নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ঘটনায় আবারও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে, ত্বকীকে হত্যা করার জন্য শামীম ওসমানের ভাতিজা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এই ভাতিজাকে শামীম ওসমান নিজেই নির্দেশ দিয়েছিল। তাহলে শুধু তার ভাতিজাকেই গ্রেপ্তার করলে হবে না, শামীম ওসমানকেও গ্রেপ্তার করতে হবে। শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়ে তার জবানবন্দী নেওয়া হয় তাহলে ত্বকী হত্যার বিচারের সমস্ত ঘটনা বের হয়ে আসবে। যেহেতু শামীম ওসমান তার ভাতিজাকে দিয়ে ত্বকীকে হত্যা করেছে।’
রোববার (৮ মে) সন্ধ্যায় শহরের ডিআইটি আলী আহম্মদ চুনকা মিলনায়তন প্রাঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে মাসিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে মোম শিখা প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হালিম আজাদ নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি।
তিনি আরও বলেন, ‘মূল হত্যাকারী আজমেরী ওসমান এ নারায়ণগঞ্জ শহরে সে কালো গ্লাসের গাড়িতে চড়ে পুলিশের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এতে প্রমাণ হয় ত্বকীর খুনিদের পাহারা দিয়ে রাখছে এ নারায়ণগঞ্জের সমস্ত পুলিশ, জেলা প্রশাসনসহ সমস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমন এক সময় আসবে এই খুনিকে এই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মধ্যে থেকে টেনে বের করে রাস্তা এনে, আজমেরী ওসমানকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে। সেই সময় চলে আসছে। অবিলম্বে আজমেরী ওসমান সহ সকাল খুনি ও এই শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।’
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেছেন, ‘শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে। ত্বকী হত্যার কারণে এবং একজন আইন প্রণেতা হয়ে আদালতে আসামিকে হাজির হতে না করার কারণে।’
তিনি বলেন, ‘ত্বকী হত্যাসহ সাগর-রুনি, তনু, নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, ভুলু, মিঠু সহ সকল হত্যার বিচার দাবি করছি। ছোট শিশু সাদমান সাকির উদ্ধারের দাবি করছি।’
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহিন মাহমুদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন খেলাঘর আসর জেলার সভাপতি রথিন চক্রবর্তী, সিপিবি জেলার সাধারণ সম্পাদক শিব নাথ চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সভাপতি তরিকুল সুজনসহ আরও অনেকে।
প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে ত্বকী শহরের শায়েস্তাখান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ (নিখোঁজের একদিন পর ও লাশ উদ্ধারের একদিন আগে) এ লেভেল পরীক্ষার রেজাল্টে পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ পেয়েছিল যা সারাদেশে সর্বোচ্চ। এছাড়া ও লেভেল পরীক্ষাতেও সে পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন পরীক্ষাতে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল। পরে ৮ মার্চ সকালে চাড়ারগোপে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। ত্বকী হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে ৮জনই পলাতক। আর ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ধেহে ৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে দুইজন আসামি ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু এ হত্যাকান্ডের ৯ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত এ মামলার অভিযোগ পত্র দেয়া হয়নি।
ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। এই অনুষ্ঠান থেকে একাধিকবার এমপি শামীম ওসমানের গ্রেপ্তারের দাবি জানায় বক্তারা ।








Discussion about this post