চাঞ্চল্যকর নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনকে আদালতে উপস্থিত করতে পারবেন না মর্মে আদালতকে অবগত না করায় নারায়ণগঞ্জ জেল সুপারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাবিনা ইয়াসমিনের আদালত।
সেই সঙ্গে জেল সুপারকে শোকজ করা হয়েছে এবং আগামী ৪ আগস্ট সশরীরে উপস্থিত থেকে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে জেল সুপারের বিরুদ্ধে অর্ডারসিট আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাবিনা ইয়াসমিনের আদালত জেল সুপারের দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করে আগামী ৪ আগস্ট পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
আদালত সূত্র বলছে, এদিন সাত খুন মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলায় চারজনের সাক্ষ্য নিয়ে যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ধার্য ছিল। একইসঙ্গে মাদক ও চাঁদাবাজি মামলায় নূর হোসেনসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। সেই লক্ষ্যে রায় প্রস্তুত ছিল এবং সাক্ষীরাও আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন।
কিন্তু নূর হোসেন আদালতে উপস্থিত না থাকায় মামলার কোনো কার্যক্রমই পরিচালনা করা হয়নি। সাক্ষীদের সাক্ষ্য না দিয়েই চলে যেতে হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মো. সালাহ উদ্দীন সুইট গণমাধ্যমকে বলেন, এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি নূর হোসেন। ঢাকা স্পেশাল কোর্টে অন্য মামলায় হাজির থাকার কারণে নারায়ণগঞ্জ আদালতে তাকে উপস্থিত করানো হয়নি। নূর হোসেন আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না কিংবা তাকে আদালতে আনা হবে না এই বিষয়টি আদালতে অবগত না করায় আদালত জেল সুপারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, এতে জেল সুপারকে শোকজ করা হয়েছে এবং আগামী ৮ আগস্ট উপস্থিত হয়ে জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে কেন এই বিষয়টি অবগত করা হলো না। আদালত বলেছেন ‘এটা কী ধরনের আচরণ। এর দায়ভার নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, আজ নূর হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলায় রায় ছিল। আরও দুইটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। মামলায় রায় প্রস্তুত করা হয়েছিল, শুধুমাত্র জেল সুপারের দায়িত্বে অবহেলার কারণে হয়নি। যেহেতু নূর হোসেনকে উপস্থিত করা হয়নি তাই আদালত আগামী ৮ আগস্ট পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। সেইসঙ্গে সেদিন রায় ও সাক্ষীদের উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন বলেন, নূর হোসেনের দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি মামলায় ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে হাজিরা থাকার কারণে নারায়ণগঞ্জ আদালতে তাকে আজ আনা হয়নি। এই বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ আদালতকে অবগত করার কথা ছিল জেল সুপারের। কিন্তু তিনি জানাননি। এটা তার অসৌজন্যমূলক আচরণ। এজন্য আদালত তাকে শোকজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অর্ডার সিট যাবে। কেন আদালতকে অবগত করা হলো না এই মর্মে। আজ পর্যন্ত আদালতকে অবগত করা হয়নি। আদালত নিজে ফোন করার পর তিনি জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নূর হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলায় রায় ছিল। অন্য মামলায় শুনানির জন্য ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও সিলেট থেকে চারজন সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। নূর হোসেনের অনুপস্থিত থাকার কারণে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে পারেননি। কারণ আসামি অনুপস্থিত থাকলে সাক্ষ্য গ্রহণের কোনো আইন নেই। যেহেতু সাক্ষীদের জেরার সুযোগ নেই এর সমস্ত দায়ভার জেল সুপারের। আগামী ৪ আগস্ট স্বশরীরে উপস্থিত থেকে জবাব দেওয়ার জন্য তাকে বলা হয়েছে।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, নূর হোসেন ছাড়া বাকি আসামিদের আদালতে উপস্থিত করা হয়েছিল। উপস্থিত থাকা আসামিদের মধ্যে কয়েকজন জামিনে রয়েছেন।









Discussion about this post