নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজত ইসলামের হরতাল চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নাশকতার ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থনায় পৃথক ৬টি মামলা দায়ের হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান।
মামলায় বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ বিএনপি-জামায়াতের ১৩৬ জনকে এজভহারনভমীয় আসামী করা হয়েছে। এছাড়াও ৬ মামলায় অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে ৩ হাজার ২’শ জনকে।
ওসি জানান, সোমবার (২৯ মার্চ) রাতে পুলিশ বাদী হয়ে ৫টি এবং র্যাব বাদী হয়ে ১টি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশের ৫টি মামলার মধ্যে ৪টি সন্ত্রাস দমন আইনে ও একটি পুলিশের উপর হামলাসহ সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। র্যাবের দায়ের করা মামলায় কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে ৬ মামলায় প্রায় ৩ হাজার ৩’শ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ওসি মশিউর রহমান জানান, হরতালের মধ্যে ৯টি ট্রাক, ১টি বিআরটিসি বাস, ৬টি কাভার্ডভ্যান, ২টি মাউক্রোবাসে আগুন দেওয়া ছাড়াও চ্যানেল নিউজ ২৪ এর গাড়িসহ অর্ধশতাধিক গাড়ি নির্বিচারে ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ সময় সাংবাদিকদের মারধর করেছে পিকেটাররা। এই সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শর্ট গানের রাবার বুলেট ও চায়নিজ রাইফেলের প্রায় ৪ হাজার ১’শ ১৫ রাউন্ড গুলি ছুঁড়তে হয়েছে র্যাব-পুলিশ-বিজিবিকে। এছাড়াও পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রায় দেড়শ’ টিয়ার শেলও নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ওসি আরো জানান, এই ছয় মামলায় এখন পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে র্যাব-পুলিশের কয়েকটি টিম নাশকতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।
মামলার বিষয়ে কথা হলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ জানায়, বিএনপিকে ঘায়েল করতে এবং প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার জন্যই এ মামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে আসামী করা হয়েছে। এতে দোষীরা ছাড় পেয়ে যাবে। হেফাজতের হরতালে আমাদের কোন সমর্থনও ছিলো না, আমরা অংশগ্রহণও করি নাই।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ছিল এলাকা ছিল হরতাল সমর্থকদের দখলে।
প্রসঙ্গত রোববার ভোর ৬টা থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা মহাসড়কের শিমরাইল, সানারপাড় এলাকায় গাছের গুড়ি ফেলে, বালুর বস্তা রেখে, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ও লাঠিসোটা নিয়ে অবরোধ করে রাখে। এসময় কয়েকটি ট্রাক চলাচল করতে চাইলে হরতাল সমর্থনে বিক্ষোভকারীরা ঢিল ছুঁড়ে ট্রাকের গøাস ভাঙচুর করে। এসময় র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কয়েকবার মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। সকাল ১১টায় বিক্ষোভকারী হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় শাকিল (৩২) নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর থেকে দফায় দফায় হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও টিয়ারসেল সহ গুলি ছুড়তে দেখা যায়। সন্ধ্যায় ৭টি কাভার্ড ভ্যান, ৬টি ট্রাক, ৪টি বাস, ১টি হাইস গাড়ি, ৩টি পিকআপে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। রাত ৯টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।









Discussion about this post