নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশীপুরের চাঞ্চল্যকর জোড়া খুন মামলার এজাহারনামীয় দুর্ধর্ষ আসামি বাপ্পি শিকদার এবং আমান ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। এর মধ্যে গ্রেফতারকৃত আমান ভূঁইয়া সোমবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নুরুন্নাহারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার সম্পর্কে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুল ইসলাম।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে মামলার আসামী আমান ভূঁইয়া জানিয়েছে কিলিং মিশনে মামলার এজাহারনামীয় ২২ জন আসামীসহ আরো ১০-১২ জন ছিল। জবানবন্দীতে কিলিং মিশনে থাকা বাকী আসামীদেরও নাম প্রকাশ করেছে গ্রেফতারকৃত আমান।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর রাতে মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধে কাশীপুরের হোসাইনি নগর এলাকাতে একটি রিকশার গ্যারেজে সশস্ত্র হামলাকারীরা কুপিয়ে তুহিন হাওলাদার মিল্টন (৪০) ও পারভেজ আহমেদ (৩৫) নামে দুইজনকে হত্যা করা হয়। হত্যার পরে আলামত বিনষ্টে গ্যারেজে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর এলাকাবাসী এসে আগুন নিভিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করে। পরে নিহত পরিবারগুলোর পক্ষে চিহ্নিত সন্তাসীদের ভয়ে মামলা দায়ের না করায় ১৪ অক্টোবর দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানার এস আই মোজাহারুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা ও বিলুপ্ত শহর কমিটির সহ সভাপতি এম এ মজিদ ও তার ভাই বিলুপ্ত শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, হত্যাকান্ডের ঘটনায় তাদের ইন্ধন থাকতে পারে।
মামলার আসামীরা হলো এক নং বাবুরাইলের শুক্কুর মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া জয়নাল আবেদীনের ছেলে জাহাঙ্গীর বেপারী (৪০), ১নং বাবুরাইল তারা মসজিদ এলাকার কাজল মিয়ার ছেলে বাপ্পী (২৮), রবিন (৩০), রকি (২৮), ভূইয়াপাড়া এলাকার মজনু মিয়ার ছেলে আমান (৩২), বাবুরাইল শেষমাথা এলাকার খোকা মিয়ার ছেলে শহিদ (৩০), বাবুরাইল তারা মসজিদ এলাকার আসলাম (৫০), বাবুরাইল ঋষিপাড়া এলাকার মৃত জাকিরের ছেলে মাহাবুব (৩০), বিএনপি নেতা হাসান আহমেদের ভাতিজা শিপলু (৩০) ও রাসেল (৩৩), বাবুরাইল এলাকার মুক্তা (২৮), পাইকপাড়া জিমখানা ডিমের দোকান এলাকার শরীফ (৩৩), বাবুরাইলের রানা (২৮), বাবুরাইলের কিরণ (৩০), মানিক (৩০), বাবুরাইলের আবদুল মান্নানের ছেলে ফয়সাল (২৬), বন্দর এলাকার রাব্বি (৩০), ১নং বাবুরাইলের নিলু সরদারের ছেলে সোহাগ (৩২), বাবুরাইল শেষমাথা এলাকার রাকিব (২৭), বাবুরাইল ঋষিপাড়া এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে রাজন (৩০), বাবুরাইল এলাকার রিক্সা আবুল (৩৫), একই এলাকার ফরহাদ (৫২) সহ অজ্ঞাত আরো ১শ থেকে ১২৫ জন। মামলার আসামীরা সকলেই বিএনপি নেতা মজিদ বাহিনীর লোক হিসেবে পরিচিত।
ওই বছরের ২১ নভেম্বর কাশীপুরে ডাবল মার্ডারের এজাহারভুক্ত আসামী কিরণসহ আরো ৪ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, বাবুরাইল এলাকার কিরণ, আলাল, জালাল, মনির ও বরিশাইল্লা ইমরান। পরদিন ২২ নভেম্বর ভোরে মোঃ তৌফিকুল ইসলাম নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৫ নভেম্বর বাবুরাইলের মাদক স্পটের নিয়ন্ত্রক জুম্মন আহম্মেদকে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ২৩ অক্টোবর কিলিং মিশনে থাকা মাহবুব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে আদালতকে জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক কমিশনার এম এ মজিদের নির্দেশেই সদর উপজেলার ফতুল্লার কাশীপুরে ডাবল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে। একইদিন জোড়া খুনের মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে নিজামুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ অক্টোবর আবুল ও জসিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে ১৭ অক্টোবর ডাবল মার্ডারের এজাহার নামীয় আসামি রাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এছাড়া ১৫ অক্টোবর সকালে কাশিপুর খিল মার্কেট এলাকা থেকে মামলার ১০নং আসামী মো. মোজাম্মেল হক রাজনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ওই বছরের ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পরিবার নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার কাশীপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় মহনগর বিএনপির উপদেষ্টা এমএ মজিদ ও তার ভাই বিলুপ্ত শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদকে ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ অখ্যায়িত করেন দুই সহোদরের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করলে সব তথ্য পাওয়া যাবে বলেও দাবি করেন তারা। লিখিত বক্তব্যে মিল্টনের খালাতো ভাই সাইফুল তারেক বলেন, ‘এম এ মজিদ ও মো. হাসান আহম্মেদের নির্দেশে মিল্টন ও পারভেজকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর আলামত নষ্ট করার জন্য ঘটনাস্থলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১২ অক্টোবর রাতে মজিদ ও হাসান আহাম্মেদের মোবাইল ফোনের কথোপকথন ট্র্যাকিং করলেই সব দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে যাবে।
দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পরে ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল কাশিপুরের জোড়া খুনের অন্যতম আসামী বিলুপ্ত শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তবে তৎকালে জোড়া খুনের মামলায় সে জামিনে থাকায় তাকে অপর একটি নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
মামলাটি প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ কর্তৃক তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশক্রমে মামলাটি পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলায় তদন্তাধীন রয়েছে। পিবিআই তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার দূধর্ষ এজাহারনামীয় আসামী শহিদ, মানিক এবং তদন্তে প্রাপ্ত আসামী নুরুল ইসলাম দিসনাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করেন।








Discussion about this post