সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত মেধাবী ছাত্র তানভীর ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, প্রতিপক্ষকে দমাতে হত্যা-গুমের সাথে জড়িতদের বিভিন্ন সময় সরকার উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করায় তা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। এখন বহির্বিশ্বের সমালোচনা ও নিষেধাজ্ঞায় সরকার মিথ্যাচারের আশ্রয় নিচ্ছে। সরকার দেশে নিয়ন্ত্রিত বিচার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। বেছে বেছে বিচার সংগঠিত করে। যে ঘটনা বা অপরাধের সাথে সরকার দলীয় ব্যক্তিবর্গের সংশ্লিষ্টতা নাই তারা কেবল সে সব বিচারই করে; অপরাধী দলীয় বা সরকার সংশ্লিষ্টদের বিচারে তাদের আগ্রহ নেই, বরং তা অঘোষিত ইন্ডেমনিটিতে বন্ধ করে রাখছে। কিন্তু যে সব ঘটনা সরকারের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, সরকার বাধ্য হয়ে সে সবের বিচার করে। যেমন সাবেক সেনা সদস্য সিনহা হত্যা তার উদাহরণ। এইটি আমাদের বিচার ব্যবস্থার দেউলিয়াপনার চিত্র।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চাষাড়া শহীদ মিনারে ত্বকী হত্যার ১০৭ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্জ্বালন কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রফিউর রাব্বি বলেন, নয় বছর হতে চললো ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ হয়ে আছে। তদন্ত শেষ হয়ে অভিযোগপত্র তৈরী করে রাখার পরেও তা আদালতে পেশ করা হয় নাই প্রধানমন্ত্রীর অনিচ্ছার কারণে; এবং তার নির্দেশেই এ হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আইনকে কেবলি নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে গিয়ে সরকার গোটা বিচার-ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টোপথে সরকার চলতে চলতে বিচার-ব্যবস্থার সাথে সাথে নির্বাচনী-ব্যবস্থা, মানুষের নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র সবকিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে।
তিনি বলেন, ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ঘাতক সুলতান শওকত ভ্রমর, বলেছে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে আজমেরী সহ ১১ মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। র্যাব তাদের সংবাদ সম্মেলনেও তা উল্লেখ করেছে, আমরা চাই অভিযোগপত্র দেয়ার আগে আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি নিয়ে অভিযোগপত্র পূর্ণঙ্গ করা হোক। কারণ আমরা বরাবরই বলে এসেছি, শামীম ওসমানের নির্দেশে আর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান তাদের লোক জন নিয়ে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অসম্পূর্ণ অভিযোগপত্র কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।
হালিম আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বলেছেন ত্বকীকে কারা হত্যা করেছে তিনি তা জানেন, তা হলে কেন নয় বছরেও বিচার হবে না। তিনি তাঁর উদ্দেশ্যে বলেন আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে কখনো ঘাতক, খুনীদের পক্ষ নিতে পারেন না। আপনাকে ত্বকী হত্যার বিচার করতে হবে।
মাহাবুবুর রহমান মাসুম শামীম ওসমানের উদ্দেশ্যে করে বলেন, “ঘুঘু দেখেছেন, ঘুঘুর ফাঁদ দেখেন নাই’। আপনি (শামীম ওসমান) ঘুঘু দেখেছেন, ঘুঘুর ফাঁদ দেখেন নাই। মানুষের যন্ত্রনা দেখেন নাই, প্রতিবাদের ভাষা দেখেন নাই। অনেক বড় বড় কথা বলেন। ক্ষমতায় থেকে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে জিম্মি রেখেছেন। আপনি নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করে রেখেছেন। সেই আপনি শামীম ওসমান ওইদিন ত্বকী হত্যার বিচার চাইলেন। টেকনিক্যালি বললেন প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। র্যাব যে তদন্ত দিয়েছে, খসড়া যে চার্জসিট দিয়েছে সেটা আপনার জ্ঞানে নাই। একবার তো বললেন না তদন্তকারী কর্মকর্তারা আপনারা ঝামেলা গুলো শেষ করেন। আপনি বললেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত। কোন দিকে দৃষ্টি ফেলতে চাচ্ছেন। ওইদিন বললেন ত্বকী হত্যা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। আপনার বুকে এত পাঠা নাই। সে সাহস বুকে আপনার নাই।আপনি নয় বছর পর বিচার চাইলেন না কি উপহাস করলেন ? আপনি বিভিন্ন সময় বলেছেন, সংবাদ সম্মেলন করে আপনি ত্বকী হত্যায় আপনার পরিবার জড়িত না- তার প্রমান দেবেন; আমি আপনার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম আপনি প্রমান দেন। তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার হতেই হবে, আমরা এ বিচার আদায় করেই ঘরে ফিরবো।
সংগঠনের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব, কবি, সাংবাদিক হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাসুম, সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এড. প্রদীপ ঘোষ বাবু, সিপিবি’র জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদ এর জেলা আহ্বায়ক নিখিল দাস, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন, সামাজিক সংগঠন সমমনার সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা ও খেলাঘর জেলা সাধারণ সম্পাদক ফারুক মহসীন প্রমূখ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এর পর থেকে ত্বকীর হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোকপ্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।








Discussion about this post