নারায়ণগঞ্জ শহরের সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন পৌর সুইপার কলোনী ঘিরে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রকাশ্যেই চরছে মাদক ব্যবসা । সদর মডেল থানা ও টানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সর্বোচ্চ ৫০ গজের মধ্যে মাদক সম্রাট একাধিক মামলার পলাতক আসামী নূর ইসলাম ওরফে শিবা ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে নারায়ণগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের একটি দল।
শনিবার (১৮ জুন ) সকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বে টানবাজার সুপাইর কলোনী এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। নূর ইসলাম ওরফে শিবার ঘরে তল্লাশী অভিযান অভিযান পরিচালনা করলে সেখান থেকে মাদকদ্রব্য ৭০ পুরিয়া হেরোইন ও মাদক বিক্রির ৫৫ হাজার ৫’শ টাকাসহ তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া অপর দু’জন হচ্ছে রফিক মিয়া ও মো. দেলোয়ার হোসেন।
এ ঘটনায় পরিদর্শক মো. আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন এবং অভিযুক্তদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মাদকদ্রব্যের উৎসের সন্ধানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর।
গ্রেপ্তার নূর ইসলাম প্রকাশ শিবা নগরের টানবাজার মেথর পট্টি এলাকার বিজয়ের ছেলে, রফিক মিয়া দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার রশিদ মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া আবুল কাশেমের ছেলে এবং মো. দেলোয়ার হোসেন পশ্চিম দেওভোগ পানির ট্যাংকি এলাকার মৃত লিয়াকত হোসেনের ছেলে।
এছাড়াও একই দিন পরিদর্শক মো. আজিজুল ইসলামের নেৃতত্বে নগরের ৭৩ নং বঙ্গবন্ধু সড়ক জিয়া মার্কেট জননী হোসিয়ারীর সামনে থেকে ৫০ পুড়িয়া গাঁজাসহ টুকু বেগম নামের এক নারী মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে ওই নারী মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে নারী মাদক বিক্রেতা টুকু বেগমের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় মাদক আইনে পৃথক আরো একটি মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে পুলিশ পরিদর্শক মো. আজিজুল ইসলাম জানান, আলোচিত মাদক বিক্রেতা নূর ইসলাম প্রকাশ শিবা একাধিক মাদক মামলার পলাতক আসামী। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তথ্য উপাত্য ও তার অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছিল।
গেল মঙ্গলবার (১৪ জুন) নূর ইসলাম প্রকাশ শিবার বাসায় মাদকদ্রব্য আছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছিল। তার ঘর থেকে ৫ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও প্রশাসনের আগমের সংবাদ পেয়ে সেদিন শিবা পালিয়েছিল।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ২০০৯ সাল থকে এবছর পর্যন্ত নূর ইসলাম প্রকাশ শিবার বিরুদ্ধে ৯টির অধিক মাদক মামলা রেকর্ড হয়েছে। ২০০৯ সালে ২৬ জানুয়ারী র্যাব-১১ একটি দল ৫০ গ্রাম গাঁজাসহ টানবাজার সুইপা কলোনী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। এরপর ২০১০ সালে একই এলাকা থেকে ১ কেজি গাঁজাসহ নারায়ণগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, ২০১২ সালে ১৬ জুলাইল টানবাজার পুলিশ ফাঁড়ি সদস্যরা ইয়াবা ট্যাবলেট, ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল ১৩৪ লিটার চোলাই মদস র্যাব-১১, একই বছর ১৩ সেপ্টেম্বও দেড় কেজি গাঁজা ও মাদক বিক্রির ৮৯ হাজার ৭০ টাকাসহ র্যাব-১১, এ বছর গত ৮ জুন মাদকদ্রব নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর ১’শ ১০ গ্রাম গাঁজাসহ নূর ইসলাম প্রকাশ শিবার সহযোগী মো. দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করলেও সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় নূর ইসলাম প্রকাশ শিবা। গেল ১৪ জুন একই সংস্থা শিবার বসত ঘর তল্লাশী করে ৫ লিটার চোলাই মদ ও ১’ গ্রাম গাঁজা জব্দ করলেও পালিয়েছিল শিবা।
এদিকে শিবা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন পৌর সুইপার কলোনীতে আরো কয়েকজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হেরোইন, গাজা, লিকো ও সেন এন্ড কোং এর মদ বিয়ার ও চোলাই মদ বিক্রি করছে একেবারেই প্রকাশ্যেই ।
কাকডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সুইপার পট্টিতে ধারাবাহিকভাবে সকল ধরনের মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সুইপার পট্টির অপরাধী চক্র । সুইপার পট্টির তিন দিকের সড়কে দাড়িয়ে মাদক বিক্রি ছাড়া কলোনীর অনেক ঘরেই মাদক দেবীদের আপ্যায়নের মাধ্যমে মাদক বিক্রি চলছে পুরোদমে।
আর এমন বিশাল মাদকের আখড়া থেকে প্রতিনিয়তঃ থানা পুলিশের শীর্ষ কর্তা থেকে শুরু করে তদন্ত – অপারেশন, ডিউটিরত দারোগা, টহল পুলিশের কন্সস্টেবল পর্যন্ত নিয়মিত বখড়া দিয়েই চলছে অপরাধ সাম্রাজ্য ।









Discussion about this post