আর কত লাশ পড়বে শীতলক্ষ্যায় ? কত আহাজারি হবে লক্ষ্যাপাড়ে ? কবেই বা নিয়ন্ত্রিত চলাচল নিশ্চিত হবে নৌযানগুলোর- এমন প্রশ্নের পাল্লা যে ক্রমশ ভারি হচ্ছে ! এরপরও প্রতিটি ঘটনা কেবল ‘দুর্ঘটনা’ নামেই পাড় পাচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। এই ‘দুর্ঘটনা’ প্রতিরোধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন কী দায়িত্বশীলরা? সেই প্রশ্ন কখনো উঠে, কখনো আবার তলিয়ে যায় ঘটনাবহুল ওই ‘দুর্ঘটনাগুলোর’ মতই।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদী যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। দিন রাত দাপিয়ে বেড়ানো বাল্কহেড ও কার্গো জাহাজগুলো শীতলক্ষ্যায় যমদূতে রূপ নিয়েছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে বেড়ানোর কারণে একের পর এক প্রাণহানির সাক্ষী হয়েছে শীতলক্ষ্যা।
দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যু মিছিল। তা প্রতিরোধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তাদের। বেপরোয়া গতিতে চলাচল ও বেপরোয়া পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও তা প্রয়োগ করতে দেখা যায় না।
সবশেষ গত ১৪ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর নবীগঞ্জ ঘাট এলাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা ডুবিতে শাওন, শাহ পরান ও রিফাত নামে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়। তারা প্রত্যেকেই শহরের বার একাডেমির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ মেলায় ঘুরে নৌকাযোগে ফিরছিল তারা। এ সময় দ্রুতগতির একটি বড় জাহাজ পাশ দিয়ে গেলে জাহাজের ঢেউয়ে দুটো নৌকার ধাক্কা লাগে। এতে একটি নৌকা ডুবে যায়।
জানা গেছে, রাতের আঁধারে নির্দিষ্ট পরিমাণ গতিতে কেবল লাইটার জাহাজ চলাচলের অনুমতি থাকলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাল্কহেড চলাচলে। তবে, সেই নিষেধাজ্ঞার বালাই নেই শীতলক্ষ্যায়। রাতের আঁধারে ব্যস্ততম এই নৌরুটে দাপিয়ে বেরায় বাল্কহেড ও কার্গো জাহাজ।
অভিযোগ রয়েছে, শীতলক্ষ্যায় যারা শৃঙ্খলা ফেরাবেন, সেই তারাই হয়ে উঠেন ‘উশৃঙ্খল!’ অর্থাৎ রাতের আঁধারে বাল্কহেড থেকে চাঁদা উত্তোলনের মতো অভিযোগও উঠেছিলো ইতিপূর্বে দায়িত্ব পালন করা কিছু অসাধু নৌ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে । তাই শীতলক্ষ্যায় একের পর এক বেদনা বিধুর অধ্যায় রচিত হলেও মিলছে না প্রতিকার- এমন অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২০ মার্চ দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চরসৈয়দপুর কয়লাঘাটের অদূরে আলামিন নগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে মুন্সীগঞ্জগামী এম এল আশরাফ উদ্দিন নামক যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয় এমভি রূপসী-৯ নামক সিটি গ্রুপের একটি কার্গো জাহাজ। ওই ঘটনায় ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
গত বছরের ৪ এপ্রিলও নারায়ণগঞ্জের চরসৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীতে নির্মাণাধীন সেতুর সামনে দ্রুতগতির কার্গো জাহাজের ধাক্কায় মুন্সীগঞ্জগামী একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবির ঘটনায় ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।
এসব ঘটনায় মামলা হলেও পাড় পেয়ে যাচ্ছেন ঘাতক জাহাজ ও বাল্কহেডের প্রভাবশালী মালিকরা । প্রতিটি দুর্ঘটনার পর কর্তাব্যক্তিরা কিছুটা তৎপরতা দেখালেও কিছুদিন পর তা রহস্যজনক কারণে মিইয়ে যায়।
এ দিকে নদী পাড়াপাড়ে অসংখ্য দুর্ঘটনার সাক্ষী এই শীতলক্ষ্যা। নদীতে নৌ দুর্ঘটনা ও হতাহতের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট নৌপুলিশ কর্মকর্তার কাছে। তাছাড়া লাশের মিছিল দীর্ঘ হলেও দুর্ঘটনা রোধে শীতলক্ষ্যায় বাল্কহেড ও কার্গো চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরানো যায়নি বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
অন্য দিকে রাতের আঁধারে লাইটার জাহাজ চলাচলের অনুমতি থাকলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাল্কহেড চলাচলে। সেই নিষেধাজ্ঞার বালাই নেই শীতলক্ষ্যায়। রাতের আঁধারে ব্যস্ততম এই নৌরুটে বাল্কহেড চলাচলের অভিযোগ পাওয়া যায় মাঝি-মাল্লাদের কাছ থেকে।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফোরকান বলেন, রাতের বেলায় লাইটার জাহাজ চলাচলের নির্দেশনা আছে। তবে রাতে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ। রাতে কোন বাল্কহেড চলে না। আর জাহাজ কতটুকু গতিসীমায় চলবে, তার কোনো নির্দিষ্ট হিসেব নেই। তবে নিরাপদ গতিতে জাহাজ চলাচলের জন্য বলা আছে। এই বিষয়গুলো দেখার জন্য নদীতে আমাদের টহল টিম সর্বদা কাজ করে থাকে।










Discussion about this post