গেলো দুই দিনেও নারায়ণগঞ্জ যুবদল আয়োজিত ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে বিএনপির রাজনীতিতে এখনো থামে নাই সমালোচনা। জোড়ালোভাবেই চলছে বিতর্ক ।
সবশেষ শরিবার ২৩ এপ্রিল সকালে এবং এরপূর্বে ২২ এপ্রিল শুক্রবার রাতে তারাবির নামাজের পর নগরীর দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকায় শ্রমিক দলের নেতা আজিম উদ্দিনের কিশোর পুত্র ক্যান্সার আক্রান্ত আবু যার হাসান আলিফের (ফুটবলার) মৃত্যুতে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী শোক জানাতে এসেও যুবদলের ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে সমালোচনা করেন। এ সময় বিএনপির অনেক নেতা নিজেদের মাঝে কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “বিএনপির নেতারা যে কতটা মহাসুখে আছেন এটাই তার প্রমাণ করেছেন ! যেখনে বিএনপি এখন সরকারের কারণে কোণঠাসা । সেখানে কি করে বিয়ের বাড়ির আদলে ইফতার মাহফিলের নামে মস্করা করলো যুবদল । এমন আয়োজন ছাড়াও মারামারির ঘটনার পর সর্বত্র চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে । এই লজ্জা কার ? সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে আমরা কত ই না সমালোচনা করি এখন আমাদের নিয়ে সমালোচনা ঠেকাবে কে ? বিতর্ক থেকে আমার মুক্ত থাকেবো কি করে ?”
জানা যায়, ২১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে মহানগর যুবদলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দীন টুকু। এদিন নীরব টুকুর জন্য মহানগর যুবদলের ছিল এলাহী আয়োজন।
নারায়ণগঞ্জ শহরের চৌরাঙ্গি পার্কে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইফতার মহফিলে নেতাদের আপ্যায়নের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হলে শুরু হয় বিতর্ক। একই সাথে চলছে কঠোর সমালোচনা ।
ইফতার মাহফিলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের জন্য রীতিমত বিয়ে বাড়ির আয়োজন করেন মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা। ইফতারে খাবারের আইটেম হিসেবে ছিল আস্ত খাসি রোস্ট, পোলাও, রূপচাঁদা ফ্রাই, মুরগীর রোস্ট, গরুর মাংস ভুনা, চিংড়ির রেজালা, ৫ ধরনের শরবত, ১৫ এর অধিক ফল ইত্যাদি।
এদিকে নেতাদের জন্য ইফতারির ব্যাপক আয়োজন হলেও মাহফিলে কর্মীদের জন্য তৈরি করে রাখা ইফতারের প্যাকেটগুলো কম পড়ে। এসময় ইফতারের খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ায় কর্মীরা। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে পার্কের ভাসমান রেস্টুরেন্টের ভেতরে ইফতারে ব্যস্ত ছিলেন জেলা যুবদলের নেতারা।

এসময় ইফতার মাহফিলে যুবদলের দু গ্রুপ মারামারিতে জড়ালেও তাদের নিবৃত্ত করতে ভেতর থেকে নেতাদের বের হয়ে আসতে দেখা যায়নি৷ মাহফিলে অংশ নিতে আসা অনেকেই এসময় দ্রুত পার্ক থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সংঘর্ষে এসময় বেশ কয়েকজন আহতও হন।

এদিকে নেতাদের ইফতারের আয়োজনে প্রায় লাখ টাকার বাজেট ছিল বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
নেতাকর্মীরা জানান, ইফতার আয়োজনে নেতাদের জন্য রাজকীয় বিয়ে বাড়ির মত খাবার করা হয়েছে। তাদের খাবারের যেই বাজেট তা দলের কারাগারে থাকা, মামলার শিকার, গুম হওয়াদের পরিবার, নিহতদের পরিবারে দিলে দলের কর্মীরা উজ্জীবিত হতো। এটা কোনভাবেই ভালো চোখে দেখার মত নয়। পুরো আয়োজনের টাকায় হয়তো যুবদল নেতাকর্মীদের যারা নির্যাতিত তাদের ভালোভাবে ঈদ উদযাপিত হতে পারতো।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়োজকদের একজন মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শাহেদ আহমেদ জানান, নেতারা এসেছেন তাদের আপ্যায়ন করা হয়েছে, এটি আমাদের সিনিয়ররা ভালো বলতে পারবেন। আমি এর বেশি কিছু বলতে পারবোনা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, প্রধান বক্তা হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দীন টুকু উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, সহ সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, জাকির হোসেন নান্নু, মজিবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, সহ সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আলম চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর তাহের বাবু ও মহসীন হোসেন বিদ্যুৎ।
আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদ প্রমুখ।









Discussion about this post