গত কয়েক বছরেও কোন ব্যবস্থা নেতা হয় নাই ফতুল্লার সেই ব্রাজিল বাড়ির তেলচুরির হোতা টুটুলের বিরুদ্ধে । এমন দৃশ্যমান দূর্ণীতি কে যেন জায়েজ করে দিয়েছে দেশের আইনপ্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
দূর্ণীতি করে গড়ে উঠা আজকের টুটুলের কাছে যেন জিম্মি হয়ে পরেছে শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই । এমনটাই প্রমাণ করেছে ব্রাজিল বাড়ির সেই তেলচুরির হোতা টুটুল।
যিনি সামান্য কয়েক বছর পূর্বে ৫০ টাকায় দিনমজুর হিসেবে খাবারের হোটেলে কাজ করতো । সেই টুটুল বাবা মারা যাবার বদৌলতে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে হেলপার হিসেবে চাকুরী নিয়ে বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক ।
কিভাবে কোন কর্মকর্তাকে কি মাত্রার ঘুষ / উৎকোচ দিয়ে ম্যানেজ করতে হয় তা তে খুব সিদ্ধহস্ত মহাধুর্ত তেলচুরির হোতা টুটুল । আর সেই সিদ্ধহস্তের কারণেই অপকর্ম ধামাচাপা দিয়েছে চোরচক্র
যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (জেওসিএল) বিগত পাঁচ দশক ধরে জ্বালানি তেল সরবরাহের মাধ্যমে দেশবাসীকে সেবা দিয়ে আসছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই তেল চুরির অভিযোগ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়।
এবার নারায়নগঞ্জের সেই ব্রাজিল বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ‘সার্চ লাইট’ নামে একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনসহ অসংখ্য গণমাধ্যমে টুটুলের তেল চুরির টাকা দিয়ে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণের তথ্য উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যমুনা অয়েল কোম্পানিতে গেইজার হিসেবে কাজ করতেন জয়নাল আবেদীন টুটুল। তার কাজ হলো তেল মাপা। টুটুলের বাবার নাম মো: রফিক। তিনিও এই কোম্পানিতে সিকিউরিটি হিসেবে কাজ করতেন। অসুস্থ অবস্থা মারা গেলে তার পারিবারিক বিবেচনায় জয়নাল আবেদীনকে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে এ কম্পানিতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। তখন তিনি ৫৫ টাকা মজুরিতে ক্যান্টিনে প্লেট পরিষ্কার করত।
২০০৫ সালে তার চাকরি স্থায়ী হয়। তার কিছুদিন পরই অপারেটর হন টুটুল। তারপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মাথায় তেল দিয়ে নয়, নিজেই ডুবে গেলেন তেলের ভিতর। এমনভাবে ডুবে গেলেন যে, নিজের ভাগ্যটাই পরিবর্তন করে ফেললেন। অপারেটর থেকে সাধনা করে গেইজার হয়ে গেলেন। তখন তার বেতন মাত্র ২৫ হাজার ৪শ ৬২ টাকা। গেইজার হওয়ার পর তেল চুরির সাথে জড়িয়ে পড়েন জয়নাল।
আর এই কাজে তার সঙ্গে রয়েছে যমুনা অয়েলের উচ্চপদস্থ তিন কর্মকর্তাসহ ৫ জন। এই ৫ জন মিলে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। যারা তেল চুরি ছাড়াও পদায়ন, পদোন্নতি, নিয়োগ ও বদলি-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় তাকে সুনামগঞ্জের সাজনা বাজারে বদলি করা হয়। পরে কর্মস্থলে দুর্নীতির অভিযোগে তার (জয়নাল) বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেন যমুনা অয়েল কোম্পানির এক কর্মকর্তা।
এতো অল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তির মালিক কিভাবে হলেন জানতে চাইলে টুটুল বলেন, বাবার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি, ইউসিবি ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা লোন ও আমার বোন জামাইদের সহযোগিতায় আমি বাড়িটি করেছি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নারায়নগঞ্জের এই বাড়িটি ছাড়াও টুটুলের আরো সম্পত্তি রয়েছে। তার মধ্যে বাড়ির পাশে ৮ শতাংশ জমি ও ফতুল্লায় ৪ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি। ইউসিবি ব্যাংক থেকে নেওয়া ২০ লাখ টাকাও ফিরত দিয়েছেন একসাথে।
পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ আকরম আল হোসেন দুই বছর পূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কে জানিয়েছিলেন, টুটুল রাশিয়ায় ফুটবল খেলা দেখতে গিয়েছে তার পারমিশন নিয়েছে কি না এটা আমরা খতিয়ে দেখব। আর কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চুরি কিংবা অন্য কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে এর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
গেলো দুই বছরেরও অধিক সময়ে এমন অপরাধের বিষয়ে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণের তথ্য পাওয়া না গেলেও মহাধুর্ত তেলচুরির হোতা টুটুল প্রায়ই দম্ভ করে বলেন, “এ দেশে টাকায় কি না হয়, ম্যানেজ কে না হয় । দেশের মন্ত্রী যখন ম্যানেজ করা যায় আর সেখানে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন তো সামান্য বিষয় !”









Discussion about this post