নারায়নগঞ্জ নিউজ আপডেট :
বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদকে নিযে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ব্যাপক সমালোচনার পর এবার নড়েচড়ে উঠেছে বন্দর ইউরনয়ন পরিষদের আরেক চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ। আওয়ামীলীেগের নৌকার প্রতীকের প্রার্থীকে হারিয়ে জামায়াত পন্থী ও রাজাকারপুত্রদের অনেকেই ক্ষমতা গ্রহণ করে শাসক দলের নেতাদের শেল্টারে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ । গত ১৬ ডিসিম্বর মেয়র আইভী প্রকাশ্যে এমন রাজাকারদের নিয়ে কঠোর সমালোচনার পর এবার নড়েচড়ে বসেছেন মাকসুদ, এহসান চেয়ারম্যানদের অনেকেই । এমন কঠোর সমোলোচনা ঘুছাতে এবার নানা ছক এঁকে যাচ্ছে চিহ্নিত অপরাধীরা ।
এমন মন্তব্য করে বন্দর উপজেলার এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, বন্দরে আওয়ামীলীগের নেতারা কি করছে তা সকলেই জানেন । কি করছে বিএনপির নেতারা তাও কেউ কম জানেন না । আর জামায়াত – রাজাকােরদের অনুসারীরা জেলার প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে সকল ধরণের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এই চক্রটি । জেলা সদর ও বন্দর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের বিষয়ে স্বচ্ছতার সাথে খোজ নিলেই বেড়িয়ে আসবে কতটা দূর্ধর্ষ অপরাধের সাথে জড়িত এই চক্রটি ।
বন্দর ইউপি চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মস্যাতের অভিযোগের পর এবার জামায়াত কানেকটেডের তথ্য উঠে আসায় এবার শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন এই চেয়ারম্যান । যার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা রেয়েছে বন্দর জুড়ে ।
যদিও বিগত দিনে চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জোড়ালোভাবে অস্বীকার করে নারায়নগঞ্জ নিউজ আপডেটকে বলেছিলেন একটি চক্র তাকে হেয় করতে সক্রিয় রয়েছে । তিনি কোন অন্যায় করেন না বলেও জোড় দাবী করেছিলেন ।
বন্দর এলাকার অনেকেই নাম প্রকাশ না কার অনুরোধে বলেন . এহসান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠার কারণে এবার খেলাধুল নিয়ে মাঠে নেমেছে ধূর্ত এই রাজনীতিবিদ ।
শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর দুপুরে বন্দর ইউনিয়নের ৭নং ওর্য়াডস্থ তিনগাঁও এলাকায় ক্রিকেট খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বন্দর ইউপি চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ এবার শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন ! এগুলি হলো আরেক পলিটিক্স ।
৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেও বহাল বন্দর ইউপি চেয়ারম্যান এহসান
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ, জন্ম নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্সের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত বন্দর ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলেও একই অপরাধে ছাড় পেয়ে গেছেন চেয়ারম্যান।
দুই অর্থ বছরের জন্ম নিবন্ধন ও ছয় মাসের ট্রেড লাইসেন্স খাতে আদায়কৃত অর্থ আত্মসাৎ করার অপরাধে বরখাস্ত হয়েছেন বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।
কিন্তু একই অপরাধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ইউপি চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে। সরকারি বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা প্রদান করে শাস্তি থেকে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন বলেও রয়েছে অভিযোগ।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ এই দুই অর্থ বছরের জন্ম নিবন্ধন ও ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসের ট্রেড লাইসেন্স খাতে আদায়কৃত অর্থ আত্মসাত করেছেন বন্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ ও তার সচিব (বরখাস্ত) মোহাম্মদ ইউসুফ। এই দুই খাতে মোট ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে উক্ত টাকা আদায়সহ ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে। এবং আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। তবে এ ঘটনায় ইউপি সচিবকে বরখাস্ত করা হলেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি আত্মসাৎকৃত টাকাও আদায় করা হয়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় অডিট আপত্তি তোলা হয়। পরে তদন্তে নামে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে বরখাস্ত ইউপি সচিব (সর্বশেষ সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব) মোহাম্মদ ইউসুফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ২০১৬ সালের জুলাইয়ে বন্দর ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করি এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদে বদলি হই। আমি যোগদানের ৫ বছর আগ থেকেই জন্ম নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্সের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি চলে আসছিল। আমি এ বিষয়ে জন্ম নিবন্ধনের স্থায়ী কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত দেই। তিনি আমার ইউএনও অফিসে জমা দিয়েছিলেন। আমি সেখানে সচিব হিসেবে যা যা করার দরকার করেছি। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে আমি তো কিছু করতে পারি না। এমনকি অডিটের জন্য কোন কর্মকর্তা আসেন নাই। কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় চেয়ারম্যান সাহেব দিনের পর দিন এই অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে গেছেন। আমি এসব বিষয়ে চেয়ারম্যান সাহেবকে বাধা দিলে তিনি সরকারি বিভিন্ন আদেশ ও বিধিমালা আমাকে দেখাইছেন এবং বলেছেন, এটা আইনসিদ্ধ। আমি সৎ বিশ্বাসে সেসব বিশ্বাস করে কাজ করে গেছি। শেষে আমিও ফেঁসে গেলাম।
তিনি আরও বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে আমি ছিলাম না এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বদলি হয়ে যাই। সুতরাং তিনটা অডিট আপত্তির একটাতে আমি ছিলাম। বাকি দুইটাতে তো আমি ওই ইউনিয়নে ছিলাম না। ওই সময়গুলোতে যারা সচিব ছিলেন তাদের অভিযুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু তারা হন নাই। তিনটাতেই আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যাই হোক আমি পুনতদন্তের সুযোগে আমি আমার ডকুমেন্ট সাবমিট করেছি। এখন বিভাগীয় মামলা চলতাছে। কিন্তু বিগত ডিসি সাহেব এবং ডিডিএলজি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। চেয়ারম্যান সাহেব চাইতেছেন প্রভাব খাটিয়ে আমাকে ফাঁদে ফেলে আমাকে দিয়েই পুরো টাকাটা পরিশোধ করাতে চাইছেন।
এ বিষয়ে বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে আত্মপক্ষ সমর্থণ করে বলেছিলেন, আমার ইউনিয়নে আমি প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটা জন্ম নিবন্ধনের কাগজ স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু সেখানে আমার অগোচরে ৩০টা পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধন কাগজ ইস্যু হতো। আমার স্বাক্ষর নকল করে এসব করেছেন ইউপি সচিব ইউসুফ। আর এই জন্ম নিবন্ধনের জন্য সরকারী সার্ভারের পাসওয়ার্ড থাকতো সচিবের কাছে আমি । সই করতাম । অনেক সময় দেখতার আবার ানেক সময় বিশ্বাস করে সই করে দিতাম । আমি যেহেতু ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুতরাং দায় তো এড়াতে পারি না। আমি কেন খোঁজ খবর নিলাম না সেটাই আমার ভুল।
তিনি আরও বলেন, আমি বিভাগীয় এ্যাকশনের জন্য অপেক্ষা করেছি। আমি ছয়-সাত মাস আগে ডিসি অফিসে চিঠি দিয়েছি আপনারা যদি মামলা না করেন তাহলে আমাকে মামলা করার সুযোগ দেন। আমি ৫-৭ দিন আগে মামলা করার জন্য চিঠি পেয়েছি। এখন আমি এ বিষয়ে লিগ্যালি এ্যাকশনে যাবো।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক জাহেদুর রহমান বলেন, এটা বিভাগীয় অবস্থায় আছে। এখনও বিভাগের বাইরে যায়নি। আসলে অডিট নিষ্পত্তি একটু দেরি হয়। যেভাবে আগানোর সেভাবেই আগাচ্ছি। যদি দেখি এভাবে হচ্ছে না তাহলে আমরা অন্য পথে যাবে অর্থ্যাৎ আইনগতভাবে আগাবো।
তিনি আরও বলেন, আমার কাছে ডকুমেন্ট রয়েছে। অডিট আপত্তিগুলোর নিষ্পত্তির সর্বশেষ জায়গা পাবলিক একাউন্টস কমিটি যেটা এমপির মহোদয়ের নেতৃত্বে থাকে। আমি এখন পর্যন্ত এরকম কোন ডকুমেন্ট পাইনি যেখানে চেয়ারম্যানকে এই আপত্তি থেকে নিষ্পত্তি দেয়া যায়। সুতরাং এখান থেকে ছাড় পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।









Discussion about this post