এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথমে সকলের একটাই প্রশ্ন : সাংবাদিক হত্যার সাথে জড়িত এই অপরাধীদের মূল শেল্টার দাতা কে বা কারা ? “দুই একটা সাংবাদিক মাইরা ফালাইলে কি হয়” ওই শেল্টারদাতাদের কাছ থেকে এমন উৎসাহ পেয়ে কি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বলি হতে হয়েছে ইলিয়াস কে ? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে
সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
দীর্ঘদিনের পূঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে অপরাধীরা ।
হত্যাকারীরা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের ছাত্রছায়ায় ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে।
ইলিয়াস হত্যকার মূল নায়ক তুষার ও হাসনাত আহম্মেদ তুর্জয়। এরা দুজন সম্পর্কে ভাই। তুষারের পাশে কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান ও জেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি সেক্রেটারীর সাথে ছবি প্রকাশিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আর তুর্জয়ের সাথে যুবলীগ নেতা খান মাসুদের সহযোগি রাজু আহম্মেদের সাথে অসংখ্য ছবি রয়েছে। এসব ছবি যখন সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয় তখন একজন সাংসদ ও ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুলাল প্রধানের পাশেও আরেক আসামী মাসুদের ছবি প্রকাশিত হয়।
প্রসঙ্গত ১১ অক্টোবর রোববার রাতে বাসায় যাওয়ার পথে উপজেলার আদমপুর এলাকায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা সাংবাদিক ইলিয়াসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।

ওই রাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তুষারকে আটক করে পুলিশ। এসময় তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ধারালো ছুরিও উদ্ধার করা হয়। নিহত ইলিয়াস উপজেলার জিওধরা এলাকার মজিবর মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় দৈনিক বিজয় পত্রিকার বন্দর সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করতো।
জানা গেছে, ইলিয়াস হোসেনকে হত্যার ঘটনার পেছনে প্রভাব বিস্তারে বাধা দেয়া, অবৈধ গ্যাস সংযোগের তথ্য গণমাধ্যমে দেওয়া সহ পূর্বের বিরোধের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ছিল জানিয়েছেন পুলিশ।
১২ অক্টোবর সোমবার সকালে নিহতের স্ত্রী জুলেখা বেগম বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেন। এতে আটককৃত তিনজনসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়।
আসামিরা হলো গ্রেপ্তারকৃত তুষার (২৮), মিন্নাত আলী (৬০) ও মিসির আলী (৫৩)। আর পলাতক রয়েছে হাসনাত আহমেদ তুর্জয় (২৪), মাসুদ (৩৬), সাগর (২৬), পাভেল (২৫) ও হযরত আলী (৫০)। এর আগে ভোরে বন্দর উপজেলার জিওধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিন্নাত আলী ও মিসির আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বন্দর মডেল থানার পরিদর্শক আজগর হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুষার জানিয়েছে সে একাই সাংবাদিক ইলিয়াসকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। অন্য আসামিরা বলছেন তারা হত্যা করেননি। এলাকায় প্রভাব বিস্তারে বাধা দেয়া, অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে দেওয়া ও পূর্বের বিরোধের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে সাংবাদিক ইলিয়াসকে হত্যা করে তুষার। আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তখন বিস্তারিত জানানো হবে।
বন্দরে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের হাতে সাংবাদিক হত্যার বিষয়টি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এতে করে সন্ত্রাসীদের নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালী মহলের শেল্টারের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। আর তাতে করে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি শেল্টারদাতাদের সাথে খুনিদের ঘনিষ্ঠসময়ের ছবিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সেসব ছবির মধ্যে একটি ছবিতে দেখা যায়, আটককৃত আসামীদের মধ্যে মূল হোতা তুষার জাতীয় পার্টির নেতা ও চেয়ারম্যানদের সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছে। তুষার আদমপুর এলাকায় বসবাস করে। সেই ইউনিয়নের অর্থাৎ কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির নেতা দেলোয়ার প্রধানের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। আর এভাবেই বেপরোয়া হয়ে উঠে তুষার। রাজনীতির উচ্চ আসনে পৌঁছতে জেলা ছাত্রসমাজের সভাপতি ও সেক্রেটারীর সাথেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। তার নমুনাস্বরুপ একটি ছবিও ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সূত্র বলছে, সন্ত্রাসীদের বেড়ে ওঠার পেছনে প্রভাবশালী মহলের শেল্টার রয়েছে। তাদের পৃষ্টপোষকতা ছাড়া বেপরোয়া হওয়া সম্ভব না। তাছাড়া প্রভাবশালী মহল এসব সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে নিজেদের ফায়দা লুটে। যেকারণে তারা পেছন থেকে শেল্টার দিয়ে থাকে। কোন রকম ঝামেলা হলে অর্থ সহ আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে তাদের বাচিয়ে দেয়। এতে করে দিনে দিনে সেসব সন্ত্রাসীরা ভয়ংকর হয়ে উঠে। যার ফলে সমাজের কলম সৈনিকদের নির্মমভাবে খুন হতে হয় ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে স্থানীয় অনেকেই বলেছেন, সাংবাদিক ইলিয়াস হত্যার সাথে জড়িত এই চক্রটি কার কার সাথে সখ্যতা রেখে এলাকায় তিতাসের গ্যাস চুরির মহোৎসব ছাড়াও মাদক ব্যবসায়, চাদাবাজি করতো তা এলাকার সকলেই জানেন। কিন্তু কেউ মুখ খুলতে রাজি না । বন্দরের অনেক গণমাধ্যমকর্মীও প্রকৃত চিত্র জানলেও বেমালুম চেপে যাচ্ছে অপরাধী চক্রের ভয়ে ।









Discussion about this post