কাজের অভাব ? তারা কেন নারায়ণগঞ্জে এসে ফুটপাতে বসবে ? এই জিনিসটা আমাদের সবার মাথা ঢুকাইতে হবে। শুধু আমি এসপি একা ঢুকাইলে হবে না। নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি সবাইকে বুঝতে হবে।
জায়েদুল আলম বলেন, আমাকে বলা হয়েছে অবৈধ ফুটপাত উচ্ছেদ করতে, আমিতো বৈধ ফুটপাতই দেখি না। ফুটপাত সবই অবৈধ। আর ফুটপাত আছে বলেইতো মনে হয় না। শুধু বঙ্গবন্ধু সড়কে দুই পাশে ফুটপাত আছে হাঁটার জন্য। সিরাজউদ্দৌলা সড়কেতো আমি ফুটপাতই দেখি না। সিরিয়ালে দোকান রাস্তার উপরে। আমার যারা পূর্বসূরী ছিলেন বিশেষ করে পুলিশ সুপার মইনুল স্যার, হারুন স্যার তাদের সবাই ফুটপাত নিয়ে চেষ্টা করেছেন। আমি ১০ মাস চেষ্টা করতেছি। এই চেষ্টায় কী ফুটপাত বন্ধ হয়েছে ? একটাও বন্ধ হয় নাই। আমি সারাদিন চেষ্টা করলে বন্ধ হবে ? একার চেষ্টায় হবে না।
জেলা পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, দেখলাম ব্যাংকের কর্মচারী, পিয়ন, তার ব্যাংকের সামনে চারটি দোকান ভাড়া দিছে ফুটপাতে। স্কুল-কলেজের পিয়ন সেও দুইটা ভাড়া দিছে। মিষ্টির দোকান আছে সেও ফুটপাত সামিয়ানা দিয়ে দখল করছে। সে যে জিলাপী, মিষ্টি বানায় ফুটপাতে বসে বানায়। এইগুলো আমরা কীভাবে খেয়াল রাখবো। আর দোকান বসলেই চাঁদাবাজি। এটা আমি অস্বীকার করবো না। যেখানে অবৈধ কিছু আছে সেখানেই অবৈধ লেনদেন আছে। চাঁদাটা নেয় কে? ওই যে ব্যাংকের কর্মচারী নেয়, মিষ্টির দোকানদার নেয়। সে সাথে আমার পুলিশ যে নেয় না সেটা আমি বলতে পারবো না। আমি বলেছি, যদি একটি প্রমাণ পাই তাহলে ওই পুলিশ নারায়ণগঞ্জে থাকবে না।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফজলুল হক, জেলা আদালতের পিপি অ্যাড. ওয়াজেদ আলী খোকন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম, নাসিক ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান প্রমূখ ।









Discussion about this post