সরকার দেশে নিয়ন্ত্রিত বিচার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। বেছে বেছে বিচার সংগঠিত করছে। যে ঘটনা বা অপরাধের সাথে সরকার দলীয় ব্যক্তিবর্গের সংশ্লিষ্টতা নাই তারা কেবল সে সব বিচারই করে; অপরাধী দলীয় বা সরকার সংশ্লিষ্টদের বিচারে তাদের আগ্রহ নেই, বরং তা অঘোষিত ইন্ডেমনিটিতে বন্ধ করে রাখছে। নয় বছর ধরে ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তদন্ত শেষ হয়ে অভিযোগপত্র তৈরী করে রাখার পরেও তা আদালতে পেশ করা হয় নাই। আইনকে কেবল নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে গিয়ে সরকার গোটা বিচার-ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে।
এভাবেই মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১১১ মাস উপলক্ষে ৮ জুন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোক প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে নিহতের বাবা রফিউর রাব্বি উল্লেখিত মন্তব্য করেছেন । বরাবরের মতো অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
সংগঠনের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব, কবি, সাংবাদিক হালিম আজাদ, সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এড. প্রদীপ ঘোষ বাবু, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদ এর জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা, সাধারণ সম্পাদক গবিন্দ সাহা ও খেলাঘর জেলা সাধারণ সম্পাদক ফারুক মহসীন প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টোপথে সরকার চলতে চলতে এ বিচার-ব্যবস্থার সাথে নির্বাচনী-ব্যবস্থা, মানুষের নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র সবকিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে। সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করেছে। সকল বিরুদ্ধ মতকে দমন করতে যেয়ে দেশে একনায়কতান্ত্রিক কর্তৃত্তবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে; আর তাই ত্বকী হত্যার ঘাতক সনাক্ত হলেও তারা আইনের আওতায় আসে না। তিনি ত্বকী সহ সাগর-রুনী, তনু ও নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, বুলু, মিঠু হত্যার বিচার দাবি করেন।
হালিম আজাদ বলেন, আমরা বার বার বলে এসেছি র্যাবের তথ্য অনুযায়ী আজেমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে, এবং তাকে হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে। কিন্তু উল্টো বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সরকার দলীয় এমপির সংশ্লিষ্টতার কারণে বিচার বন্ধ হয়ে আছে।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে কখনো ঘাতক, খুনীদের পক্ষ নিতে পারেন না। আপনাকে ত্বকী হত্যার বিচার করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এর পর থেকে ত্বকীর হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোকপ্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।









Discussion about this post