মঙ্গলবার ভোররাত তিনটা । কেউ কোথাও নাই। শুনশান নিরবতা। নাসিক নগর ভবন, ফায়ার সাভিস কার্যালয়, বিদ্যুৎ কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ দুটি হাসপাতাল, জেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয় ঘিরে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের মন্ডলপাড়ার চিত্র এটি। দৃশ্যতঃ এটি একটি শান্তির নগরী হিসেবে সাধারণ চোখে দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে এই মন্ডলপাড়া যেন নগরীর জন্য এক আতংকের নাম। একটি ক্রাইমজোন হিসেবেই নগরবাসীর কাছে পরিচিত। আর এই বঙ্গবন্ধু সড়কেই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ডিউটি করেন পুলিশ ।
এমন শুনশান নিরবতার মধ্যেই বুধবার (৩০ আগষ্ট) ভোরের দিগুবাবুর বাজারে কাঁচামাল পাইকারী বিক্রি করতে মুন্সীগঞ্জ জেলার কাটাখালী থেকে অটো রিকশায় শবজি বোঝাই করে কাঁচামাল ব্যবসায়ী নিজামউদ্দিন (৫৫) সেই শুনশান নিরবতাখ্যাত ক্রাইমজোন মন্ডলপাড়া ব্রীজের উপর পৌঁছলে ৫/৬ জনের একটি দল তাদের হাতে থাকা ছুরি, রামদা, চাকু, লম্বা তলোয়ার নিয়ে হামলা করে । এ সময় কাঁচামাল ব্যবসায়ী নিজামউদ্দিনের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ওই হামলাকারী ডাকাত দল কুপিয়ে গুরুতর আহত করে নিজাম উদ্দিনকে। রক্তাক্ত নিজামউদ্দিনের চিৎকারে দূর থেকে দারোয়ানসহ লোকজন এগিয়ে আসলে দ্রুত হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে নিজেই নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিযা) হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসলে চিকিৎসক আহত নিজাম উদ্দিনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এ সময় অনেকেই বলেন, প্রায় প্রতি রাতেই এই শুনশান নিরবতার মধ্যেই মন্ডলপাড়া ও জিমখানা বস্তির ৩০/৪০ জনের এই সন্ত্রাসী চক্র এমন ছিনতাই, ডাকাতি, লুট, চুরি, মাদক ব্যবসা, জুয়াসহ সকল ধরণের অপরাধ ঘটিয়ে অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেই যাচ্ছে। আর এই আস্তায় পুলিশের স্টিকার যুক্ত কয়েকটি মটর সাইকেল প্রায়ই এই অপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অপরাধীদের সহায়তা করে যাচ্ছে । নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসির ঘনিস্ট ব্যাচম্যান পরিচয় দিয়ে পুলিশের কোন কোন কর্মকর্তা তদন্তের নাম করে মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, জুয়ারীদের সাথে সখ্যতা করে সকল ধরণের অপরাধীদের অপরাধ করতে উৎসাহিত করেই যাচ্ছে । আর টহলরত পুলিশ ডিউটিকালীন সময়ে পুলিশের গাড়িতেই সরকারী অস্ত্র খোলামেলা রেখে ঘুমিয়ে থাকার চিত্র কার না চোখে পরে ? নগরবাসীর চোখে এমন ঘুমের চিত্র চোখে পরলেও উর্ধতন কর্মকর্তাদের কোন তদারকি না থাকায় এমন অপরাধ প্রতিনিয়তঃই ঘটছে নগরীতে। গত ১৪ মার্চ শহরের এই মন্ডলপাড়াতেই ৫ নং মাছ ঘাটের ইজারাদারের ক্যাশিয়ারকে কুপিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় দূর্বৃত্তরা । এমন অসংখ্য ঘটনার পরও ওসির ব্যাচম্যান ও ওসির ক্যাশিয়ার পরিচয়ে পুলিশ সদস্যদের অসাধু কেউ কেউ অপরাধীদের সাথে সখ্যতা রেখেই চলেছে ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে মন্ডলপাড়ার একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বুধবার ভোরে প্রাতঃভ্রমণ করতে এসে এমন হামলার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই মন্ডলপাড়ায় মাদকের আখড়া। কোন কোন বিশাল বিশাল জনপ্রতিনিধিগণের কাছে এই মন্ডলপাড়া থেকে মাদক সরবরাহ করা হয়ে থাকে প্রতিদিন । বিশাল বিশাল নেতা যখন এই আস্তানা থেকে মাদক নিয়ে তা গ্রহণ করেন তাইলে এই অপরাধীদের আর ঠেকাবে কে ? যে নগরীতে নেতাদের কেউ কেউ এই আস্তানা থেইক্কা মাদক নিয়া খায়, আর এই নগরীতে পুলিশ প্রতিরাতেই একযোগে সকলেই ঘুমায় সেই নগরীতে ছিনতাইকারীরা কোপাইবো এইটা তো স্বাভিাবিক !









Discussion about this post