নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একদল লোক সেলিম মোল্লা (৫১) নামের এক ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় অপহরণের মামলা করলেও ২৫ দিন পরও পুলিশ ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করতে পারেনি। এ ঘটনায় ওই ব্যবসায়ীর পরিবার শঙ্কা ও আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। এদিকে ডিবি ওই ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অপহৃত ব্যবসায়ীর স্ত্রী রোমা হক মামলায় উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী সেলিম মোল্লা কিছুদিন বসুন্ধরা গ্রুপের মেকানিক্যাল বিভাগে চাকরি করতেন। সেখান থেকে দুই বছর আগে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে সদর উপজেলার ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকার বাড়িতে থাকতেন এবং বিভিন্ন স্থানে জমিজমা কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। জমিজমার ব্যবসায় কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল কি না, তা তাঁর জানা নেই। গত ২১ মার্চ রোমা হক সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। বাসায় তাঁর স্বামী সেলিম মোল্লা একা ছিলেন। গত ২৩ মার্চ সকাল ৯টার দিকে তাঁর বাড়ির মালিক গিয়াস উদ্দিন তাঁকে মুঠোফোনে জানান, তাঁর স্বামী সেলিম মোল্লাকে সকাল আটটার দিকে অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজন ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাসা থেকে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গেছেন। ওই ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ি ফিরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও স্বামীর সন্ধান পাননি। এ ঘটনায় গত ২৬ মার্চ ফতুল্লা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, পরবর্তী সময় রোমা হক তাঁর ভাড়া বাসার পাশের একটি কারখানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখতে পান, অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজন একটি কালো হাইয়েস মাইক্রোবাসে তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত কোথাও তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী বলেন, তাঁর স্বামীর বন্ধু ইসমাইলকে (৫০) একই তারিখে গুলিস্তান থেকে অজ্ঞাতনামা লোকজন একই ভাবে তুলে নিয়ে যান। পরবর্তী সময় তাঁকে ২৯ মার্চ রাতের অন্ধকারে তাঁর বাসার সামনে চোখ বাঁধা অবস্থায় নামিয়ে দিয়ে যায়। ওই ঘটনার সংবাদ পেয়ে ইসমাইলের দ্বারস্থ হয়ে স্বামীর বিষয়ে জানতে চান তিনি। ইসমাইল সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে একেক সময় একেক ধরনের কথা বলেন। বাদীর ধারণা, যেকোনো কারণে হোক, পরিকল্পিতভাবে তাঁর স্বামীকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রেখেছে দুর্বৃত্তরা।
রোমা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা জিডি নেই। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন।’ তিনি বলেন, তাঁদের সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ছেলের বয়স পাঁচ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স দুই বছর।
বাড়িওয়ালা দেলোয়ারা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এক বছর ধরে তাঁদের বাড়িতে ভাড়া আছেন সেলিম মোল্লা। সাদা পোশাকের লোকেরা প্রথমে আইনের লোক পরিচয়ে দেন। কিসের আইনের লোক জানতে চাইলে তাঁরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁরা ভাড়াটিয়া সেলিম মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তরিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশ সেলিম মোল্লা নামের কাউকে তুলে আনেননি। যেহেতু ডিবি পুলিশ পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় অপহরণ মামলা হয়েছে। তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।









Discussion about this post