ইরাকে যাওয়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। দুই বছর তদন্তের পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি।
গ্রেপ্তার আটজন হলেন— আলী হোসেন (৪৯), মো. শামীম (২৫), শিরিন সুলতানা (৩৫), মোহাম্মদ ঘরামী (৫১), নবিউল ঘরামী (২৪), শাহিদা বেগম (৫২), সাহনাজ আক্তার লিপি (৩৮) ও মো. আকবর সরদার (৫৫)। বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কুদরত ই খুদা।
সোমবার ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওই আটজনকে আদালতে তোলার পর তাদের মধ্যে ছয় জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মোসলেম মোল্লা (৩০) নামের এক যুবকের মায়ের করা মামলার তদন্তে নেমে এই চক্রের সন্ধান পান পিবিআই কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, নবাবগঞ্জের দড়িকান্দা গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে মোসলেম ২০১৬ সালে কাজের খোঁজে ইরাকে যান। সেখানে ২০২১ সালে সেলিম মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আলাপ পরিচয়ের পর মোসলেমকে আরও ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে একটি চক্রের হাতে তুলে দেন সেলিম। আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর এবং সাব্বির ওই চক্রের সদস্য। তারা মোসলেমকে অন্য জায়গায় নিয়ে আটকে রাখে এবং নির্যাতন চালায়। পরে নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। ছেলেকে বাঁচাতে ১২টি বিকাশ নাম্বরে ২৬ বারে মোট ছয় লাখ টাকা পাঠান। কিন্তু টাকা পাওয়ার পরও চক্রটি আরও তিন লাখ টাকা দাবি করে। এই টাকা ভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকান থেকে নিজেদের পারসোনাল বিকাশ নম্বরে নিয়ে ক্যাশ আউট করে নেয় চক্রের সদস্যরা। পরে ২০২১ সালের ১ মার্চ নবাবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন খতেজা বেগম। মামলাটি পরে পিবিআইয়ের হাতে যায়।
পিবিআই কর্মকর্তা কুদরত ই খুদা জানান, যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা ইরাকে থাকা চক্রটির হোতা শাহনেওয়াজের স্ত্রী, স্ত্রীর ভাই-বোন ও স্বজন।
তিনি আরও জানান, শাহনেওয়াজ ওই অপহরণ চক্রের নেতা। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। মুক্তিপণের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর তথ্যও তদন্তে মিলেছে। দুবছর ধরে তদন্ত করে এ চক্রের সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে জানিয়েছেন কুদরত ই খুদা। ইরাকে থাকা শাহওনেওয়াজ ও দলের লোকজককে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।









Discussion about this post