আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অসাধুদের ম্যানেজের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু অসাধু শাসক দলের নামধারী নেতা নিয়মিত মাসোয়ারা গ্রহণ করায় এমন নিষিদ্ধ পলিথিনের কারবার বন্ধ করা যাচ্ছে না
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বিক্রয় নিষিদ্ধ হলেও শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের প্রাণ কেন্দ্রেও থেমে নেই নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন। শহর কিংবা পাড়া মহল্লার হাট-বাজার, সাধারণ মুদি দোকানসহ সবখানে দেদারসে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। দীর্ঘদিন পলিথিন বিক্রয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো অভিযান পরিচালনা না হওয়ায় নিষিদ্ধ পলিথিন এখন বিক্রয় ও ব্যবহার হচ্ছে প্রকাশ্যে।
নরায়ণগঞ্জ শহরের দিগুবাবুর বাজার, কালীর বাজার ও নিতাইগঞ্জের পাইকারী বাজারে একেবারেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ শপিং ব্যাগ । দীর্ঘদিন পর আবারো নগরীর কয়েকজন অসাদু ব্যবসাী পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একেবারেই প্রকাশ্যে ট্রাকভর্তি করে এই নিসিদ্ধ রঙ্গিন শপিং ব্যাগ নগরীর বিভিন্ন নিষিদ্ধ কারখানা থেকে উৎপাদন করে বাজারে এনে বিক্রি করে যাচ্ছে ।
ক্রেতারা বাজার করতে যাচ্ছেন খালি হাতে, কিন্তু ফিরে আসছেন পলিথিনের ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ীও প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। অথচ পরিবেশের বিপর্যয় রোধে পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে সরকার।
সে সময় আইনটির কঠোর প্রয়োগে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। তবে বর্তমানে আইনটি প্রয়োগের শিথিলতায় নতুন ভাবে নারায়ণগঞ্জে ফিরে এসেছে নিষিদ্ধ পলিথিন।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তাদের ম্যানেজ করেই চলছে পলিথিনের এই রমরমা ব্যবসা। প্রতিটি হাট-বাজারে রয়েছে বেশ কয়েকটি পাইকারি পলিথিনের দোকান। এসব দোকানে উৎপাদনকারীরাই নিজেদের লোক দিয়ে পলিথিন সরবরাহ করে থাকে। ফলে পলিথিনের চাহিদাও অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের চরম আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, বিসিক, কাশিপুর, ভুইঘর, গোগনগর, মুক্তারপুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী কোন ধরণের রাখঢাক ছাড়াই কারখানা দিয়ে পিপিদানা থেকে নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন করছেন এবং তা বাজারজাত করছেন। এসবের সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্ল্যাস্টিক পণ্য উৎপাদনে লাইসেন্স না নিয়েই পলিথিন উৎপাদনে ব্যবহার করছেন কারখানা।
সরেজমিনে শহরের দিগু বাবুর বাজার, কালীর বাজার, নিতাইগঞ্জ পাইকারী বাজারসহ অভিজাত রেস্টুরেন্ট, মুদির দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাতের প্রায় সব দোকানে এবং পুরো জেলার প্রায় সকল দোকানগুলোতেই পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। সহজলভ্য ও ব্যবহারে সুবিধা থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ক্ষতির দিক বিবেচনা না করেই দেদারসে ব্যবহার করছেন পলিথিন ব্যাগ।
শহরের দেওভোগ এলাকার নুরুল হক জানান, পলিথিনের মতো অপচনশীল বস্তুতে পানি নিষ্কাশনের লাইন বন্ধ হয়ে প্রতিবছর বর্ষায় তার এলাকায় জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এ জন্য সরকারি সংস্থার সমালোচনা করে এর কারণ হিসেবে জনসচেতনতার অভাবকেও দায়ী করেন তিনি। যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলা, বিশেষ করে পলিথিনের অতি ব্যবহার হচ্ছে। তবুও এ বিষয়ে প্রশাসনের টনক নড়ছে না বলেও মন্তব্য করেন দিনি।
এদিকে, ব্যবসায়ীরা বলছেন- পলিথিনের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হোক, তারা তা চান না। কিন্তু পলিথিনের মতো সহজলভ্য কোনো পণ্য বাজারে নেই। তাই কাজে লাগাচ্ছেন।
শহরের চেম্বার রোডের ফল বিক্রেতা হানিফ বলেন, ১০০ কাগজের ঠোঙা দুই থেকে ৩০০ টাকায় কিনতে হয়। আর এক কেজি পলিথিন কেনা যায় অনেক কম দামে। পলিথিন কম দামে পাওয়া যায় বলেই তারা ব্যবহার করেন। একই অবস্থা চালের বাজারেও।
অন্যদিকে শহরের দিগু বাবুর বাজারে কথা হলে নুরুল আফসার নামে এক প্রবাসী বলেন, মুরগি কিনেছেন, এখন দোকানদার পলিথিন ধরিয়ে দিলে কি করব ? চারদিকেই তো পলিথিন আর পলিথিন। বন্ধ করার ব্যবস্থা তো দেখি না।
এমন নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানা ও শপিং ব্যাগ উ’পাদন ও প্রকাশ্যে বিক্রির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সব সময়ই উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে আসছে । পরিবেশ অধিদপ্তর যেন এক্ষেত্রে অন্ধত্বের ভূমিকা পালন করছেন।









Discussion about this post