চরম রাজনৈতিক মতপার্থক্যের পর নানা কারণে ব্যাপকভাবে আলোচিত সমালোচিত নারায়ণগঞ্জের দুই নেতা মেরর ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মাঝে চলমান দ্বন্ধের খবর সকলের জানা ।
শাসক দলের প্রভাবশালী এই দুই নেতা যে কোন সভা সমাবেশে বক্তব্যকালে কেউ কারো নাম উল্লেখ না করে উনিয়ে বিনিয়ে খোচা মেরে কটাক্ষ করে মন্তব্য করে রাজনৈতিক মহল নিজেদের অবস্থান জানান দেন ।
ঠিক তেমনি এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিদের ইঙ্গিত করে বক্তব্য রেখেছেন।
কিন্তু তিনি কারো নাম বলেনি। তবে জনপ্রতিনিধি হিসেবে শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ তাঁর নির্বাচনী আসন ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ।
১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। করোনার কারণে এবার সুধী সমাবেশ না করে আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগার মিলনায়তনে ওই বাজেট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, যারা ফুটপাত দিয়ে মানুষের হাঁটাচলা প্রতিবন্ধকতা করছে তাদের পৃষ্ঠপোশকতা করছে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। তাদের প্রতি আমি ধিক্কার জানাই। এ ফুটপাত রক্ষা করতে গিয়ে আমরা মার খেয়েছি। রক্ত ঝরিয়েছি। আমরা সেইসব পৃষ্ঠপোশক জনপ্রতিনিধিদের ধিক্কার জানাই যারা শহরের ৫ থেকে ১০ লাখ মানুষকে জিম্মি করে রাখছে। তারা আমাদের হাঁটার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, হকাররা যদি থানা ঘেরাও করতে পারে তাহলে আমাদের যে মারবে না সেটার কি নিশ্চয়তা আছে। কাউন্সিলররা যদি হকার উচ্ছেদ করতে যায় তাহলে হয়তো সব কাউন্সিলরদের মারবে না। কিন্তু ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে তো রাস্তায় মারধর শুরু হবে। তাদের এসব ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও সাহসের পেছনে কারা সেটা খুঁজে বের করা উচিত। তাঁকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে সাথে নিয়ে হাঁটতে চায় নারায়ণগঞ্জের মানুষ। কিন্তু তাঁর এলাকা নারায়ণগঞ্জ না। তাঁর এলাকা ফতুল্লা। সেখানে গিয়ে মাতুব্বরী করুক, নারায়ণগঞ্জ শহরে না।
আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যত্রতত্র স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হচ্ছে। শহরের খানপুরে সিটি করপোরেশনের রশিদ ছাপিয়ে টাকা আদায় করা হয়। অবৈধ রশিদসহ গোয়েন্দা সংস্থাকে একাধিকবার দেয়া হয়েছে। কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাবে এমপি সাহেব বসে থাকেন। সেখানে ক্লাবের সামনেই ২৪ ঘণ্টা অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। আমি চাই ট্রাক স্ট্যান্ড নির্ধারিত স্থানে থাকুক। কিন্তু অন্য একজন জনপ্রতিনিধি চান ট্রাক স্ট্যান্ড মন্ডলপাড়াতেই থাকবে। কারণ চাঁদাবাজি করতেই হবে। এই চাঁদাবাজির পেছনে কারা আছে তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু মুখ খুলি না।’
আইভী বলেন, রাজউকের সঙ্গে মামলা চলাকালেই তারা জায়গা বিক্রি করে দিয়েছে। এ শহরের জনপ্রতিনিধিরা রক্ষক হয়ে ভক্ষক হয়ে গেছে। রাজউকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগসাজশ করে শহরের একজন জনপ্রতিনিধি যিনি জনগণের জন্য কাজ করবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি তার এক বন্ধুর নামে জায়গা কিনে। ৭ কোটি টাকায় জমিটি কিনে পরেই আবার ১৪ কোটি টাকায় পপুলারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি নিজের নামে কোন প্লট নেইনি রাজউকের কাছ থেকে। নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য জমি রক্ষা করতে গিয়ে উল্টো আমাদের মামলা খেতে হচ্ছে।
তিনি অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ২০০৩ সালে পৌরসভা নির্বাচনের পর আমি রাজউকের জায়গাগুলো ফেরত চেয়েছিলাম। তখন আমরা চাষাঢ়া সভা সমাবেশ করেছি। ঢাকায় গিয়ে নারায়ণগঞ্জের লোকজন রাজউক ঘেরাও করেছিল। সেখানে আমাদের কয়েকজন কাউন্সিলর বেশ বেশ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাই আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে বিচার রেখে যেতে চাই।
আইভী বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে। সব সংস্থা যার যার মত কাজ করছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন কিছু করতে গেলেই বিপত্তি ঘটে। রেলওয়ে ডাবল লেনের কাজ করছে। আমি বলেছিলাম সবাই সমন্বয় করে কাজ করি। ট্রেন, রিকশা বাস সব চলুক। কিন্তু কে শুনে কার কথা। ডাবল লাইন হলে নারায়ণগঞ্জের উত্তর-দক্ষিণ সারা জীবনের জন্য বন্ধ থাকবে। বরফকল কন্টেইনার পোর্ট করতে চেয়েছিল। আমি বলেছি আগে রাস্তা করতে হবে। তারা বিষয়টি বুঝেছে। সে কারণে তারা আগে রাস্তা করতে চায়।









Discussion about this post