ব্যাপক চড়াই উৎরাই, আদালতের বিজ্ঞ বিচারকদের দপ্তরে দপ্তরে নানাভাবে করজোড়ে তদ্বির করেও শেষ রক্ষা হলো না ওসি কামরুল ইসলামের। যিনি নারায়ণগঞ্জ সদর থানার দাপটের সাথে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় ৪৯ হাজার পিছ ইয়াবা, ৫ লাখ টাকাসহ প্রথমে এএসআই রুবেল সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ ।এমন চাঞ্চল্যকর মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত সম্পুরক চার্জশিটে আসামী হয়ে সাময়িক বরখাস্তের পর এবার কারাগারে ঠাই হয়েছে সেই ওসি কামরুল ইসলামের ।
কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে নারায়ণগঞ্জ আদালতের সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের নানা সহযোগিতায় গত ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করেন কামরুল ইসলাম।
পরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
ওসি কামরুল ইসলাম আদালতে আত্মসমর্পণের পূর্বে প্রায় এক মাসব্যাপী নানাভাবে আসামী হয়েও বিচারালয়ের কয়েকজনের কাছে নিজেই তদ্বির চালালেও কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারে নাই জামিনের বিষয়ে ।
এক সপ্তাহব্যাপী ওসি কামরুল নারায়ণগঞ্জ কারাগারে রয়েছেন এমন খবরের গুঞ্জনে গণমাধ্যম কর্মীদের নাঝে ব্যর্থতায় দায়িত্ব নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতের ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামানের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নাই । পরবর্তীতে আদালতের দায়িত্বে থাকা উপ পরিদর্শক সালাউদ্দিন এবং সহকারী উপ পরিদর্শক তাহমিনার মুঠোফোন যোগাযোগ করলে তারা একই সুরে বলেন, এমন ঘটনা আমাদের জানা নাই।
অথচ নারায়ণগঞ্জ আদালতের নির্ভরশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর আসাদ পুলিশের রুল কল ডেকে সকলকে সতর্ক করে দেন যাতে কোন অবস্থাতেই যেন ওসি কামরুল ইসলামের কারাগারে পাঠানোর খবর প্রকাশ না হয় ।
শেষ পর্যন্ত ৪৯ হাজার পিছ ইয়াবা পাচারের মামলায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি কামরুল ফারুককে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের রাস্ট্র পক্ষের কৌসুলি ওয়াজেদ আলী খোকন সাংবাদিকদের বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে ওসি কামরুল ইসলামকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ৪৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সদর থানার সাবেক ওসি কামরুল ইসলাম বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশ সদর থানার এএসআই মোহাম্মদ সরওয়ার্দীর বাসা থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ও পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করে। পরে এ ঘটনায় মামলা হয়। ওই মামলার আসামি পুলিশ সদস্য আসাদুজ্জামান ও মোহাম্মদ সরওয়ার্দী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেন, এটি তারা নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে করেছেন। তার নির্দেশেই টাকা ও ইয়াবা রেখে আসামিদের ছেড়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিপুল পরিমাণ মাদক ও টাকাসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া কনস্টেবল আসাদুজ্জামানের জামিন শুনানিকালে মাদক চোরাচালানের সাথে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম, পিপিএম এর সম্পৃক্ততায় বিস্ময় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই মাদক মামলার সাথে ওসি কামরুলের সম্পৃক্ততা থাকা সত্বেও তাকে আসামি না করায় অবাক হন হাইকোর্ট।
পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিমউদ্দিন আজাদকে তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী ৪ মার্চ স্বশরীরে হাজির হয়ে মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।









Discussion about this post