‘আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।’ গেলো বছর ২৬ মে মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশ দেয়ার পর তোলপাড়ের সৃষ্টি হয় নারায়ণগঞ্জজুড়ে । এমন আদেশের পর্ব থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জনের তখন দায়িত্ব পালন করেন ডাঃ এ এম এফ মুশিউর রহমান। নারায়ণগঞ্জের সকল অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী আর দালালচক্র নানাভাবে এই মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসা ল্যাব নামের ক্লিনিকসহ নারায়ণগঞ্জে প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ প্রতিষ্ঠানের দালালরা হুমড়ি খেয়ে পরেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দুইজন উচ্ছিষ্ঠ আদায়কারী কর্মচারীর কাছে।
এই দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস করেন না খোদ কর্মকর্তাদের কেউ ই । গত বছর নারীসহ নানা কেলেংকারীতে জড়িয়ে পরেন মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসা ল্যাব নামের ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ । পাশ্ববর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জে একই নামে এমন একটি প্রতিষ্ঠান কে ঘিরে নানা সমালোচনার ঝড়ে উঠে। এতো সমালোচনার পর অবৈধ এই ক্লিনিকের নানা অপকর্ম ও বিতর্ক সৃস্টি হওয়ায় গত বছর গণমাধ্যমে অসংখ্য সংবাদ প্রচার হয় । এমন ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই সকল গণমাধ্যমকে নানা ভাবে এবং খোদ সিভিল সার্জন ডাঃ এ এম এফ মুশিউর রহমান কে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া থেকে কোন এক নেতা তদ্বির চালিয়ে মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসা ল্যাব নামের ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ।
এমন ঘটনা ছাড়াও নারায়ণঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দুই জন চিহ্নিত কর্মচারী বছরের পর বছর যাবৎ জেলার প্রায় সাড়ে তিনশত ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারের মধ্যে প্রায় ২ শতাধিক অবৈধ। যা পরিচালিত হচ্ছে সিভিল সার্জনের নাম দিয়ে চাঁদা আদায়কারী দুই কর্মকারীর আঙ্গুলের ইশারায়।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের দুই কর্মচারীর আস্কারায় মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসা ল্যাব নামের ক্লিনিকে ডাক্তার ও নার্স ছাড়াই চলে অপারেশ ও চিকিৎসা। এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের । ডাক্তার মাধবী ও মুন্সীগঞ্জের আক্কাস নামের এক ব্যাক্তিসহ দুই জনের পার্টনারে এই ক্লিনিকটি পরিচালিত হলেও ডাক্তার মাধবী তার বাড়ির কাজের মেয়েদের কে বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে নিজেই অপারেশন টেবিলে বসে থেকে অপারশেন করান। অপরদিকে আক্কাসের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে।

এতো অভিযোগের এরও দুঃসাহসিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসা ল্যাব নামের ক্লিনিক।
এবার নারায়ণগঞ্জ শহরের মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসা ল্যাব নামের ক্লিনিকে ভূল এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। ইঁদুর কামড় দিলে পায়ে অপারেশন করতে গিয়ে ওই নারীর মৃত্যুর হয়, তবে স্বজনদের অভিযোগ চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ডন চেম্বার এলাকার ওই হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া মশিরন আক্তার মরিয়ম (৪৮) জামালপুরের আমির বেপারীর মেয়ে। তিনি ফতুল্লার জেলা পরিষদের পাশ্ববর্তী সুগন্ধা মসজিদ এলাকায় ছেলে সঙ্গে থাকতেন।
রোগীর স্বজনরা জানান, কিছুদিন আগে মরিয়ম নামের ওই নারীর পায়ে ইঁদুর কামড় দিলে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে সংক্রমণ থেকে তার পায়ে ঘাঁ হয়ে গেলে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতাল থেকে বদলী হওয়া আবাসিক সার্জন মাহামুদুল হাসান মিঠুর পরার্মশ নেন। বুধবার রাতে মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসা ল্যাবে ওই নারীর পায়ে অপারেশন (অস্ত্রপ্রচার) করা হয়।
এ সময় রোগী মশিরন আক্তার মরিয়ম (৪৮) অজ্ঞান করার জন্য নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতাল মেডিকেল অফিসার কামরুল আশরাফ বাপ্পি । যিনি অ্যানেস্থেসিয়ার বিষয়ে কোন সনদ না থাকার পরও এই অপারেশনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন কামরুল আশরাফ বাপ্পি । মশিরন আক্তার মরিয়ম (৪৮) অপারেশন টেবিলে ভূল চিকিসায় মৃত্যু বরণ করার সাথে সাথেই পালিয়ে যায় মাহামুদুল হাসান মিঠু ও কামরুল আশরাফ বাপ্পি ।
‘এমন অসংখ্য ঘটনা এড়াতে একদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয় অপরদিকে স্থানীয় একজন কাউন্সিলরের ভাগিনাকে এই ক্লিনিকে চাকরী দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। যাকে দিয়ে ক্ষমতার প্রভাব দেখতে লোকবল নিয়োগ করা হয় রাতেই। আর পুলিশ বাহিনীকে ম্যানেজ করা তো ওয়ান টু বিষয় বলেও মন্তব্য করেন এই ক্লিনিকের একজন কর্মচারী।’
অপারেশন শেষে পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বলেন্সে তুলে রাখে হাসপাতালের পরিচালনার দায়েত্বে থাকা ম্যানেজার রাশেদুল ও তার স্ত্রী নদী আক্তার। পরে রোগীর স্বজনরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানায় অনেকে আগেই মারা গেছে মরিয়ম।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, অপারেশনের পর চিকিৎসক না বুঝেই ইনজেকশন দেয়ায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠে। এই ভুল চিকিৎসার কারণেই মৃত্যু হয় মরিয়মের। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে রাখে মেডিস্টার নামের ওই ক্লিনিকের লোকজন।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে দ্রুত ছুটে যান সদর থানা পুলিশ। মধ্যরাত থেকে বেসরকারি ওই হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলে। পরে বুধবার ভোরে মৃতদেহ নিয়ে চলে মরিয়মের স্বজনরা । ভোররাত পর্যন্ত সকরকে বাইরে রেখে পুলিশ – রোগীর স্বজন এবং রাসেদুল মিলিত হয়ে নানা ভয় ভীতি দেখিয়ে চার লাখ টাকায় রফাদফা হয় এই হত্যাকান্ডের।
এ সময় রোগীর স্বজনরা বলেন, “আমাদের লোক মারা গেছে আর ফেরৎ পামু না। পুলিশ আর এই ক্লিনিকের এক মহিলা কইলো মামলা করলে লাশ কাটাকাটি করবো অনেক ঝামেলা । আর মামলা করলে কি ডাক্তারেরা জেল খাটানো যাইবো নাকি ? ডাক্তাররা হয়রানী হইবো, এখন আপনারা ঠিক করেন কি করবেন ? চার লাখ টাকা দিয়া তার পরিবারের জন্য কিছু একটা করতে পারবেন। মামলা করলে তো এক টাকাও পাইবেন না। তাই আর মামলা না কইরা লাশ নিয়া যাইতেছে ।”
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা গণমাধ্যমকে জানান, নিহত রোগীর পরিবার থানায় কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে পুলিশ আইনী ব্যবস্থা নেবে। আর হাসপাতালে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে।
এমন মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসা ল্যাব নামক ক্লিনিকের পার্টনার (অংশিদার) আক্কাস আলী মুঠোফোনে বলেন, আমি এই ঘটনা জানি না।









Discussion about this post