ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী আবারো প্রমাণ করলেন তিনি সাধারণ মানুষের নেতা। তিনি (আইভী) নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অপ্রতিরোধ্য মেয়র । নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও তিনি তার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে কখনো প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায় নাই । তেমনটি ই প্রমাণ করলেন দেশের অত্যান্ত জনপ্রিয় মেয়র ডাক্তার আইভী। তিনি তার জন্মদিনে মাত্র ৫ টাকায় টিকেট কেটে সাধারণ মানুষের মতো ই সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেন ।
দেশের অনেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদরা সামান্য অসস্থ্যবোধ করলেই বিদেশে ছোটেন। দেশে চিকিৎসা নিলেও অধিক সুবিধাসম্পন্ন বেসরকারি ক্লিনিকের দ্বারস্থ হন। তবে ব্যতিক্রম দেখালেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
গলার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন সরকারি হাসপাতালে। বর্হিবিভাগের ৫ টাকার টিকেট কিনে স্বাস্থ্য সেবা নেন তিনি।
রোববার (৫ জুন) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে যান নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। বর্হিবিভাগের ৫ টাকার টিকেট কিনে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুজ্জামানের সেবা নেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (দায়িত্বরত আরএমও) ডাক্তার জহিরুল ইসলাম নারায়ণগহ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, গলার সমস্যা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্য সাধারণ রোগীর মতোই ৫ টাকার টিকেট কিনে বহির্বিভাগের চিকিৎসক নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুজ্জামানের সেবা নিয়েছেন।
এদিকে দেশের জনপ্রিয় নাসিক মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর ৫৬তম জন্মদিন রোববার ।
১৯৬৬ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে জন্ম তার। মা মমতাজ বেগম ও বাবা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকার পাঁচ সন্তানের মধ্যে আইভী প্রথম।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ চুনকা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। রাজনীতিক বাবার সান্নিধ্যে সেই শৈশব থেকেই মানুষের প্রতি তার গভীর মমতা ও ভালবাসা তৈরি হয়। বাবার মতোই তিনি অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী। বলা হয়ে থাকে, একজন রাজনৈতিক নেতার স্বপ্নের সাথে যখন অগণিত মানুষের স্বপ্ন মিশে যায়, তার চিন্তা কর্মের মাঝে যখন মানুষ আশার আলো দেখতে পায়, তখনই তিনি গণমানুষের নেতা হয়ে উঠেন। চিকিৎসক থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া মেয়র আইভীও নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
দেওভোগ আখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তি হন। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি ঐতিহ্যবাহী মর্গ্যাণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান। ১৯৮২ সালে এসএসসি ও ১৯৮৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে রাশিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোভ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। ১৯৯২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে ইন্টার্ন সম্পন্ন করেন। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৩-৯৪ সালে মিটফোর্ড হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জের ১০০ শয্যা হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।
ডা. আইভী ১৯৯৫ সালে বিয়ের পর কম্পিউটার প্রোগ্রামার স্বামী রাজবাড়ীর কাজী আহসান হায়াৎ এর সাথে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। সেখানে তিনি মেডিকেল ল্যাবরেটরি সায়েন্সের ওপর পড়াশোনা করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি কাজী সাদমান হায়াৎ সীমান্ত ও কাজী সাদরিল হায়াৎ অনন্ত নামের দুই পুত্র সন্তানের জননী। তিনি ২০০২ সালে দেশে ফিরে আসেন।
আইভী স্কুল ও কলেজ জীবন হতে বাবার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের মাত্র ১৭দিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে তাকে উড়িয়ে দেশে আনা হয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে তার পক্ষে নারায়ণগঞ্জে জোর প্রচারণা চালান দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভী বিপুল ভোটে জয়ী হন। ওই নির্বাচনে দলের সমর্থন না পেলেও একচুল পিছু হটেনি আইভী। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। তবে এবার তার ভাগ্যে জুটে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক। পরবর্তীতে তিনি পেয়েছেন উপ মন্ত্রীর মর্যাদা। সবশেষ গত ১৬ জানুয়ারী সিটি নির্বাচনেও জিতে যান আইভী।









Discussion about this post