নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে এক প্রতিবন্ধী মায়ের ছুরিকাঘাতে একমাত্র পুত্র খুনের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ।
রোববার (৩০ মে) রাতে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় নাজমুল সাকিব নাবিল নামে (২০) ওই যুবককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত দুইটার তার মৃত্যু হয়।
সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন পাইনাদী এলাকায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তার নিজ বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটে।
তবে এ ঘটনার পর থেকে নাবিলের মানসিক ভারসাম্যহীন মা নাসরিন বেগম পলাতক রয়েছেন। পুলিশ ও পরিবারের ধারণা, ছেলেকে খুন করে তিনি অন্য কোথাও চলে গেছেন।
পুলিশ ও পারিবারিকভাবে জানা যায়, নিহত নাবিল রাজধানীর ডেমরা এলাকায় দারুন নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্র এবং আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা ছগির আহমেদ ইসলামী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখায় কর্মরত আছেন। তার গ্রামের বাড়ি জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পৈতারগাঁও এলাকায়। সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জে পাইনাদী নতুন মহল্লায় বাড়ি কিনে ছগির আহমেদ তার স্ত্রী নাসরিন বেগম ও একমাত্র সন্তান নাবিলকে নিয়ে বসবাস করছেন।
চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি নাবিলকে পারিবারিকভাবে আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করানো হয়। ঈদুল ফিতরের তিনদিন পর নাবিলের স্ত্রী ইমা (১৮) বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন। স্বামী নাবিলের মৃত্যুর খবর পেয়ে ইমা সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে গিয়ে সেখানে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
নাবিলের বাবা ছগির আহমেদ জানান, রোববার সকাল আটটায় তিনি ব্যাংকে তার কর্মস্থলে যান। রাত আটটায় বাড়ি ফিরে ঘরের দরজা তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে তার সাথে থাকা চাবি দিয়ে তালা খুলে ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখেন ছেলে নাবিল রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। নাবিলের বুকে পেটে ও মাথায় ধারালো কিছুর আঘাতের ক্ষত জখম দেখা যায়। এসময় স্ত্রী নাছরিন বেগমকেও বাসায় পাননি ছগির আহমেদ।
এ অবস্থায় তিনি ছেলে নাবিলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জে সাইনবোর্ড এলাকায় প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত দুইটার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাবিলের মৃত্যু হয়।
ছগির আহমেদ আরো জানান, তার সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতা নেই। তবে তার স্ত্রী নাসরিন বেগম দীর্ঘদিন যাবত মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে অসুস্থ আছেন। তার চিকিৎসাও চলছে। মাঝে মাঝে তার স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। তার ধারণা, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া অবস্থায় ছেলেকে খুন করে কোথাও চলে গেছেন তিনি।
এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-ক) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-ক) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী জানান, ব্যাংক কর্মকর্তা ছগির আহমেদের ভাষ্য অনুযায়ী এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে প্রাথমিকবাবে ধারণা করা হচ্ছে, মানসিক ভারসাম্যহীন মা ছেলেকে খুন করে কোথাও চলে গেছেন। বিষয়টি আমরা তদন্তসহ নিহতের মাকে খঁজে বের করার চেষ্টা করছি। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে। মাকে পাওয়া গেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এই হত্যাকান্ডে অন্য কোন বিষয় আছে কিনা সেটিও আমরা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি।
সোমবার দুপুরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে নিহত নাবিলের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। সেখানে তারা বাবা ও স্ত্রীসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনরা রয়েছেন।









Discussion about this post