কবে শেষ হবে ২৬ জুন ? তবে কি জেলা প্রশাসন নারায়ণগঞ্জবাসীর সাথে বারবার তামাশা করছে ? অবৈধ পরিবহণ অবৈধ ষ্ট্যান্ড চলছে কি করে ? পরিবহণ সেক্টারে চরম নৈরাজ্যের পরও কেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা একেবারেই চুপ ? ঘোষনা দিয়েও নিশ্চুপ থাকায় প্রমাণ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাদের অনেকেই নাানভাবে ম্যানেজ এবং মেরুদন্ড বিহীন।
খোদ নাসিক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী ৬ মার্চ নগরীর ২নং রেল গেইট এলাকার অসাহায় হয়েই অবৈধ বাস স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রাফিক পুলিশের প্রতি অনুরোধ করেন । এরপর জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ ২৬ জুন থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড ও পরিবহণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে ঘোষনা দিয়ে পিছু হটেন তিনি । তরে কি আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যার্থ নাকি ম্যানেজ ? এমন প্রশ্ন নগরবাসীর
বৃহস্পতিবার সকালে প্রাতঃভ্রমণ শেষে নগরীর চা এর আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী বোস কেবিনে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অনেকেই বলেন, “বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জে একজন ভিভিআইপি ব্যক্তি আসেন । শীতলক্ষা নদী দিয়ে ওই সম্মানিত ভিভিআইপি ব্যাক্তির আগম ও প্রস্থানের জন্য পুরো নগরীকে পরিচ্ছন্ন করে তুলেন আইনশৃংখলা বাহিনী। একই সাথে ফুটপাতের কোন দোকানও বসতে দেয়া হয় নাই । এমন উচ্ছেদের ঘটনায় লাইনম্যানদের অনেকেই হুমরি খেয়ে পরে থানার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, প্রতি মাসে টাকা তো দেই, তাইলে এই ঈদের আগে কেন আমাদের দোকান বন্ধ করলো (?) ! এরপর থানা থেকে জানানো হয়, ভিভিআইপি রাত চলে যাবার পর আবার দোকান খুলতে পারবে । এমন আশাবাস পেয়ে ফিরে আসে হকার নেতারা !“ এমন দৃশ্য দেখে আশ্চর্য় হয়ে অনেকেই বলেছেন, প্রতিদিন যদি ভিভিআইপি নারায়ণগঞ্জে আসতেন তবে ভালোই হতো । স্বস্তি পেতো নগরবাসী ।
শহরে ২৬ জুন থেকে অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান হবে জানিয়ে ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ। ২৩ জুন তালিকা সম্পন্ন করার কথা থাকলেও এখনো লাইসেন্সকৃত পরিবহনের তালিকা প্রস্তুত করেনি নারায়ণগঞ্জের বিআরটিএ বিভাগ।
নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহনের নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করেছে। সড়ক আইন ও সরকারের বিধিমালা উপেক্ষা করে জেলার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহন পরিচালনা করছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। জেলার সড়কে চলাচলকারী বেশিরভাগ যানবাহনের ফিটনেস না থাকলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না এই সকল পরিবহনের বিরুদ্ধে।
যদিও জেলা প্রশাসন অবৈধ পরিহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু কোন অভিযান হয়নি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় আইনের তোয়াক্কা না করে জেলাজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ফিটনেস বিহীন যানবাহন। শুধু তাই নয়, অনেক পরিবহনের রুট পারমিটও নাই। আবার নিজেদের ইচ্ছেমত অবৈধ স্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী-উঠা নামা করাচ্ছে পরিবহন মালিকরা।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) নারায়ণগঞ্জ বিভাগের তথ্যমতে, গত ১৬ জুন জেলা প্রশাসন ও বৈধ পরিবহন মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় এক সপ্তাহের মধ্যে সকল মালিকদের বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে ফিটনেসসহ লাইসেন্সকৃত পরিবহনের তালিকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নগরবাসীর জোড়ালো অভিযোগ, যথাযথ আইনের প্রয়োগ না থাকায় সড়কগুলোতে ফিটনেস বিহীন যানবাহন দেদারসে চলাচল করছে। এতে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা ও যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বাড়ছে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কর্তৃপক্ষের মনিটরিং করার কথা থাকলেও এ ধরনের কার্যক্রম দেখা যায়না বললেই চলে। ফলরূপ, নিত্যদিনের দূর্ঘটনার জন্য এসব ফিটনেস বিহীন যানবাহনসহ লাইসেন্স বিহীন অদক্ষ চালক অনেকাংশেই দায়ী।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে প্রশাসন কিংবা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি না থাকায় জেলার সড়কগুলোতে বেশিরভাগই ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করছে। কোনো কাগজপত্র ছাড়াই ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহন চালাচ্ছে লাইসেন্সবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকরা।
নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংকরোড, চিটাগাংরোড-নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা পুরাতন সড়কে এসব যানবাহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া চাষাড়া-আদমজী-চিটাগাংরোড রুটে দুরুন্ত পরিবহন ও চাষাড়া-মুক্তারপুর রুটে লেগুনা, মদনগঞ্জ-মদনপুর-ঢাকা, আদমজী-ঢাকা, চিটাগাংরোড-ঢাকা রুটে অসংখ্যক অবৈধ বাস, লেগুনা চলছে।
সোনারগাঁও, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী বিভিন্ন পরিবহন চলছে। যার অধিকাংশের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। সড়কে চলাচল করলেও কাগজপত্র বিহীন পরিবহন থেকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে না। আবার এই সকল পরিবহনের যাত্রীরা চাহিদামত ভাড়া দিয়েও কাংখিত সেবা পাচ্ছে না। লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িতে বাধ্য হয়ে চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) নারায়ণগঞ্জ বিভাগের সহকারি পরিচালক সৈয়দ আইনুল এ বিষয়ে বলেন, আমরা পরিবহন কোম্পানির মালিকদের থেকে বৈধ পরিবহনের তথ্য সংগ্রহ করছি। তালিকা এখনো সম্পূর্ন হয়নি।
আর জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এর মাধ্যমে ফিটনেস বিহীন, রুট পারমিট ছাড়া, লাইসেন্স ছাড়া পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের দায়িত্ব বৈধ পরিবহনের তালিকা প্রস্তুতের। তালিকা প্রস্তুত হলে অভিযান করে অবৈধ পরিবহন জব্দ করা হবে। কিন্তু কবে অভিযান পরিচালনা হবে, এটা জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন বলে তিনি জানান।
তবে সড়কে অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু না হওয়ার কারণ জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইসমত আরা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ থেকে বৈধ পরিবহনের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটা দেখে শীগ্রই বিআরটিএ এর প্রধান বিভাগে পাঠাবো।
সেখানে আমাদের প্রেরিত তালিকায় উল্লেখিত পরিবহনের বিস্তারিত তথ্যের সত্যতা যাচাই হবে। এরপর যাচাইকৃত তালিকার উপর ভিত্তি করে আমরা ফিটনেস বিহীন, রুট পারমিট ছাড়া, লাইসেন্স ছাড়া পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুন বিআরটিএ এর নারায়ণগঞ্জ বিভাগের সহকারি পরিচালক অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে বলেন, গত ১২ জুন থেকে আমরা ফিটনেস বিহীন, রুট পারমিট ছাড়া, লাইসেন্স ছাড়া পরিবহন বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বৈধ পরিবহন মালিকদের সাথে বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে সভা হয়েছে।
যেখানে আগামী ২৩ জুনের মধ্যে তাদের লাইসেন্সকৃত পরিবহনের তালিকা দেওয়া কথা বলা হয়েছে। তালিকার বাহিরে তাদের অন্য কোন গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হবে না। কেবল বাস নাহ, এই অভিযানের আওতায় লেগুনা, সিএনজি সহ অন্যান্য পরিবহনও অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। শীগ্রই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই দিন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বৈধ পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা সভায় তিনি এই বিষয়ে বলেন, যেকোন ভালো কাজের জন্য ত্যাগ করতে হয়। নারায়ণগঞ্জে পরিবহনকে সুশ্ঙ্খৃল করতে সকলকে একত্রে চেষ্টা করতে হবে। লোভ একটু কম করতে হবে।
আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে তালিকা দিবেন। রবিবারের (২৬ জুন) মধ্যে যেসব পরিবহনের ফিটনেস ,লাইসেন্স কিংবা রুটপারমিট নেই সেসব গাড়ি নিয়ে ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে পানিতে নিয়ে রাখব। কোন জরিমানা করব না।









Discussion about this post