নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ তিতাস এখনো পর্যন্ত তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে বলে তেমন কোন খবর এখনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় নাই। গত তিন বছরে শুধু নারায়ণগঞ্জে তিতাস গ্যাসের বিস্ফোরণে ২০৩ টি ঘটনায় অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটলেও কেউ খোজ রাখে নাই ওই অসহায় পরিবারগুলির কি অবস্থায় আছে।
অথচ প্রতি মাসের প্রথম দিকে কিংবা মাসের শেষে সরকারী আদেশমতে তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা (টার্গেট ফিলাপ) দেখানোর জন্য নানাভাবে নাটক নির্লজ্জের মতো বিশেষ পেশার দালালদের মাধ্যমে “ক্যামেরা রুলিং কাটিং শুরু“ নামক নাটক মঞ্চায়ন করেই যাচ্ছে অসাধু কর্মকর্তারা। আর দূর্ণীতি দমন করতে দূদক এর ভূমিকা নিয়ে চরমভাবে তীব্র নগ্ন ভাষায় মন্তব্য করছে নগরবাসী।
এমন গ্যাস বিস্ফোরণ আর যাতে না ঘটে কিংবা এমন মর্মান্তিক ঘটনা যাতে নিয়ন্ত্রণে আনা হয় সেই লক্ষ্যেও কোন বৈজ্ঞানিক কর্মপন্থাও গ্রহণ করা হয় নাই। এমন অসংখ্য ঘটনা কেন হচ্ছে তার জন্য দেশের প্রথম সারির প্রথম গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো এবার সম্পাদকীয় লিখেছেন তাদের পত্রিকায় । সেই সম্পাদকীয় তে উঠে এসেছে নারায়ণগঞ্জের গ্যাস বিস্ফোরণের নির্মমতার সামান্য তথ্য।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি পাঁচতলা ভবনের চারতলায় বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন তিনজন। জীবনশঙ্কায় আছেন একজন। আরও কয়েকজন আহত। খবর বলছে, গত শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে এ বিস্ফোরণ ঘটে। দগ্ধ সবাই ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটে। বদ্ধ কক্ষে গ্যাস জমে ছিল। বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে পরে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাজাহান মিয়া বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, রান্নাঘরে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ওই ভবনে গ্যাস সিলিন্ডার ও তিতাস গ্যাসের সংযোগ দুই-ই ছিল। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে বিস্ফোরণে ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা উড়ে গেছে।
এই লেখার সময়ই খবর আসে, রূপগঞ্জের একটি বাসায় গ্যাসের পাইপলাইন থেকে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা এক নারী। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে তিনি এখন চিকিৎসাধীন।
আড়াইহাজার বা রূপগঞ্জের এই বিস্ফোরণের ঠিক দুই মাস আগে রূপগঞ্জ ও দেওভোগে গ্যাসের সংযোগ লাইন থেকে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের পাইপলাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত এবং এ তালিকা দীর্ঘ। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় গত তিন বছরে গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের সংখ্যা ২০৩।
নিশ্চয়ই মনে আছে, এর আগে নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণে ২৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বিস্ফোরণের জন্য গ্যাস বিতরণ সংস্থা তিতাস, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসির কর্মী ও মসজিদ কমিটির অবহেলাকে দায়ী করে।
মসজিদ কমিটি অবৈধ বিদ্যুৎ–সংযোগ নিয়েছিল। আর মসজিদের পাশে পরিত্যক্ত গ্যাসলাইনে ছিদ্র ছিল। জানা যায়, এই ছিদ্র থেকেই গ্যাস বের হচ্ছিল। অথচ তিতাসের এই লাইন ছিল পরিত্যক্ত। সেখান থেকে যে ক্রমাগত গ্যাস বেরিয়ে যাচ্ছিল, সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের জানা ছিল না। ফলে হতাহতের সংখ্যা ২৪–এ দাঁড়ায়।
আমরা জানি, প্রতিটি বিস্ফোরণের পরই ফায়ার সার্ভিস একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে জানানোর পরও কেন যেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ অবশ্য আমাদের জাতিগত সমস্যা। ঢাকাতেও বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয়েছে; তবে কমিটির সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়েছে—এমন খবর খুব কমই দেখা গেছে।
আমরা চাই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সিটি করপোরেশনে কেন বারবার গ্যাসের পাইপলাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা হোক। তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য জনগণের কাছে ঘটা করে প্রকাশ করা হোক। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এই যে এত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তাদের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পরিবারগুলোর পুনর্বাসন জরুরি। এসব কথা শোনার মানুষ কি আছে ?









Discussion about this post