নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার সাড়ে ১১৪ মাস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ( ৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কস্থ আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি অিনুষ্ঠিত হয়েছে।
ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, বিচারহীনতা ও কর্তৃত্ববাদী শাসন দেশকে আজ ভয়াবহ পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে। বিচারব্যবস্থা, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র সবকিছুই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নাই। মৃত্যু হলে বিচার হয় না। ঘাতক চিহ্নিত হলেও সাড়ে নয় বছরে ত্বকী হত্যার বিচার হয় না। শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, বিচারহীনতাকে সরকার প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। স্বাধীনতার পূর্বেও বিচারহীনতার এমনি নজির ছিল না। জনগণকে নিরাপত্তা দেয়ার শপথ নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করে, তারা আজ পদে পদে শপথ ভঙ্গ করে চলেছে, সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে।
রফিউর রাব্বি আরো বলেন, শামীম ওসমান তার ভাড়া করা সাংবাদিক ও আইনজীবিদের মাঠে নামিয়ে ত্বকী হত্যা নিয়ে ‘জজমিয়া’ নাটক সাজাতে চাচ্ছেন। কিন্তু ত্বকী হত্যার যারা তদন্ত করেছেন, তারা এখনো জীবিত আছেন। পুলিশ-র্যাবের কেউই মারা যান নাই। সুতরাং এ সব নাটক করে লাভ হবে না। তিনি ত্বকী সহ সাগর-রুনী, তনু ও নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চন, বুলু, মিঠু সহ সকল হত্যার বিচার দাবি করেন। চার বছর আগে নিখোঁজ আড়াই বছরের শিশু সাদমান সাকির উদ্ধার দাবি করেন।
সাংবাদিক হালিম আজাদ বলেন, সাড়ে আট বছর আগে ত্বকী হত্যার তদন্ত শেষ হয়ে অভিযোগপত্র তৈরী করে রাখার পরেও তা আদালতে পেশ করা হয় নাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এ হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সরকার মুখে যাই বলুক না কেন এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা যেহেতু সরকার দলীয়, সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আছে, সে কারণেই এ বিচার হচ্ছে না।
অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, শামীম ওসমানের নির্দেশে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলেই ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ হয়ে আছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এ হত্যার বিচার শুরু করার নির্দেশ দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, শামীম ওসমান আপনি যত কারসাজিই করেন ত্বকীকে হত্যার নির্দেশ দেয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। বিচার আপনার হবেই।
সংগঠনের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এড. প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনি সুপান্থ, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদ জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সাহা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে।









Discussion about this post