নারায়ণগঞ্জ আদালতে মর্মান্তিক এই নৌ দূর্ঘটনার বিষয়ে কার্গো জাহাজের মাস্টার মো: রমজান আলী শেখ (৫৬), মাস্টার মো: নুরুল আলম (৪৩), ইঞ্জিনিয়ার মো: আরিফুল আলম (২৯), ইঞ্জিনিয়ার মো: নাদিম হোসেন (২৪), লস্কর মো: সুমন হোসেন (২৪), লস্কর মো: ইয়াসিন (২২), সুকানী মো: জাহিদুল ইসলাম (২৪), গ্রীজার মো: রিয়াদ হোসেন (২৩) কে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে উপস্থাপন করা হলে আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলম আসামী পক্ষের আইনজীবীর শুনানী শেষে উল্লেখিত আসামীদের প্রত্যেক কে তিন (৩) দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে নিশ্চিত করেছেন কোর্ট ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
# কার্গো জাহাজের মাস্টার ড্রাইভারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন কার্গো জাহাজ এমভি রূপসী-৯ এর ধাক্কায় ডুবে যাওয়া মুন্সিগঞ্জগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ এম ভি আশরাফ উদ্দিন উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার ২১ মার্চ ভোরে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে এসে লঞ্চটি উদ্ধার করে।
সোমবার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে আরো দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ। এতে করে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৮ জনে।
লঞ্চডুবির ঘটনায় সোমবার বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ পরিচালক (নৌ নিট্রা) বাবু লাল বৈদ্য বাদি হয়ে পৃথক দু’টি মামলা করেছে। যার একটি বন্দর থানায়। অপরটি নৌ আদালতে। সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন কার্গো জাহাজ এমভি রূপসী-৯-এর মাস্টার ড্রাইভারসহ গ্রেফতারকৃত ৮ জনকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে নৌ পুলিশ।
লঞ্চডুবির ঘটনায় আরও দুইজনের লাশ উদ্ধার মোট মৃত ৮
শীতলক্ষ্যার আল আমিন নগর এলাকায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এম এল আফসারউদ্দিন’ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো চারজন নিখোঁজ আছেন বলে স্বজনেরা দাবি করেছেন।
২১ মার্চ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় মুন্সিগঞ্জের শীতলক্ষ্যা-ধলেশ্বরী নদীর মোহনা থেকে একজনের এবং দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিন ভোরে ডুবন্ত লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় মুন্সিগঞ্জ থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ বছর। তবে লাশটি নিখোঁজ মোসলেম উদ্দিন ও আবদুল্লা আল জোবায়েরের না বলে তাঁদের স্বজনেরা নিশ্চিত করেছেন। তার পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লাশটি নারায়ণগঞ্জ নৌ থানায় রাখা হয়েছে। বেলা দেড়টায় ঘটনাস্থল থেকেই ভাসমান এক নারীর লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। লাশটি সোনারগাঁওয়ের স্কুল শিক্ষিকা উম্মে খায়রুনের (৪৫)। পরে শনাক্ত শেষে লাশটি নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। নিহত উম্মে খায়রুন ফাতেমা সোনারগাঁওয়ের বৈদ্যরবাজার হারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। দুর্ঘটনার সময়ে তার স্বামী আবু তাহের (৫২) সঙ্গেই ছিলেন। স্বামী লঞ্চ থেকে সাতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও দুর্ঘটনার সময়ে স্ত্রীর হাত ছিটকে যায়। আবু তাহের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ কাজী ফজলুল হক উইমেন্স কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি স্ত্রী দুই ছেলে মাহফুজুর রহমান (১৮) ও আরশাদ শাহীনকে (১৪) নিয়ে সোনারগাঁ পৌরসভার হাতকোপা এলাকায় বসবাস করেন।
এখনো নিখোঁজ ৪ জন
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন মুন্সিগঞ্জের মোসলেম উদ্দিন হাতেম (৫৫), জুবায়ের হোসেন, আরোহী রানী, নারায়ণগঞ্জের আবদুল্লাহ আল জোবায়ের (৩২)। লাশের ছবি আশপাশের থানাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
৭ জনের লাশ হস্তান্তর :
সোমবার দুপুরে স্কুল শিক্ষকের লাশ হস্তান্তর ছাড়াও লঞ্চডুবির ঘটনায় রোববার রাতেই ছয়জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে নৌ পুলিশ। যাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলো মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার জয়নাল ভূঁইয়া (৫৫), আরিফা আক্তার (৩৫), তাঁর ছেলে সাফায়েত (১৫ মাস), স্মৃতি রানী (২০), পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের সালমা বেগম (৪০) ও তার মেয়ে ফাতেমা (৭)।
শীতলক্ষ্যাপাড়ে স্বজনদের আর্তনাদ : জীবিত পাওয়ার আর আশা নেই। এখন শুধু মরদেহটি চান স্বজনরা। মরদেহের আশায় শীতলক্ষ্যাপাড়ে ছোটাছুটি করছেন তারা। কিন্তু কোথাও কোনো মরদেহের দেখা মিলছে না। শীতলক্ষ্যা নদীর আল আমিন নগর এলাকায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি সোমবার (২১ মার্চ) ভোর ৫টায় উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় কর্তৃক উদ্ধার করা হলেও ভেতরে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি স্বজনরা। তবে দুপুর পর্যন্ত ২ জনের লাশ ভেসে উঠে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৪ জন।
নিখোঁজ আব্দুল্লাহ আল জাবেরের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমি আমার ছেলের মরদেহটি ফেরত চাই। জীবিত তো আর পাবো না। কর্তৃপক্ষের কাছের দাবি জানাই যেন উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা না হয়।
নিখোঁজ ফাতেমার চাচা আক্তার হোসেন বলেন, লঞ্চটি উদ্ধার করা হলো কিন্তু আমার ভাতিজিকে পেলাম না। নিখোঁজ হাতেমের ছেলে সাগর বলেন, আমি আমার বাবার মরদেহ হলেও ফেরত চাই।
লঞ্চ ও কার্গোর দুটি চলে বেপরোয়া গতিতে-তদন্ত কমিটি : শীতলক্ষ্যায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এম এল আফসারউদ্দিন’ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শামীম বেপারী জানান, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় ধাক্কা দেওয়া কার্গো জাহাজ এবং ধাক্কায় ডুবে যাওয়া লঞ্চের দুই চালকই বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন।
শামীম বেপারী বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি দুজনই বেপরোয়া গতির চালক ছিলেন (বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন)। আমরা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বিস্তারিত জানাতে পারবো। আশা করি এবার আমরা জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারবো।’
রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন কার্গো জাহাজ এমভি রূপসী-৯-এর ধাক্কায় নারায়ণগঞ্জ হতে মুন্সিগঞ্জগামী ‘এম এল আফসারউদ্দিন’ নামে লঞ্চটি ডুবে যায়।
এ ঘটনায় রাতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেইসঙ্গে নিহত প্রত্যেকের মরদেহ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এদিকে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় আরো ১টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিআইডব্লিউটিএ) ড. আ.ন.ম বজলুর রশিদকে। অপর দুইজনের মধ্যে সদস্য নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার অ্যান্ড এক্সামিনার ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মোহাম্মদ দেলোয়ার, সদস্য সচিব হলেন বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। দুর্ঘটনার পর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ওই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বলে জানান উপ সচিব আমিনুর রহমান। কমিটিতে আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে ঘটনার কারণ উদঘাটন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে।
লঞ্চডুবিতে ২ মামলা : নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবির ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ পরিচালক (নৌ নিট্রা) বাবু লাল বৈদ্য বাদি হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেছে। সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরে মামলা দুটি করা হয়। যার একটি বন্দর থানায়। অপরটি নৌ আদালতে।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মাসুদ কামাল বলেন, উপপরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে মামলা দুটি করেছে।
মামলার বাদি বাবু লাল বৈদ্য জানান, বন্দর থানায় দায়েরকৃত মামলায় (নং ৩২) কার্গো জাহাজের মাস্টার ড্রাইভার সুকানীসহ ৮ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলায় খামখেয়ালীপনা, বেপরোয়া গতিতে নৌযান চালানো ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে নৌ আদালতে ৩ জন মাস্টার ড্রাইভার সুকানীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স ধারায় (আইএসও) মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ থানায় একটি মামলা করেছে। মামলার পর লঞ্চে ধাক্কা দেওয়া কার্গো জাহাজের আটক মাস্টার-ড্রাইভার সুকানী গ্রিজার ইঞ্জিনিয়ারসহ আটজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রোববার দুপুরে কার্গো জাহাজ এমভি রূপসী-৯ ধাক্কায় নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জগামী আফসারউদ্দিন নামের লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চডুবির ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শীতলক্ষ্যায় আটজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জীবিত উদ্ধার হয়েছে ১৫ জন। এছাড়া এখনো চারজন নিখোঁজ রয়েছেন।









Discussion about this post