সময়ের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে হামলার নিন্দা ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
১৩ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় ও সেক্রেটারী শাহীন মাহমুদ প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ এর কার্যালয়ে হামলা করেছে শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তচক্রের একটি দল। নিহত কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে এ হামলা চালিয়েছে বলে হামলাকারী ও সময়ের নারায়ণগঞ্জ কর্তৃপক্ষের দাবি। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।
হামলাকারী চক্র শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, খুনী ও চাঁদাবাজ আজমেরী ওসমানের বাহিনী। তারা বিভিন্ন সময় প্রশাসনের নাকের ডগায় শহরে হত্যা-খুন, চাঁদাবাজি, চাঁদার জন্য ব্যাবসায়ীদের তুলে এনে টর্চারসেলে নির্যাতন সহ বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। ২০১৩ সালে ত্বকীকে হত্যার পর তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সে বছর ৭ আগস্ট আজমেরীর আল্লামা ইকবাল রোডের টর্চারসেলে অভিযান চালালে তারা সেখান থেকে রক্ত মাখা প্যান্ট, দেয়ালে ও ফার্নিচারে গুলির চিহ্ন, ইয়াবা সেবনের বিভিন্ন সামগ্রি উদ্ধার করে। ত্বকী হত্যার সাথে জড়িত থাকার সকল প্রমানাদি থাকার পরেও আজমেরীকে গ্রেপ্তার করা হয় নাই। প্রশাসনের সামনে, কখনো প্রশাসনের সহযোগিতায় বছরের পর বছর সে তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে। আমরা সরকার ও প্রশাসনের এ দুর্বৃত্ত রক্ষার অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানাই। একটি স্বাধীন দেশে এমনি বৈষম্যমূলক বিচার ব্যবস্থা চলতে পারে না।
আমরা সময়ের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে হামলার জন্য আজমেরী ওসমান সহ তার সহযোগী সকল সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে মেধাবী ছাত্রী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকা অফিসে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮ জনের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ১৩ ফেব্রুয়ারী রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোহাম্মদ মোহসেন এর আদালত আদেশ দেন।
নারায়ণগঞ্জ কোর্র্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার ৮জনকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে হাজির করে। আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেকের ১ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।’
ওই ৮ জন হলেন শ্যামল সাহা লক্ষণ, কৃষ্ণা ওরফে কৃষ পাল, মো. নাসির হোসেন, মো. ইব্রাহিম, লিটন দাস, মো. ফয়সাল, মো. হাসিব ও বিল্লাল হোসেন।
বাদী পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু, আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও আজিজ আল মামুন।
এর আগে রোববার ভোর রাত ১২টায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন ‘দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক জাবেদ আহমেদ জুয়েল। পরে রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ৮জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিকেলে তাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান বলেন, ‘পত্রিকার সম্পাদক জাবেদ আহমেদ জুয়েল বাদী হয়ে ১৯জনের নাম উল্লেখ ও ৩০ থেকে ৪০জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অফিসে হামলা, ভাঙচুর, প্রাণনাশের হুমকি ও দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ করা হয়েছে।’
মামলায় আসামিরা হলেন নাসির (৩৫), আক্তার নূর (৪৫), রবিন (২৯), রাতুল (২৫), মনির (২৮), শ্যামল সাহা লক্ষণ (২৬), কৃষ্ণা সাহা (২৬), মুকিত (২৯), মো. নাসির হোসেন (৩১), শাকিল (৩০), সুমন (৩১), সানি (৩২), সনেট (২৭), আন্নান (২৯), কাজল (৩২), রুবেল (২৭), সিনাফী (৩১), ফারুক (৩৫), ইসমাইল (৩১)।
উল্লেখ্য শনিবার দুপুর ১২টা ২৫মিনিটে স্থানীয় পত্রিকা ‘দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ’ অফিসের নিচে অর্র্ধশতাধিক সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলে এসে অবস্থান নেন। তাঁরা অফিসে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। শুক্রবার সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকার প্রধান সংবাদ ছিল ‘যা ছিল খসড়া চার্র্জশিটে’। সংবাদটি কেন প্রকাশ করা হয়েছে, তার কৈফিয়ত জানতে চান হামলাকারীরা।
তাঁরা বলেন,‘তোরা আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে নিউজ করস। কালকের মধ্যে পত্রিকায় ক্ষমা না চাইলে পত্রিকা অফিস জ্বালিয়ে দেব ও সম্পাদককে গুলি করে মেরে ফেলব।’ হামলাকারীরা প্রায় ১৫ মিনিট কার্যালয়ে অবস্থান করে হুমকি দিয়ে চলে যান। এসময় বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেন। সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। একটি পিসির হার্ডডিক্সও খুলে নিয়ে যায়।’
দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক জাবেদ আহমেদ জুয়েল বলেন, ‘সম্প্রতি ত্বকী হত্যা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। ১১ ফেব্রুয়ারী একটি র্যাবের সেই প্রকাশিত খসড়া চার্জশীট নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। মূলত সেই খসড়া চার্জশীট র্যাব প্রকাশ করে এবং ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি গণমাধ্যম কর্মীদের সরবরাহ করে। সেটাই হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আমাদের নিজেদের মনগড়া বক্তব্য নাই। কিন্তু তারা যেভাবে অফিসে হানা দিয়েছে সেটা ন্যাক্কারজনক। তারা অফিসের সিসি ক্যামেরার ডিভিআর মেশিন ও একটি পিসির হার্ডডিস্ক নিয়ে গেছে। ভাঙচুর করেছে ক্যামেরা। সাংবাদিক ও স্টাফদের বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এরা প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের সমর্থক। ত্বকীর ওই নিউজে আজমেরী ওসমানের নাম ছিল। সেজন্যই তারা এসে এ হামলা চালায়। হামলাকারীরা কৈফিয়ত দিতে বলে কেন আজমেরী ওসমানের নামে নিউজ করেছি। এতেই স্পষ্ট হয় যারা হামলা করেছে তারা আজমেরী ওসমানের সমর্থক।’









Discussion about this post