দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৫ বছরপূর্তি আজ। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন পরিকল্পিতভাবে দেশের ৬৩ জেলায় একই সময়ে বোমা হামলা চালায়। মুন্সীগঞ্জ ছাড়া সব জেলায় প্রায় ৫০০ পয়েন্টে বোমা হামলায় দু’জন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হন।
পুলিশ সদর দফতর ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পরপরই সারাদেশে ১৫৯টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ডিএমপিতে ১৮টি, সিএমপিতে ৮টি, আরএমপিতে ৪টি, কেএমপিতে ৩টি, বিএমপিতে ১২টি, এসএমপিতে ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১টি, রাজশাহী রেঞ্জে ৭টি, খুলনা রেঞ্জে ২৩টি, বরিশাল রেঞ্জে ৭টি, সিলেট রেঞ্জে ১৬টি, রংপুর রেঞ্জে ৮টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৬টি ও রেলওয়ে রেঞ্জে ৩টি। যারমধ্যে ১৪২টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বাকি ১৭টি মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিল ১৩০ জন। এবং গ্রেফতার করা হয় ৯৬১ জনকে। ১ হাজার ৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
১৫ বছর আগে আজকের এই দিনে ১৭ আগস্ট সারা দেশে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে ‘জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের’ (জেএমবি) জঙ্গিরা প্রকাশ্যে আসে। এরপর তারা অনেক হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। পরে এই দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনসহ শীর্ষ জঙ্গিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয় ।
তবে এতে দমে যায়নি জঙ্গিরা । তারা ‘নব্য জেএমবি’ নাম দিয়ে আবারও মাঠে নামে । কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির কারণে তারা সুবিধা করতে পারেনি। যদিও একেবারে থেমে যায়নি। মাঝে মাঝেই ছোটখাটো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে। তারা এখনো দেশে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে বলে পুলিশসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জঙ্গিদের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসির প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১৫ই আগস্ট জাতির জনককে হত্যা করা হয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে, ১৭ আগস্ট জঙ্গিরা সারা দেশে একযোগে বোমা হামলা চালিয়েছে। এসব কারণে আগস্ট মাস এলে জঙ্গিরা অনুপ্রেরণা পায়। আগস্ট মাসে তাদের প্রতি আমাদের বাড়তি নজরদারি থাকে। যদিও তারা আর আগের মতো শক্তিশালী নেই।’
আগস্ট সামনে রেখে গত ২৬ জুলাই রাতে ঢাকার পল্টনে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের পাশে জঙ্গিরা এক সার্জেন্টের মোটরসাইকেলে বোমাসদৃশ বস্তু রেখে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। এর এক দিন আগে ২৫ জুলাই প্রায় একই সময়ে পল্টন মোড়ে কে বা কারা একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। ওই ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা হয়। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে গত ১১ আগস্ট সিলেটে নব্য জেএমবির পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি (কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম)। এই জঙ্গিদের হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল বলে পুলিশ সূত্র জানায়। এসব বিষয়কে আগস্ট মাস সামনে রেখে ভয় দেখানো হিসেবেই দেখছে পুলিশ।
বিচার শেষ হয়নি আজও : সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৬১টি মামলা হয়। ১২৮টি মামলার রায় হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে ৩২০ জনকে। এখনো বিচারাধীন ৫৫টি মামলা। ওই ঘটনায় নিষ্পত্তি করা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ৭৪ জঙ্গি জামিন পাওয়ার পর এখনো পলাতক।









Discussion about this post