বিএনপি নাসিক নির্বাচনে কোন অবস্থাতেই অংশ গ্রহণ করবে না এমন ঘোষনার পরও গুরুতর অসুস্থ খোদ খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন পুরোদমে । কাকডাকা ভোর থেকে তৈমূর আলম খন্দকার তার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালালেও কেউ কোনভাবেই প্রশ্নও তুলছেন না নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে ।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কিংবা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কেউ আচরণ বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে বলেও কোন সতর্ক না করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে জোড়ালোভাবে । এমন সমারোচনার পর এবার নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে তৈমূর আলমের পক্ষে কাজ না করলে শহর থেকে বের করে দেয়ার হুমকিতে তেলেবেগুণে জ্বলে উঠেছে অনেকে বিএনপির নেতা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় অনেক বিএনপি নেতাই বলেছেন, কি হচ্ছে ? আর কি হবে ? তা সময় মতোই জবা্ব দেয়া হবে । ধৈর্য্য ধরার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা আদেশ দিয়েছেন সেই ভাবেই চুপ করে আছি । মুখ যখন খুলতে হবে তখন খুলেই দেবো । বিগত নির্বাচনে কার কাছ থেকে কে কোটি কোটি টাকা নিয়ে নির্বাচন করেছে তা তো বোমা ফাটাইয়া দিয়েছিলো অ্যাডভোকেট ও বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু । তেমনি সময় মতো প্রকাশ পাবে কারা ? কোথা থেকে ? কি করে? কি কি খেলা খেলছে তা প্রকাশ পাবেই ।
জেলার এক শীর্ষ নেতা তার ক্ষুদ্ধ মন্তব্যে আপাততঃ নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেছেন, time will say, what to do or what not to do.
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ না করলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের শহর ছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল।
আতাউর রহমান মুকুল বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। দলীয় নির্দেশনা না পেলে তৈমুর আলমের পক্ষে যারা কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন তাদের ‘দালাল’ বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপির এই নেতা।
গত সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১২নং ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এইসব কথা বলেন। শহরের মিশনপাড়ায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক টি এম কামালের বাড়িতে এই সভার আয়োজন করা হয়।
ওই সভায় আতাউর রহমান মুকুল বলেন, ‘যারা এখনও আমাদের সাথে আসে নাই, তারা আমাদের চাইতেও বড় বিএনপি। তারা বলতেছে, কেন্দ্র তো বলে নাই, আমরা কেন নির্বাচন করবো, বাহানা দেখায়। এইগুলা হচ্ছে তাগো (আওয়ামী লীগ) দালাল। এইগুলি (বিএনপির নেতা-কর্মীরা) যদি না আসে তৈমুর ভাইয়ের নির্বাচন না করে এইগুলিকে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বের করে দিব। এক দম সোজা কথা।’
এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে আতাউর রহমান মুকুল বলেন, দলের নেতাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্যই তিনি বক্তব্যে অমন কথা বলেছেন। নেতা-কর্মীরা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে বলে দাবি তার।
এদিকে ‘বিএনপি নেতা-কর্মীদের শহরছাড়া’ করার হুমকি দিয়ে দেওয়া আতাউর রহমান মুকুলের বক্তব্যের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, যারা নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করছেন তারা সবাই জানেন তিনি কোন পরিবারের দালাল। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বিএনপি নেতারা বলেন, দলের সমর্থিত ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে তিনি প্রকাশ্যে বিরোধীতা করে মহাজোট সমর্থিত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। সেলিমা ওসমানের নির্বাচনী সভায় এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভোটও চেয়েছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল।
এই প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন বলেন, ‘প্রথমত দল কোনো প্রার্থী দেয়নি। তাছাড়া দল প্রার্থী দিলেও পছন্দ না হলে তার পক্ষে কাজ না করতেই পারে কেউ। এইটা একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু কাজ না করলে তাকে শহরছাড়া করার হুমকি কেউ দিতে পারে না। এইভাবে বলা তার উচিত হয়নি।’
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও টানা দুইবার বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আতাউর রহমান মুকুল। তার এই নির্বাচিত হওয়ার পেছনে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ ছিল। বরাবরই ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেন আতাউর রহমান।
মুকুল মহানগর বিএনপির সহসভাপতি পদে থাকলেও তৈমুর আলম খন্দকারের সাথে তার পুরোনো বিরোধ ছিল। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধ মেটাতে বাধ্য হয়েছেন বলেও ২০ ডিসেম্বর দেওয়া বক্তব্যে জানান তিনি। মুকুল বলেন, ‘তৈমুর ভাইয়ের সাথে আমার পুরা বিরোধ ছিল। দুর্দিনে আমরা মিলতে বাধ্য হইছি।’
এদিকে সূত্র বলছে, ক্ষমতাসীন দলের ওসমান পরিবারের সাথে বিএনপি নেতা মুকুলের সখ্যতার গল্প নতুন না। বরং এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে পাল্টা উত্তর দেন, ‘আমি বিএনপিকে বেঁচে খাই না বরং বিএনপি আমাকে বেঁচে খায়।’ বিএনপির দলীয় কর্মসূচিতে দেখা না মিললেও ক্ষমতাসীন জোটের অনুষ্ঠানগুলোতে ঠিকই দেখা মেলে এই নেতার। তার এমন কর্মকান্ডে দলের থেকে বেশি বিশ্বস্ত দেখা যায় ওসমান পরিবারের প্রতি এমনও মন্তব্য করেন একাধিক বিএনপি নেতা। যার সর্বশেষ উদাহরণ মেলে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী এসএম আকরামকে সমর্থন না দিয়ে কাজ করেন মহাজোটের প্রার্থী এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা করতেও দেখা যায় তাকে। নিজ দলের প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন। যুক্তি দিয়েছিলেন, দল না উন্নয়নের পক্ষে তিনি।
এদিকে আতাউর রহমান মুকুলের এমন সিদ্ধান্তের জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। গত ২১ মে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বন্দর উপজেলা পরিষদের সামনে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় বিগত সময়ে চেয়ারম্যান ছিলেন আতাউর রহমান মুকুল। তার দলীয় পরিচয় বড় কথা নয় আমি জানি, সে আমার ভাই। সে বন্দরে জাতীয় ইলেকশনের সময় তিনি তার দলের থেকেও বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এলাকার উন্নয়নকে। তাই আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। কে কোন দল করি বড় কথা নয়, উন্নয়ন সবাই মিলে করতে হবে।’
এছাড়া আতাউর রহমান মুকুলের প্রতি নারায়ণগঞ্জ-৫ বন্দর ও সদর আসনের সাংসদ সেলিম ওসমানের বিশেষ স্নেহের কথা সবাই জানে। বিএনপির দলীয় কর্মসূচিতে কদাচিৎ থাকলেও সেলিম ওসমানের যেকোনো অনুষ্ঠানে দেখা মেলে মুকুলের।









Discussion about this post