“নারায়ণগঞ্জে নানা অপরাধীদের আস্ফালন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে । কোথায় হচ্ছে না অপরাধ ? আইনশৃংখলা পরিস্থিতি এতোটাই অবনতি ঘটেছে যার কারণে জেলার শীর্ষ অন্যান্য সরকরী কর্মকর্তাদের সাথে জেলা পুলিশের দূরত্বও দৃশ্যমান । পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের প্রবেশের ফটক (গেইট) দেখলেই সহজেই অনুমান করা যায় পুলিশ সুপারের সাথে জেলা ও দায়রা জজ, জেলা সিভিল সার্জন ও গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীদের দূরত্ব কতটা । পুলিশ সুপারের কারণে অতিষ্ঠ হবার পর বাধ্য হয়ে পৃথক গেইট নির্মান করেছেন ডিস্ট্রিক জজ ! আর নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক নিজে যানজটে নাকাল হলেও পুলিশ সুপার জেলার পুলিশদের নিজস্ব বাহিনী হিসেবেই ব্যবহার করে নিজের চলাচল নিবিঘ্ন করেছেন । যা দৃষ্টিকটু । আর এই পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে মাদক ব্যবসা ও যুবক খুনের ঘটনার পরও কি বলা যাবে ? খুব শান্তিতে আছে নারায়ণগঞ্জবাসী ? নারায়ণগঞ্জের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবণতি ঘটলেও কিছু উচ্ছিষ্টভোগী তেলবাজ বেষ্টিত হয়ে পুলিশ সুপার জাহেদুল আলম ফুয়াদ তৃপ্তির ঢেকুর দিচ্ছেন ! এই পুলিশ সুপারের ব্যর্থতার কারণেই আদালত এখন আদেশ দিয়েছেন এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে !”
(এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন প্রবীন আইনজীবী সোমবার সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটের সময় নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর প্রতিবেদেকের সাথে এমন মন্তব্য করেছেন ।)
দীর্ঘদিন যাবৎ সারাদিন রাত প্রকাশ্যে লাইন ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কয়েক গজের মধ্যে মাদক বিক্রি নিয়ে ডিবিসি ও যুগান্তরের সংবাদ নিয়ে কি পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন জানতে চেয়েছে আদালত। ৩১ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাউছার আলমের আদালত ওই আদেশ দেন।
এতে বিচারক বলেন, জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ১০০ গজ দূরে প্রকাশ্য লাইন ধরে মাদক বিক্রি ও ক্রয়ের একটি সংবাদ ডিবিসি নিউজে প্রচার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত নিউজের লিংক ভাইরালের পর বিষয়টি আদালতের নজরে এসেছে। আদালত নিউজটি পর্যবেক্ষণ করেছে। এমতাবস্থায় উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে আদালত মনে করছে। তাছাড়া এ বিষয়ে পর্যক্ষেণ একটি সংবাদও যুগান্তরে প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) নারায়ণগঞ্জেকে নির্দেশ প্রদান করা হেেলা। আগামী ৭ আগস্ট পুলিশ রিপোর্ট প্রাপ্তির দিন ধার্য করা হলো।
সংবাদে বলা হয়, চাঁদমারী সড়কে লাইন ধরে মাদক কেনা বেচা চলছে। অনেকটা টিসিবি লাইনের মতই দাঁড়িয়ে কেনা হয় মাদক। নির্ধারিত মাদকের জন্য নির্ধারিত অংকের টাকা প্রদান করে গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা সহ বিভিন্ন মাদক ক্রয় বিক্রয় চলে প্রকাশ্যেই। অথচ মাত্র একশো মিটার দূরেই অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই এখানে মাদক কেনাবেচা হয়। চাহিদার চাইতে মাদকের জোগান কম থাকায় হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় মাদক কিনতে। প্রকাশিত বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা যায় এমনই চিত্র। এমনকি মাদক কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে তর্কাতর্কিও করতে দেখা যায় মাদক ক্রেতাদের। কে কার আগে মাদক কিনবে এনিয়ে চলে প্রতিযোগীতা। অথচ মাদক নিয়ে প্রশাসন জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিলেও এমন চিত্র এই এলাকার কাছে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই মাদক ব্যবসা। পেশাদার, অপেশাদার সব ধরণের মাদক ক্রেতাদের আনাগোনা চলে এই এলাকায়। ছাত্র, হকার, রিক্সাচালক, বাস হেলপার, চালক, সিএনজি ড্রাইভার কিংবা কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের কেও দেখা যায় মাদক ক্রয় করতে। নানা শ্রেনী পেশার মানুষ এই মাদক ক্রয়ের সাথে যুক্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদক বিক্রেতাদের অন্যতম দলনেতা শরীফ। তার মত এমন আরও বেশ কয়েকজন লিডার রয়েছেন। যাদের আন্ডারে কাজ করে ৭/৮ জন। তারা মাদক সংগ্রহ করে বিভিন্ন পুরিয়া তৈরী করে খুচরা পর্যায়ে মাদক বিক্রি করে চলেন। মাঝে মাঝে, পুলিশ, র্যাব, ডিবি বা নারকোটিকস হানা দিলে সরে যান তারা। তারপর পুনরায় আগের স্থানে ফিরে আসেন। পুলিশ চলে গেলেই আবারও রমরমা হয়ে উঠে। প্রকাশ্যেই চলে এভাবে মাদক কেনাবেচা।
এক মাদক সেবী বলেন, মাদক বন্ধ করে দিলে আমরা বেঁচে যাই। এখন নেশায় পরিণত হইসে মাদক। সামনে পাই তাই খাই। না থাকলে খাইতাম না। আমাগো ফ্যামিলি শেষ। ঘর থেকে আমারে বাইর কইরা দিসে এই মাদকের জন্য।
আরেক মাদক সেবী বলেন, বোতল বিক্রি করে দেড়শো টাকা কামাইসি। ওইটা দিয়েই মাদক কিনে খাইতাসি।
স্থানীয় এক সিনিয়র সিটিজেন বলেন, এখান থেকে পুলিশ, ডিবি, র্যাব আসে। তারপর কেউ কেউ টাকা নিয়ে চলে যায়। কাউরে ধরে না। অথচ তারা চাইলে ২৪ ঘণ্টায় এঁদের সব নির্মূল করে দিতে পারে। তাদের ইচ্ছা না থাকার কারনেই চলে এখানে মাদক ব্যবসা।
শুধু তাই নয়, নারায়ণগঞ্জ আদমজী সড়কেও আরেকটি সি-সিন্ডিকেট প্রতিনিয়ত ইয়াবার ব্যবসা করে প্রকাশ্যে। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে কেউ কেউ পালাতে চাইলেও কয়েকজন আবার হুমকি দিতে তেড়ে আসে গণমাধ্যমকর্মীদের দিকে।
তবে এসব ঘটনা প্রকাশ্যে চললেও পুলিশের দাবী এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তাদের মতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণেই আছে।









Discussion about this post