নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বহুতল ভবনের চারতলায় একটি মেস কক্ষে আগুনে দগ্ধ তিন পোশাক শ্রমিকের মধ্যে মামুন (২৪) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। মামুনকে ৯৯ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে হাসপাতালে আনা হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। সকালে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ওই বিস্ফোরণের পর আগুনে পোড়া দগ্ধ তিনজন নিজেরাই নিচে নেমে আসেন। তাঁদের সবার শরীর ছিল পোড়া। আগুনে দুই ব্যক্তি যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অন্যজন মাটিতে গড়াগড়ি করছিলেন। পরে তাঁদের স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. এসএম আইউব হোসেন জানান, মামুনের শরীরের ৯৯ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। তার অবস্থা কুবই শঙ্কটাপন্ন ছিল। এছাড়াও এই ঘটনায় ৯৯ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে পারভেজ (২৮) আইসিইউতে ও ৩০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে জীবন (২০) এইচডিইউতে ভর্তি রয়েছেন।
মামুনের ফুপাতো ভাই মো. সোহেল জানান, এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে এ ঘটনা ঘটে। এতে তারা ৩ জন দগ্ধ হন।
দগ্ধদের সহকর্মী মো. রিয়াদ জানান, দগ্ধরা সবাই সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজি এলাকার আদনান টাওয়ারের সাততলা বাসার চার তলায় মেস করে থাকতেন। তিনজনই ইপিজেডের অনন্ত অ্যাপারেল গার্মেন্ট এ কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাজ শেষে তিনজন বাসায় আসেন।
দরজা খুলে ইলেক্ট্রিক সুইচ চালু করতেই বিকট শব্দে ঘরের মধ্যে আগুন জ্বলে ওঠে। এতে তারা তিনজন দগ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা
ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণে সাততলা ভবনের চারতলার ফ্ল্যাটের তিন কক্ষের দরজা ভেঙে পড়ে আছে। জানালার কাচ ভাঙা। মেঝেতে বিছানো তোশক, চাদর, বালিশ ও কাপড় আগুনে পুড়ে গেছে। সেগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মেঝেতে
ওই ভবনের দোতলার বাসিন্দা মো. হামিম বলেন, ‘বিস্ফোরণে ভবনটি কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের পর দেখি ধোঁয়ায় অন্ধকার। ওই ফ্ল্যাটের দরজা ভাঙা, ভেতরে আগুন জ্বলছে। আগুনের ভয়ে দ্রুত নিচে নেমে দেখি, দগ্ধ দুজন পুকুরে পানিতে লাফিয়ে পড়েছেন। আগুনে পোড়ার যন্ত্রণায় তাঁরা চিৎকার করছেন।’
প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার মো. তুহিন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ওই বিস্ফোরণের পর আগুনে পোড়া দগ্ধ তিনজন নিজেরাই নিচে নেমে আসেন। তাঁদের সবার শরীর পোড়া।
আগুনে দুই ব্যক্তি যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অন্যজন মাটিতে গড়াগড়ি করছিলেন। পরে তাঁদের স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান।
ওই ভবনের নিরাপত্তাপ্রহরী আবদুল বারেক হাওলাদার বলেন, বিকট শব্দে বিস্ফোরণে হলে লোকজন আতঙ্কে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। ভবনের বাসিন্দারা আগুন বলে চিৎকার শুরু করেন। দগ্ধ তিনজন বিবস্ত্র অবস্থায় দৌড়ে নিচে নেমে আসেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ওই বাসায় বিদ্যুৎ শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। এতে তিন গার্মেন্টকর্মী দগ্ধ হয়। তাদের বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন বলে জানতে পেরেছি









Discussion about this post