শীতলক্ষ্যা নদীর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর এলাকায় নব নির্মিত চায়না ব্রিজের পিলারের কাছাকাছিতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবির ঘটনায় পাঁচ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷
নিখোঁজ রয়েছেন ২৫ জনের অধিক যাত্রী৷
রোববার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে সদর উপজেলার চর সৈয়দপুর এলাকায় একটি কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়।লঞ্চে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিল৷ রাত এগারোটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৯ জন সাঁতরে তীরে ওঠেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই ৷ লঞ্চ ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, দমকল বাহিনী, নৌ ও থানা পুলিশের উদ্ধারকর্মীরা৷ রাত পৌনে বারোটায় উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে ।

নারায়ণগঞ্জ নৌ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শহিদুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে জানান, গোগনগর চর সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যায় নির্মাণাধীন সেতুর কাছাকাছি স্থানে এ ঘটনা ঘটে। একটি কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে৷ নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের দিকে রওয়ানা হয়েছিল ডুবে যাওয়া লঞ্চটি।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জ জেলা উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফী জানান, ফায়ার সার্ভিসের আটজন ডুবুরিসহ একাধিক ইউনিট কাজ করছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করতে দেরি হয়। তবে ইতিমধ্যেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারের নিরাপত্তকর্মী মোহাম্মদ হালিম৷ তিনি বলেন, এসকেএল-৩ (এম: ০১২৬৪৩) নামের একটি কোস্টার জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে অন্তত ২০০ মিটার লঞ্চটিকে টেনে নিয়ে যায়৷ এরপর লঞ্চটি যাত্রীসহ ডুবে যায়৷
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাশের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ ঘাট দিয়ে ১৩ জন যাত্রী সাঁতরে উঠেছেন৷ পশ্চিম পাশের ঘাট দিয়ে আরও ১৬ জন জীবিত অবস্থায় উঠেছেন৷ পাঁচজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷
নারায়ণগঞ্জ জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির সহ সভাপতি মনিরুজ্জামান রাজা জানান, লঞ্চটিতে অন্তত ৫০ জন যাত্রী ছিল৷ সন্ধ্যা ৫টা ৫৬ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চটি আনুমানিক সোয়া ছয়টার দিকে দুর্ঘটার কবলে পড়ে৷ এসকেএল-৩ নামক একটি কোস্টার জাহাজ পেছন থেকে লঞ্চটিতে ধাক্কা দেয়৷
ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মালিকের নাম আলাল হোসেন৷ তিনি মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা বলে জানান লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি মনিরুজ্জামান৷ তিনি বলেন, এই রুটে ২৫টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে৷ আমাদের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর আয়তন ছোট৷ কোস্টার জাহাজগুলো এই রুটে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে৷ বারবার বলার পরও তারা কোনো সমঝোতা করে চলাচল করে না৷ কোস্টার জাহাজগুলো যেন নিয়ম মেনে যেন চলাচল করে এ দাবি তোলেন তিনি৷
লঞ্চের যাত্রী ছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদরের মাটহাটি এলাকার বাসিন্দা মোবারক মাদবর (৪৭) জানান, বড় একটি জাহাজের সাথে ধাক্কা লেগে অর্ধ শতাধিক যাত্রীসহ লঞ্চটি ডুবে যায়৷ তিনি সাতরে তীরে ফিরতে পেরেছেন৷ তবে বাকিদের কোনো খবর তিনি দিতে পারেননি৷
এরই মধ্যে দূর্ঘটনায় নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ নিয়েছেন । সেই নির্দেশনা মোতাবেক নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে ।









Discussion about this post