মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুসহ সারা দেশে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়ে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি ‘ঘাতকদের প্রশাসন নিরাপত্তা দেয়’ বলে মন্তব্য করেছেন । ত্বকীর পিতা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, ‘গণমানুষের আস্থা হারিয়ে দুর্বৃত্ত আর পেশী শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়েছে সরকার। আর সে জন্যই ত্বকীর ঘাতকরা আইনের আওতায় আসে না। প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা দেয়।’
শনিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১২৪ মাস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি। প্রতিমাসে ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
রফিউর রাব্বি বলেন, সরকার তদের শাসন দুঃশাসন গণবিরোধী সকল কর্মকান্ডকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে জাহির করছে। নাগরিকের বিচার পাওয়ার অধিকার, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার, ভোট দেয়ার অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার হরণকে তাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে প্রচার করছে। সরকার দুর্বৃৃত্ত রক্ষার রাজনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। একেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে বলে মানুষকে ধোকা দিয়ে চলেছে। তারা রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে তা তারা ভূলুণ্ঠিত করেছে। বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছে অথচ স্বাধীন দেশে বৈষম্য আরও বেড়েছে।
তিনি ত্বকী সহ সাগর-রুনী, তনু ও নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, মিঠু ও ভুলু হত্যার বিচার দাবি করেন।
দীর্ঘ দশ বছর পেরিয়ে গেলেও ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছিলেন কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে আপনি সব জানেন। তা হলে কেন বিচারটা করছেন না?’
যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি বিচারটা করেন। নয়তো এই বিচার বন্ধ করে রাখার অপরাধে আপনাকেও একদিন বিচারের আওতায় আসতে হবে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ইতিহাসে বহু লৌহমানব ধিকৃত হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু, সিপিবি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি প্রবীর সরকার।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। এর দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তাঁরা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবেন। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।









Discussion about this post