মহামারীর কারণে ২০২১ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজনে ছেদ পড়ে; আসছে ২০২২ সালের মেলার আয়োজন নিয়ে এখনও রয়ে গেছে সংশয়।
আয়োজক সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি বলছে, আগামী জানুয়ারি মাসে পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি তারা সেরে নিচ্ছে। কিন্তু পুরো বিষয়টি এখনও নির্ভর করছে মহামারী পরিস্থিতির ওপর।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এইএইচএম আহসান বুধবার বলেন, আগামী বছর মেলার আয়োজন নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন তারা। মন্ত্রণালয় থেকে এ সপ্তাহে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
“আসলে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে মহামারী পরিস্থিতির ওপর। কিন্তু আমরা তো আর বসে থাকতে পারি না। একটি মেলা আয়োজন অনেক বড় কর্মযজ্ঞ। তাই সময়ের সাথে কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছি।”

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর আয়োজনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত পূর্বাচলে নির্মিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
মেলার আয়োজন করতে হলে আরও কয়েকটি দপ্তরের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইপিবির একটি পরিচালন বোর্ড রয়েছে। আমি সেই বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান। মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী সেই বোর্ডের চেয়ারম্যান। মূলতঃ ওই বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে মেলা আয়োজনের আনুষ্ঠানিক পর্ব শুরু করতে হবে।
“এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই মিলাটি উদ্বোধন করে থাকেন। তাহলে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের ওপরই নির্ভর করছে মেলার আয়োজন করা না করা।”
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের মেলা পূর্বাচলে আয়োজন করার কথা থাকলেও বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার তখনও পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না। মহামারীর কারণে পরিস্থিতিও অনুকূলে ছিল না।
মার্চে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর জোড়া আয়োজনের মধ্যে বাণিজ্য মেলা করা যায় কি না, সে পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতির কারণে তা বাদ দিতে হয়।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর আয়োজনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত পূর্বাচলে নির্মিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ১৯৯৫ সাল থেকে হয়ে আসছে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। ইতোমধ্যেই মেলার ২৫টি পর্ব অতিক্রম করেছে।
কিন্তু মেলার কারণে জানুয়ারি মাসজুড়ে শহরের ভেতরে ব্যাপক লোকসমাগম ও যানজটের সৃষ্টি হত। তাই কয়েক বছরের চেষ্টায় এ ধরনের মেলা আয়োজনের জন্য রাজধানীর অদূরে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পকে ঘিরে নির্মাণ করা হয় বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার।
চলতি বছরের শুরুতেই নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওই প্রদর্শনী কেন্দ্র ইপিবির কাছে হস্তান্তর করে।
আরও যেসব বাধা
মহামারী ছাড়াও পূর্বাচলে মেলা আয়োজনের আরেক বাধা হিসাবে রয়েছে নতুন করে সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা একমাত্র যাতায়াতের রাস্তা ৩০০ ফুট সড়ক। নবনির্মিত এ সড়কটিতে বেশ কয়েকটি আন্ডারপাস নির্মাণ হচ্ছে। ফলে সেখানে যানবাহন চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে।
আগের মেলাকেন্দ্র শেরেবাংলা নগর থেকে ২৫ কিলোমিটার এবং কুড়িল বিশ্বরোড থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের এ প্রদর্শনীকেন্দ্রে কীভাবে লোক সমাগম হবে সেটাও রয়েছে আয়োজকদের চিন্তায়।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা রাস্তা সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদারদের অনুরোধ করেছি যাতে ডিসেম্বরের আগেই ওই সড়ক অন্তত বাস চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়। তারাও সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ঢুকতে হবে ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
“গত বছর মেলা আয়োজনের আলোচনা যখন চলছিল, তখন বিআরটিসির কিছু শাটলবাস মেলা প্রাঙ্গণের উদ্দেশ্যে চলাচলের একটি পরিকল্পনা আমরা নিয়েছিলাম। এবারও হয়তো সেরকম কিছু করা হবে। তবে এসব বিষয় এখনই আলোচনায় আসেনি। সময় ঘনিয়ে এলে একটা উপায় বের করা যাবে।“
পূর্বচলের প্রদর্শনী কেন্দ্র
পূর্বাচলে কাঞ্চন ব্রিজের কাছে ৪ নম্বর সেক্টরে ২০ একর জমির ওপর বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর মেলার অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর নির্মাণ কাজ শেষ করার ঘোষণা দেয় তারা।
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রদর্শনী কেন্দ্রটি ইপিবির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সেখানে ৯ বর্গফুট আয়তনের ৮০০টি স্টল রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে ছয় একর খোলা জায়গা। চাইলে সেখানেও অস্থায়ী স্টল বসানো যাবে।

রাজউকের নতুন শহর পূর্বাচলে ২০ একর জমির উপর নির্মিত বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে রয়েছে দুটি বড় হলরুম। এখানেই বসবে ৯ বর্গফুট আয়তনের ৮০০টি স্টল। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
শেরেবাংলা নগরে আগের বাণিজ্যমেলা মাঠে গাড়ি রাখার স্থানসহ মেলা প্রাঙ্গণের আয়তন ছিল ৩২ একর। সর্বশেষ মেলায় স্টল-প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৪৮৩টি।
প্রদর্শনী কেন্দ্রেরমোট ফ্লোর স্পেস ৩৩ হাজার বর্গমিটার। ভবনের মোট ফ্লোর স্পেস ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার। এক্সিবিশন হলের মোট আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার।
দোতলা পার্কিং ভবনে ৭ হাজার ৯১২ বর্গ মিটার জায়গায় ৫০০ গাড়ি রাখা যাবে। এছাড়া এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনে খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি রাখা যাবে।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, শেরেবাংলা নগরের মত এত ব্যাপক আয়োজনে এবার পূর্বাচলে মেলা করা যাবে না। আগের চেয়ে স্টল-প্যাভিলিয়নের সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে আনার চেষ্টা করবেন তারা।
সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম









Discussion about this post