নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে কাশফা টাওয়ার সংলগ্ন এরিবস স্কুল এন্ড কলেজ গলিতে উইনডোর কোচিং সেন্টারের কর্ণধার একাধিক বিয়ের অধিকারী ফিরোজ শাহ জুয়েলকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড় । বৃদ্ধ হয়েও নিজ কেচিংয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে আবারো বিয়ে করার মনোবাসনা থেকে নিজ বাসায় থাকা ৮০ হাজার টাকা, ক্রেডিট কার্ডে ৮ লাখ টাকা ও পরিধেয় কিছু জামা কাপড় নিয়ে স্ত্রীকে মুঠোফোনের ম্যাসেঞ্জারে জানায় “আর আমার অপেক্ষায় থেকো না” । এমন মন্তব্য করে নিরুদ্দেশ হয়ে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দুই দিন পালিযে বেড়ানোর পর গ্রেফতার হয় পুলিশের কাছে।
এমন ঘটনা কাশফা টাওয়ার সংলগ্ন এরিবস স্কুল গলির কয়েকটি কোচিং সেন্টারের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে । এই এলাকার কোচিং সেন্টারের অনেকেই নানা অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে বলেও জোড়লো অভিযোগ রয়েছে ।
শিক্ষার্থীদের অনেকেই বুধবার সকাল থেকেই দফায় দফায় লম্পট ফিরোজ শাহ জুয়েলের বিচার দাবী করে শ্রোগান দেয় এবং অন্যান্য লম্পট শিক্ষকদের হুসিয়ারী দিয়ে ব্যানার ফ্যাস্টুন ছিড়ে ফেলেন ।
লম্পট ফিরোজ শাহ জুয়েল পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও তার ফেসবুক পেইজ থেকে সকল শিক্ষার্থীদের ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে, “জরুরী কাজে গ্রামের বাড়ি আছি । সকল ক্লাশ আগামী বৃহস্পতিবার (১০/০৩/২২) পর্যত বন্ধ থাকবে । শনিবার ১২/০৩/২২) থেকে সকল ক্লাশ চলবে !“ এমন ম্যাসেজে অনেকেই জানায়, কারাগারে থেকে এই ম্যসেজ দেয় কি করে লম্পট জুয়েল ? আর একজন শিক্ষক এমন মিথ্যাচার করেন কিভাবে ?
পুলিশের হাতে গ্রেফতারের সাথে সাথে শিক্ষার্থী ও তার মা আদালত চত্তরে পুলিশের কাছে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে মৌখিক অভিযোগ কললেও একদিনের ব্যবধানে বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে ভিকটিম শিক্ষার্থী হুমাইরা আল নাহার (১৬) (ছদ্মনাম) নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুন নাহার ইয়াসমিনের খাস কামড়ায় ২২ ধারায় জবানবন্দিতে বলেন, “আমি ধর্ষণের শিকার হই নাই । আমাকে অপহরণ করেছে শিক্ষক জুয়েলসহ তার সহযোগি সুমন ও অজ্ঞাতনামার আরো ৩/৪ জন অপরাধী।”
এমন জবানবন্দির পর নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের বিচারক অপহরণের শিকার শিক্ষার্থীকে বাবা ও মায়ের জিম্মায় হস্তান্তর করেন । একই সাথে আদালত লম্পট শিক্ষক ফিরোজ শাহ জুয়েলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ।
লম্পট শিক্ষক ফিরোজ শাহ জুয়েলকে কারাগারে পাঠানোর এমন আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, দুই দিন নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশের হাতে আটক হন লম্পট শিক্ষক ফিরোজ শাহ জুয়েল। পরবর্তীতে ফতুল্লা থানা পুলিশ এই ছাত্রীকে উদ্ধার করে ।
গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী নিজেকে মাসদাইর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন উইনডোর কোচিং সেন্টারের কর্ণধার পরিচয় দিয়ে নিজের নাম ফিরোজ শাহ জুয়েল বলে জানান ।
এ বিষয়ে ফতুল্লা থানার দারোগা গোলাম মোস্তফা জানায়, অপহরণকারী জুয়েল মাস্টার (৫০) এর তিনজন স্ত্রী থানায় অবস্থান করছে । তাকে আদালত প্রাঙ্গণ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ফতুল্লা থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
স্কুল ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয় ফিরোজ শাহ জুয়েল কে । তার গ্রামের বাড়ী গাইবান্ধা জেলায় বললে তিনি মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরী এলাকায় বসবাস করেন এবং কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছেন। তার চারজন স্ত্রী ছাড়াও কোমলমতি ছাত্রীদেরকে নানাভাবে জিম্মি করে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলো জুয়েল ।
অপহরণের ঘটনার পরবর্তীতে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত সোমবার দুপুরে পরিক্ষার খাতা দেখানোর কথা বলে ফোন করে বাসা থেকে কোচিং সেন্টারে ডেকে এনে পরিক্ষার্থী এক ছাত্রীকে অপহরণ করেন জুয়েল মাস্টার। এরপর ছাত্রী বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় ছাত্রীর বাবা মা জুয়েল মাস্টারকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন এবিষয়ে কাউকে কিছু জানালে আপনাদের মেয়ের ক্ষতি হবে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রকিবুজ্জামান জানান, অভিযোগ পেয়ে দ্রুত অভিযান চালিয়ে শিক্ষককে গ্রেফতার করে ছাত্রীকে উদ্ধার করে আজ বুধবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে । আদালতের পরবর্তী সিন্ধান্ত দিবেন ।









Discussion about this post