আজ ২৭ এপ্রিল । নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে এক কলংকময় দিন । কুক্ষাত অপরাধী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নূর হোসেনের সাথে পরিকল্পনা করে নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে আরেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জনকে অপহরণ করে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করে র্যাব ১১ এর তৎকালীন কর্মকর্তা ও সদস্যরা । এমন ঘটনার ছয় (৬) বছর আজ ৷
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনার ছয় বছর পূর্ণ হল আজ সোমবার । এরই মধ্যে বিচারের দুটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে।
আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে চাঞ্চল্যকর এই মামলার কার্যক্রম । বিচারের এই দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ নিহতদের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে রায় কার্যকর হোক তা চান।
নিহতের পরিবারের প্র্রায় সকলেই বলেছেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কুক্ষাত অপরাধী নূর হোসেনের লোকজন এখনও এলাকায় অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ সকল ধরণের অপকর্মে জড়িত রয়েছে। সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয় এলাকার সকলকেই । তাই দন্ডিতদের দ্রুত রায় কার্যকর চায় নারায়ণগঞ্জবাসী ।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাত খুনের মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তবে দ্রুত শুনানির কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আসামিরা আপিল করেছেন, এখন সিরিয়াল অনুযায়ী কার্যতালিকায় আসবে। আদালতের নির্দেশে মামলার সারসংক্ষেপ জমা দেয়া হবে। তারপর শুনানি হবে।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ, পরদিন মেলে আরেকটি লাশ।
নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার নিহত বাকিরা হলেন- নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।
আলোচিত এ মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি নিম্ন আদালতের দেয়া রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে ২৮ আসামি হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০১৭ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন এবং বাকি ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।
নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, র্যাব একটি এলিট ফোর্স এবং মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য এরা বহুবিধ কাজ করেছে। কিছু ব্যক্তির জন্য সামগ্রিকভাবে এই বাহিনীকে দায়ী করা যায় না।
আসামিরা যে ধরনের অপরাধ করেছে, যদি তারা ছাড়া পেয়ে যায় তাহলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণ আস্থাহীনতায় ভুগবে। এই খুনের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত থাকায় মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমনে সংশয় ছিল।
মামলার রায়ে সেই সংশয় দূর হয়েছে। তবে সাতজনকে যে কায়দায় খুন করে লাশ গুম করা হয়েছে তা ছিল শিউরে ওঠার মতো।
গোটা দেশ আলোড়িত হয়েছিল। চরম সংবেদনশীল ও আলোচিত এই মামলার শেষ পরিণতি দেখার জন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন দেশবাসী।
নৃশংসতার শিকার কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি জানান, ঘটনার পর থেকেই আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার ছেলে অসুস্থ। আমি নিজেও অসুস্থ। রায়ে সন্তুষ্ট হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে জানা নেই। তবে আদালতের প্রতি আমাদের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন সাজপ্রাপ্ত ১৩ আসামি। এদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জন এবং তিনজন হচ্ছেন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা, সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা নূর হোসেন, সিপাহি আবু তারিক, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্স নায়েক বেলাল উদ্দিন, এসআই পুর্ণেন্দু বালা, আরওজি আরিফ হোসেন, সৈনিক আল আমিন সরকার।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন হচ্ছেন- নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, জামাল উদ্দিন ও সেলিম। আরিফ হোসেন আপিল করেছেন বলে জানান তার আইনজীবী এসএম শাহজাহান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, কবে নাগাদ শুনানি হবে তা বলতে পারছি না।
সাত খুনের লোমহর্ষক ঘটনার আংশিক বিবরণ :
……..বাচ্চা, আমিই কি সব কাজ করব। তাড়াতাড়ি লাশ ট্রলারে উঠা। তা না হলে এদের মতো তোদেরও অবস্থা হবে।’ ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর ওই রাতে সবাইকে হত্যা করা হয়। তখন বাকি ছিল শুধু লাশগুলো গুম করা। সেই রাতে গুম প্রক্রিয়া শেষ করার সময় মেজর আরিফ এভাবেই গালিগালাজ করতে থাকেন তার সঙ্গে থাকা অন্য র্যাব সদস্যদের। কনস্টেবল শিহাব উদ্দিনের জবানবন্দি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। (দৈনিক সমকালে সোমবার প্রকাশিত সংবাদের হুবহু)। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনায় দেওয়া লে. কর্নেল তারেক, মেজর আরিফ ও র্যাব-১১-তে প্রেষণে কর্মরত কয়েকজন পুলিশ সদস্যের জবানবন্দির বর্ণনা থেকে গা শিউরে ওঠা বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সাতজনকে অপহরণ থেকে শুরু করে লাশ গুম পর্যন্ত পুরো ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল, তার বিবরণ আছে জবানবন্দিতে। সেই রাতে নকল দাড়ি-গোঁফ লাগিয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেন মেজর আরিফ, যাতে রাস্তায় অন্য কেউ তাকে চিনতে না পারে। মেজর আরিফ নিজ হাতেই ছুরি দিয়ে ছয়জনের পেট ছিদ্র করেন। সৈনিক আসাদের মাধ্যমে চেতনানাশক ইনজেকশন কিনে আনা হয়। এই ইনজেকশনগুলোর মধ্যে ছয়টিই পুশ করেন মেজর আরিফ। বাকিটা করে ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া। লাশ গুম শেষে সেদিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে লঞ্চঘাটে হাজির হন কর্নেল সাঈদ তারেক। তিনি সবাইকে হুমকি দেন, ‘এ ঘটনা কেউ জানতে পারলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।’ এ ঘটনায় র্যাবের তদন্ত প্রতিবেদন এরই মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দিয়েছে র্যাব। সেটি ১০ ডিসেম্বর আদালতে পেশ করার কথা আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, র্যাবের তদন্ত প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। জবানবন্দি দেওয়া র্যাবে কর্মরত তৎকালীন পুলিশ সদস্যদের বর্ণনা মতে, ২৮ এপ্রিল রাত ১টা। কাঁচপুর ল্যান্ডিং স্টেশনে সাতজনের লাশসহ গাড়ি নিয়ে হাজির মেজর আরিফ হোসেন। এ সময় র্যাব-১১-এর তৎকালীন ফোর্সদের আরিফ নির্দেশ দেন, ‘লাশ ও ইটের বস্তা ট্রলার উঠা।’ সদস্যরা আপত্তি করে বসেন। এর পর আরিফ পিস্তল বের করে গালমন্দ শুরু করেন। ভয়ে সবাই ধরাধরি করে লাশ ট্রলারে তুলে শীতলক্ষ্যা নদীতে নিয়ে যায়। দুই মিনিটের মধ্যে লাশগুলো নদীতে ফেলতে বলেন মেজর আরিফ। নির্দেশ মতো লাশগুলো নদীতে ফেলা হয়। লাশ গুম শেষে ট্রলারযোগে লঞ্চ ঘাটে এলে সব সদস্যকে ফলিং করান মেজর আরিফ। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন লে. কর্নেল তারেক। সদস্যদের উদ্দেশে তারেক বলেন, ‘তোমাদের ভয় নেই। তোমরা যা করেছ বা দেখছ, সব আমাদের নির্দেশে। এ ব্যাপারে কোনো কথা বলবে না। যদি কথা বলো পরিণতি হবে ভয়াবহ।’ নারায়ণঞ্জে সাতজন অপহরণ থেকে শুরু করে পৈশাচিকভাবে হত্যার পুরো বিষয়টি খুব কাছে থেকে দেখেছেন কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি নিজেও জড়ান হত্যা প্রক্রিয়ার সঙ্গে। ঘটনার সময় শিহাব র্যাব-১১-তে কর্মরত ছিলেন। তার বর্ণনা থেকে উপরোক্ত তথ্যগুলো পাওয়া গেছে। কনস্টেবল শিহাব ছাড়াও পুরো ঘটনার সঙ্গে ছিলেন এসআই পূর্ণেন্দ্র বালা, হাবিলদার ইমদাদ, সিপাহি তৈয়ব, ল্যান্স নায়েক বেলাল, হিরা, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, এ বি আরিফ, চালক নাজিম ও দেলোয়ার। তারাও জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে গঠিত র্যাবের তদন্ত কমিটির কাছে কনস্টেবল শিহাব জানান, ২৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিএসআই মো. ছাত্তার ফোন করে শিহাবকে জানান, মেজর আরিফের সঙ্গে ডিউটিতে তাকে যেতে হবে। এর পর একটি শটগান, একজোড়া হ্যান্ডকাফ ও একটি র্যাব জ্যাকেট ইস্যু করে সিভিল ড্রেসে তৈরি হয়ে নিচে নেমে মাইক্রোবাসে ওঠেন শিহাব। আর আগে থেকেই ওই মাইক্রোবাসে বসেছিলেন এসআই পূর্ণেন্দ্র বালা, হাবিলদার এমদাদুল, আরিফ, নায়েক নাজিম, দেলোয়ারসহ ১১ জন। কিছু সময় পর মেজর আরিফ এসে গাড়িতে বসেন। আরিফের নির্দেশে গাড়ি চট্টগ্রাম রোড হয়ে সাইনবোর্ড এলাকায় যায়। সেখানে গাড়ি কিছু সময় অপেক্ষা করে। এ সময় গাড়ি থেকে নেমে কথা বলেন আরিফ। চালককে গাড়ি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ কোর্টের সামনে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর গাড়িটি ইউটার্ন করে সাইনবোর্ডমুখী করে রাখা হয়। এরপর সিপাহি তৈয়ব ও হাবিলদার এমদাদকে কোর্ট এলাকায় যেতে বলেন আরিফ। একটি ছবি (নজরুলের) দেখিয়ে তাকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আরিফ তাদের এও বলেন, যখন ওই লোকটি মুভ করবে, তখন অবগত করবে। তৈয়ব ও এমদাদ কোর্টে যাওয়ার কিছু সময় পরই একটি সিলভার রঙের মাইক্রোবাস নিয়ে সেখানে হাজির হন লে. কমান্ডার আরিফ হোসেন। সন্দেহভাজন হিসেবে সিপাহি তৈয়ব কোর্ট এলাকায় নজরুলের লোকজনের হাতে ধরা পড়েন। এর পর মেজর আরিফের মোবাইলে কল করে বিষয়টি জানান তৈয়ব। কলটি রিসিভ করার পরপরই গালমন্দ শুরু করেন তিনি। এর পর সিপাহি তৈয়ব গাড়িতে আসেন। কোর্ট এলাকায় র্যাবের পরিচয় দেওয়ায় তৈয়বের ওপর ক্ষিপ্ত হন আরিফ। এ সময় রানা র্যাবের টহল গাড়িতে দায়িত্বরত সদস্যদের ফোন করে স্টেডিয়াম এলাকার একটু সামনে অবস্থানের নির্দেশ দেন। পরবর্তী আদেশের পর চেকপোস্ট বসাতে বলেন। আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে এ বি আরিফের মোবাইলে কল আসে। ফোনটি রিসিভ করে মেজর আরিফকে কথা বলতে দেন এ বি আরিফ। তিনি সবাইকে জানান, সন্ত্রাসীদের দুটি গাড়ি আসবে। এর পর রানা টহল টিমকে ফোন করে গাড়ি দুটির নম্বর দিয়ে তা থামানোর নির্দেশ দেন। আরিফ গাড়িতে থাকা সবাইকেই র্যাবের মাইক্রোবাসে তোলার নির্দেশ দেন। গাড়িতে তুলে সবার চোখ বাঁধা হয়। তখন গাড়ি ছুটে চলে নরসিংদীর দিকে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেজর আরিফ গাড়ি নিয়ে নরসিংদী থেকে কাঁচপুরের দিকে যেতে বলেন। ভুলতা এলাকা পার হয়ে একটি সিএনজি পাম্পের সামনে ফাঁকা জায়গায় গাড়ি থামে। সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে হাজির ছিলেন সৈনিক আসাদ। মেজর আরিফ তার কাছ থেকে একটি প্যাকেট নিয়ে গাড়িতে আসেন। এর পর ওই প্যাকেট থেকে ইনজেকশন বের করা হয়। গাড়িতে থাকা সঙ্গীয় ফোর্সদের কাছে আরিফ জানতে চান, কে ইনজেকশন পুশ করতে পারে? অন্য ফোর্সরা বলতে থাকে, ইনজেকশন পুশ করার অভিজ্ঞতা তাদের নেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গালমন্দ করে হিরা মিয়াকে বলেন, ‘কুত্তার বাচ্চা, বসে আছিস কেন?’ এর পর ল্যান্সনায়েক হিরা মিয়া একটি ইনজেকশন পুশ করেন। কাঁচপুর ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছে মেজর আরিফ ফোন করে ল্যান্ডিং ঘাট পরিষ্কার করতে নির্দেশ দেন। ল্যান্ডিং ঘাটে পৌঁছার পর র্যাব সদস্যরা ৮-১০ ব্যক্তিকে সেখানে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন। মেজর আরিফ একজনকে ‘শাহজাহান’ ভাই বলে ডাক দেন। এর পর মেজর আরিফের সঙ্গে কথা বলে ওই ব্যক্তি চলে যান। র্যাব-১১-এর ক্যাম্প থেকে আরও কয়েকজন সদস্য তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারা একটি মাইক্রোবাসে ইটের বস্তা ও রশি নিয়ে আসেন। এর পরই সাতজনের মুখে পলিথিন পেঁচানোর নির্দেশ দেন আরিফ। তার নির্দেশের পর নজরুলসহ সাতজনের মুখে পলিথিন পেঁচানো হয়। এসআই পূর্ণেন্দ্র জবানবন্দিতে জানান, শীতলক্ষ্যায় লাশ নেওয়ার পর ল্যান্সনায়েক বেলাল একজনের পেট ছুরি দিয়ে ফুটো করে নদীতে ফেলেন। তবে এ কাজে বিলম্ব হওয়ায় নিজেই বাকি লাশের পেট ফুটো করেন মেজর আরিফ। র্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে, ক্ষমতার দ্বন্দ্বে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেন নূর হোসেন। এর পর নৃশংস এ কাজে জড়ান র্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার এম এম রানা। প্রথম থেকেই অপহরণের বিষয়টি তারেক গোপন করায় নজরুলসহ সাতজনকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের জড়িত সদস্যরা হলেন র্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার রানা, এসআই পূর্ণেন্দ্র বালা, এ বি আরিফ, নায়েক নাজিম (চালক), দেলোয়ার (চালক), হিরা মিয়া, সৈনিক মহিউদ্দিন, আসাদ, তাজুল, আলিম, আলামিন, সিপাহি তৈয়ব, কনস্টেবল আলামিন, শিহাব, হাবিলদার এমদাদ, নায়েক বেলাল, সার্জেন্ট এনামুল, এএসআই বজলু, হাবিলদার (চালক) নাসির। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাব-১১-এর অধস্তন সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবৈধ আদেশ বিভিন্ন পর্যায়ে পালন করেন। ঘটনার প্রাথমিক পর্যায়ে তারা এ আদেশ ‘সরকারি’ দায়িত্ব মনে করে থাকতে পারেন। পরে প্রাণের ভয়ে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে জড়ান









Discussion about this post