সোনারগাঁওয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন কর্তৃক স্থাপিত জি আর ইন্সটিটিউটের ফলক ভাংচুরের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকে নিয়ে সম্প্রতি তোলপাড়ের পর ফের নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে অব্যাহতি দেয়া, নতুন ফলক স্থাপনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক ।
অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ থেকেই এমন একের পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে বলেও ব্যাপক চাউর হচ্ছে নারায়ণগঞ্জজুড়ে
এমন নানা রাজনৈতিক বিতর্ক ও ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার পর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যম কে বলেছেন তার পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানে জেলা আওয়ামী লীগের কোন চিঠি অথবা অব্যাহতির পেপার পান নাই।
একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি অব্যাহতির বিষয়ে। কিন্তু আমি জানি উনাদের (জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সেক্রেটারী) এখতিয়ার নাই অব্যাহতি দেয়ার। এমন বক্তব্যসহ অনেক কথাই বলেছেন এক সময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ।
জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেছেন, আমি যদি কোন দলীয় নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে থাকি তাহলে উনারা আমাকে চিঠি দিবে শোকজ করবে আমি জবাব দিব। আমি যদি সন্তুষ্টজনক জবাব দিতে না পারি কেন্দ্রে চিঠিটা পৌঁছাবে। এবং কেন্দ্রে মানবতার মা প্রিয় জননেন্ত্রী শেখ হাসিনা যেই সিদ্ধান্ত নিবে আমি সেই সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিব। কিন্তু উনাদের (জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সেক্রেটারী) ইখতিয়ার নাই আমাকে অব্যাহতি দেয়ার।
২৪ নভেম্বর মঙ্গলবার জাহাঙ্গীর আলম বরাবর ওই চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে (ঢাকা বিভাগ)।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল সাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি জাহাঙ্গীর আলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতা বিরোধী দল হিসেবে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বক্তব্য রাখার অপরাধে আপনাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। এখানে উল্লেখ থাকে যে, ২১ নভেম্বর ২০২০ তারিখে আপনার দেওয়া বক্তব্য ক্ষমার অযোগ্য। যাহা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতোমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে।’
গত ১৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার নির্দেশে সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠে।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে ২১ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীর আলম।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা বিরোধী দল।’ মূলত এ বক্তব্যের পরেই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরের দিন জাহাঙ্গীর আলম বক্তব্যে অনড় থাকলেও ২৩ নভেম্বর তিনি ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, আমি গত ২১ তারিখ যে বক্তব্য দিয়েছি সেখানে স্লিপ অফ টাং একটা ভুল হয়েছে। বক্তব্যের উত্তেজনার মুহূর্তে আওয়ামীলীগ স্বাধীনতা স্বপক্ষের দল বলার ক্ষেত্রে মুখ ফসকে স্বাধীনতা বিরোধী বলে ফেলেছি। এটা বক্তব্যের উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে আর মানুষ মানুষকে ক্ষমা করবেনা। কিন্তু এরপরও আমি আজকে পত্রিকাগুলোতে বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছি। লিখিত আকারে এই বিবৃতি দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আনোয়ার হোসেন হচ্ছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মানে জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেই আনোয়ার হোসেনের উপরে হাত দেয়া মানে গোটা আওয়ামীলীগ পরিবারের উপরে হাত দেয়া। সেই আনোয়ার হোসেনের উপরে হাত দেয়া মানে শেখ হাসিনার উপরে হাত দেয়া। সেজন্য কিন্তু আমরা তীব্র প্রতিবাদ করেছি। সেই প্রতিবাদে বক্তব্যের মধ্যে আমার এই ভুলটা হয়ে গেছে। এই ভুলের জন্য আমি কিন্তু ক্ষমাও চেয়েছি।
ভিপি বাদল সম্পর্কে বলেন, ভিপি বাদলের (জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল) উকিল বাবা হচ্ছে এমপি খোকা টোকাই খোকা। এমপি খোকাকে বাঁচানোর জন্যে আমার উপর উঠে পড়ে লেগেছে। আমি সত্য কথা বলি বিধায় আমার হাত পা ভেঙে দেয়ার জন্য ওরা উঠে পড়ে লেগেছে। বাদল যে লাঙ্গল মার্কা আওয়ামীলীগের এটা আওয়ামীলীগের সবাই জানে। তাই এমপি খোকাকে বাঁচানোর জন্য আমাকে এই অব্যাহতি দিয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল বলেন, অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের আছে।









Discussion about this post