৪৮ ঘন্টা আল্টিমেটাম শেষে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষক প্রতিনিধি মাহাবুবুর রহমান প্রিন্স কে শারীরিক লাঞ্ছিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি । অভিযুক্ত ম্যানেজিং কমিটির দুই অভিভাবক সদস্যের বহিস্কার ও শাস্তি দাবি করে বুধবারও ক্লাশ বর্জন করে বিক্ষোভ করেছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
দুই জন অভিভাবক প্রতিনিধি বাবু আলম ছাড়াও সাংবাদিক আবদুস সালাম ১২ বছর যাবৎ চুষে খেতে খেতে স্কুলের বারোটা বাজিয়েছে বলে কঠোর ভাষায় মন্তব্য করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা । একই সাথে শিক্ষকের উপর হামলাকারী ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য সরকার আলম ও ওয়াহেদ সাদত বাবুকে বহিস্কারসহ দুস্কৃতকারী মদদদাতা সাংবাদিক আবদুস সালামকে উদ্দেশ্য করে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় বারবার “বাবু ও আলমের দুই গালে জুতা মারো তারে তালে, বাবু আলমের বহিস্কার চাই বহিস্কার চাই” বলে শ্লোগান দেয় ।
এদিন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করতে প্ল্যাকার্ড হাতে ক্লাশ বর্জন করে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে স্কুল মাঠে সমবেত হয়। বাদ ছিল না স্কুলের ছাত্রীরাও। তাদের শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ।
শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল একটাই-যে কোন মূল্যে শিক্ষক লাঞ্ছনাকারী ২ অভিভাবক সদস্যকে কমিটি থেকে বহিস্কার করতে হবে। সেই সঙ্গে পেছন থেকে ইন্ধনদাতা ম্যানেজিং কমিটির অপর এক সদস্যকেও কমিটি থেকে অপসারণ করতে হবে। প্লেকার্ডগুলোতে ‘আলম-বাবু বহিস্কার, হাইস্কুল পরিস্কার’ ‘বাবু-আলমের গ্রেপ্তার চাই’সহ নানা শ্লোগান লেখা ছিল।
এদিকে স্কুলের শিক্ষকরাও ক্লাশ বর্জন করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ও হাই স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ।
ওদিকে ঘটনার বিয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রহিমা আক্তারের নেতৃত্বে একটি টীম হাই স্কুলে গিয়ে ঘটনার শিকার শিক্ষক, স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কোন ভাবেই ছাড় না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতেরও আশ্বাস দেন তারা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রহিমা আক্তার বলেন, আমরা ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। দোষীদের কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা স্কুলের শিক্ষক, ঘটনার শিকার শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে যা জানতে পেরেছি তা জেলা প্রশাসককে অবহিত করবো।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রহিমা আক্তারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার শরীফুল ইসলাম, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু তালেব, সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার সকাল থেকেই স্কুলের প্রাথমিক শাখার শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জন করে স্কুল মাঠে সমবেত হয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মাধ্যমিক শাখার শিক্ষার্থীরা। ওই সময় শিক্ষার্থীরা হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করে। তাদের শিক্ষক লাঞ্ছনাকারী দুই অভিভাবক সদস্যের বহিস্কার দাবি করা হয়।
ছাত্রদের বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন, মোঃ সাজেদীন, তাহিয়াতুল আহমেদ স্নেহ, শাহজালাল, জামাল, মোঃ ইফতি, এনামুল, জয়, পার্থ, অরিজিৎ, ওয়াসি প্রমুখ।
ছাত্র নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের সামনে আমাদের শিক্ষককের উপর হাত তোলা হবে এটা আমরা কোন ভাবে বরদাস্ত করবো না। আমরা ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্যকে অবিলম্বে কমিটি থেকে বহিস্কার দাবি করছি। সেই আবদুস সালাম নামে কমিটির একজন সদস্য পেছন থেকে এ ঘটনার উস্কানিদাতা। তিনি স্কুলকে নিজের সম্পত্তি মনে করেন। তিনি স্কুল লুটেপুটে খাচ্ছেন। আমরা কমিটি থেকে তারও অপসারণ দাবি করছি।
অপর দিকে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সামনে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ও হাই স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ। মানববন্ধনে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা অংশ নেয়।
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি পাগলা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বজেন্দ্র নাথ সরকারের সভাপতিত্বে ও মাসুম খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম মর্তুজা, নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহামুদুল হাসান ভূঁইয়া, লক্ষী নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র রায়, হাই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রত্যক্ষদর্শী বিপুল সরকার, শিক্ষক নেতা ও মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ কবীর উদ্দিন চৌধুরী, লক্ষী নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক আশিষ কুমার, বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রঞ্জিত কুমার দেবনাথ প্রমুখ।
মানবববন্ধনে বক্তারা বলেন, মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক। আর সেই শিক্ষককে লাঞ্ছনা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কমিটি থেকে বহিস্কার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি। আমরা এ ধরণের ম্যানেজিং কমিটি চাই না, যে কমিটি শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষনের পরিবর্তে তাদের হাতে শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হয়।
উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুরে স্কুল ছুটির আগ মুহুর্তে ভর্তি বাণিজ্যে সুবিধা করতে না পেরে স্কুল মাঠে প্রকাশ্যে সিনিয়র শিক্ষক মাহাবুবুর রহমানকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করেন ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য বিএনপি নেতা সরকার আলম ও ওয়াহেদ সাদত বাবু। এ দুই সদস্য ওই শিক্ষকের দাঁড়ি ছিঁড়ে ফেলা এবং হাতে কব্জি কেটে ফেলার হুমকি দেন।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ঘটনা জানতে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের স্কুলে পাঠানো হয়েছে। তাদের ঘটনা জেনে একটি লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। আর সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ঘটনার শিকার শিক্ষক মামলা করলে দ্রæত মামলা নিয়ে অভিযুক্তদের যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।









Discussion about this post