নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের সেই কুক্ষাত থাই ডন ও অনলাইন ক্যাসিনো কিং সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে সিআইডি পুলিশ মানি লন্ডারিংয়ের মামলার চার্জশিট দাখিল করলে দিগবিদিক হয়ে উঠেছে কুক্ষাত এই অপরাধীর স্বজনরা । বিএনপি জামায়াত সরকারের শাসনামলে তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন যত অপকর্ম করতো তার অনেক কিছুই সফলভাবে সম্পন্ন করতো রূপগঞ্জের সেই সেলিম প্রধান ।
কারাগারে নিয়মিত যাতায়াতের পাশাপাশি যে কোন মুল্যে মুক্ত করতে কুক্ষাত সেলিম প্রধানের অনুসারীরা চালাচ্ছে মহাতৎপরতা । মোটা অংকের টাকায় সেলিম প্রধান কারাগারে স্বাচ্ছন্দ্যে বন্দি জীবন অতিবাহিত করলেও মুক্তি পেতে সকল অনুসারীদের রেখেছে চাপের মুখে
জানা যায়, অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধভাবে উপার্জিত ১৩ কোটি ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৪৬ টাকা বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে নিজের কাছে রেখেছিলেন সেলিম প্রধান।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলার তদন্তে এর সত্যতা পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
মামলাটির তদন্ত শেষে সেলিম প্রধানসহ ৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে একটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন— মো. আক্তারুজ্জামান, মো. রোমান, মো. আরিফুর রহমান ওরফে সীমান্ত আরিফ, চৌধুরী গোলাম মাওয়ালা ওরফে শাওন এবং ইয়াংসিক লি।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. জিসানুল হক সাংবাদিকদের কে জানান, অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধভাবে উপার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচারের উদ্দেশ্যে রাখার দায়ে ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সেলিম প্রধানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নম্বর-৪) দায়ের করা হয়।
এরপরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. শহিদুল ইসলাম খান তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
এএসপি জিসানুল হক আরও জানান, অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধভাবে উপার্জিত টাকার পরিমাণ ১৩ কোটি ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৪৬ টাকা। এই টাকা বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছিল।
এর আগে ঘটনার সময়ে ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং বিভিন্ন দেশের বিদেশি মুদ্রা, যা বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক ৭০ লাখ টাকা অভিযানে র্যাব উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া সব টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মামলাটিতে তদন্তকালে আসামি সেলিম প্রধানের ৬ কোটি টাকার ২টি চেক উদ্ধারসহ ৯টি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও থাইল্যান্ডে তার একটি বাগান বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া আসামিদের ৮৩টি ব্যাংক একাউন্টের তথ্য সংগ্রহ এবং ফ্রিজ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধান করছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি ।
রূপগঞ্জের সেলিম প্রধানের অপকর্ম রূপকথা কে হার মানিয়েছে :
রূপগঞ্জের গাউছিয়া থেকে বামে মোড় নিয়ে কিছুদূর গেলেই মর্তুজাবাদ এলাকা। প্রায় ২৬ বছর আগে এ এলাকার জরাজীর্ণ ‘চাঁন মিয়া ও স্ত্রী সফুরা খাতুন মঞ্জিল’।
এটি দেখে বোঝার উপায় নেই বাড়ির মালিক চাঁন মিয়ার ছেলের মাসিক আয় ৯ কোটি টাকা। আর ছেলেটির নাম সেলিম প্রধান ওরফে ‘থাই ডন’।
এলাকাবাসীর কাছে অবশ্য এক যুগ আগেও সেলিম প্রধানের পরিচয় চাঁন মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া। কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেলিম মিয়া হয়ে যান সেলিম প্রধান।
তবে বিশাল বিত্তবৈভব আর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে সেলিম প্রধান ও তার পরিবারের ব্যাপারে এলাকার মানুষ কথা বলতে এখনও ভয় পান।
এদিকে পৈতৃক বাড়ি এমন জরাজীর্ণ থাকলেও গাউছিয়া থেকে অল্প দূরেই ভুলতা ফ্লাইওভারের শেষ মাথায় সাওঘাট এলাকায় সেলিম প্রধানের সেই আলোচিত ‘জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস’ নামের বহুতল প্রতিষ্ঠান।
যেখানে ছাপানো হয় বাংলাদেশের সব ব্যাংকের চেক বই, এফডিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি।
সরেজমিন রূপগঞ্জের মর্তুজাবাদ এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলিম প্রধান এক সময় এলাকায় সমিতি শুরু করেছিলেন।
ওই সমিতির বেশ কিছু টাকা মেরে পাড়ি জমান জাপানে। জাপান থাকা অবস্থায় তার প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসার গোড়াপত্তন হয়। কিন্তু জাপানের টোকিওতেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হন।
জাপান থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি আমেরিকায় চলে যান। সেখানে এক আমেরিকানকে বিয়েও করেন। আমেরিকান স্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে ফের জাপানে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
একপর্যায়ে বাংলাদেশে ফিরে সেলিম প্রধান ওরফে সেলিম মিয়া বিএনপি-জামায়াত আমলে সখ্য গড়ে তোলেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আলোচিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে। হয়ে যান তার ব্যবসায়িক পার্টনার।
এলাকাবাসী জানান, তারা সেলিম প্রধানকে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হিসেবে জানলেও তিনি কোনো পদে ছিলেন না। সেলিম প্রধানের সহায়তায় রূপগঞ্জের অনেকেই বর্তমানে স্বাবলম্বী । সেই সেলিম প্রধানের আশির্বাদপুষ্ট কয়েকজন শাসকদলের প্রভাবশালীদের ম্যানেক করে সেলিম প্রধানকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ।
রূপগঞ্জ থেকে গুড়িয়ে দেয়া জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ের একজন পরিচালক সেলিম প্রধানের বিচার কাজে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে কোটি কোটি টাকার মিশন নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তদ্বির।
রূপগঞ্জের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, সেনা সমর্থিত সরকারের শাসনামলের পূর্বে হঠাৎ সেলিমের পরিবর্তন ছিল চোখে পড়ার মতো। এলাকায় আসতেন বছরে ৩-৪ বার। সঙ্গে থাকত দামি গাড়িবহর, অস্ত্রধারী বডিগার্ড।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকদের কয়েকজন জানান, গোপন তথ্য। মূলত বিদেশে ও দেশে ক্যাসিনোর পাশাপাশি স্পা ব্যবসা করা সেলিম নিয়মিত আসতেন এ প্রেসে। প্রেসের ভেতরেই ছিলো তার ‘বালাখানা’।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় গভীর রাতে সেলিম এখানে আসতেন ঘনিষ্ঠদের নিয়ে। বিদেশি নাগরিকদেরও নিয়ে আসতেন। সঙ্গে থাকতেন সুন্দরী ললনারা। ভোর পর্যন্ত চলত মদ্যপান, হৈহুল









Discussion about this post