পেটের দায়ে একসময় ছিচকে চুরি করতো চোরা গেসু । একই সাথে সেই গেসুর প্রয়াত পিতা চুরি করে বারবার ধরা পরার পর গাছের সাথে বেধেও রাখে এলাকাবাসী। সেই গাছের সাথে বেধে রাখা জন্মদাতা বাবার মুখমণ্ডলে লাথি দিয়ে দাত ফেলে দেয় ডাকাত গেসু । সেই চোরা গেসু পরবর্তীতে ডাকাতি করে অসংখ্য মামলার আসামী হয়ে জেল খাটে । পেটের দায়ে সেই গেসুর বোন নুরজাহান নিষিদ্ধ পল্লী টানবাজারে অবস্থান নিয়ে দীর্ঘ একযুগ অতিবাহিত করে।
এরপর বিএনপি সরকারের শাসনামলের ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে তৎকালীন শাসক দলের নেতা বিশাল প্রভাবশালী জাকির খানের বড় ভাইকে নিজ বাড়ি ফতুল্লা থানার কাশিপুরে বিভিন্ন উপঠৌকন দিয়ে তুষ্ট করে গিয়াস ওরফে ডাকাত গেসু সকল ধরনের অপরাধ করে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যায় ।
আর তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা সাইফ উল্লাহ বাদলকে মদ নারীসহ নানাভাবে শেল্টার দিয়ে এক নারীর সাথে কথিত বিয়ে দিয়ে আঁতাত বজায় রাখে । পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে এবার সাইফ উল্লাহ বাদলের বিগত দিনের কুকর্মের ঘটনা কে পুঁজি করে ফতুল্লার কাশিপুরে অলিখিত সাম্রাজ্য গড়ে তুলে গেসু ও তার পরিবার । ডাকাত গেসু ও তার পুত্রদের কেউ কেউ সকল ধরনের অপরাধ সাম্রাজ্য এখনো পরিচালনা করে যাচ্ছে বীরদর্পে । এমন অসংখ্য অপরাধের ধারাবাহিকতায় এবার সেই গিয়াস ওরফে ডাকাত গেসু থানা আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পুরো জেলায় প্রভাব বিস্তার করেই যাচ্ছে ।
এমন অপরাধীরা বর্তমান শাসক দলের নেতা শামীম ওসমান, তার ভাই সেলিম ওসমান, ভাতিজা আজমীর ওসমানসহ সকল নেতাদের নাম ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছে হোন্ডা বাহিনী। কোনোভাবেই হোন্ডা বাহিনীকে থামানো যাচ্ছে না। একের পর অপকর্ম করেই বেড়াচ্ছেন তারা।
শহরের বহুল আলোচিত এই হোন্ডাবাহিনীহ বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বিভিন্ন সভা সমাবেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে এলেও দমানো যাচ্ছে না এই চিহ্নিত বাহিনী কে।
তাদের একের পর এক ‘হুঁশিয়ারি’, ‘জেহাদ’ কিংবা নতুন নতুন পরিভাষা ব্যবহার করে দেওয়া ঘোষণা সবকিছুই যেন শুধু বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। এখনই তাদের এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন মনে করছে নগরবাসী।
স্থানীয় সূত্র বলছে, শহরে প্রায়শই দাপিয়ে বেড়ায় অর্ধশতের অধিক মোটরসাইকেল। তবে যেসব এলাকায় প্রয়োজন দাপট খাটানো, সেখানেই যৌথ মহড়া চলে। কখনও সেটা হয় কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের সামনে। দলবল নিয়ে বহরে সাধারণত একজন মোটরসাইকেল চালায়। পেছনে থাকে অন্য একজন। এখন মোটরসাইকেল বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে প্রাইভেটকারও। সবশেষ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত হোন্ডা বাহিনীর মূল নেতৃত্বদানকারী পিজা শামীমের বিরুদ্ধে আবারও অন্যের সম্পত্তি ও ফ্যাক্টরি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এবারও পিজা শামীম তার বাহিনী নিয়ে দিনে দুপুরে অন্যের জমির ওপর দেয়াল নির্মাণ ফ্যাক্টরির মালামাল লুট করেছেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা ৯৯৯ ফোন করেও কোনো প্রতিকার পাননি।
গত ২২ অক্টোবর দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ফতুল্লার বিসিক শাসনগাঁওয়ের দেওয়ান বাড়ি এলাকার মো. ইমরান দেওয়ান এই অভিযোগ করেন। মো. ইমরান দেওয়ান অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতের বেলা আমার নিজ বাড়িতে ১ কোটি টাকা চাঁদা চাইতে এসেছিলো কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী। যদি চাঁদা না দেই তাহলে তারা ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের চর রাজাপুর এরাকায় আমার ১৭ শতাংশ সম্পত্তির উপর ফ্যাক্টরি দখল নেবে ও আমার প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় থানায় আমি অভিযোগ দায়ের করি। সন্ত্রাসীরা হলো শাহীন, হামিদ প্রধান, নাসির, পিজ্জা শামীমসহ আরও অজ্ঞাত ২০-২৫ জন। কিন্তু এই অভিযোগ করার পর পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সন্ত্রাসীরা গত ১৯ অক্টোবর বিকেলে নাম উল্লেখিত অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জন আমার ফ্যাক্টরির ভাড়াটিয়াদের মারধর করে বের করে দেয়। যে বাহিনীর মূল নেতৃত্বে ছিলেন পিজা শামীম।
সেই সাথে জোরপূর্বক ফ্যাক্টরির মেইন গেইটের সামনে ইট ও সিমেন্ট দিয়ে পাকা দেয়াল নির্মাণ করে। আমার ফ্যাক্টরির প্রায় ৩৫-৪০ লাখ টাকা মূল্যের ঢেউটিন ও প্রোফাইল টিন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যেন প্রমাণ না থাকে সেজন্য সিসি ক্যামেরা ডিভিআর মেশিন ভেঙে ফেলে। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে এক সময়ে হোন্ডা বাহিনীর নেতৃত্ব দেন আকতার নূর, লিমন, নাসির, আমির, বারিশ সহ কয়েকজনকে সেই নেতৃত্বে দেখা গেছে। তবে এবার সেই বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম।
তিনি এখন নতুন গডফাদার হিসেবে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করছেন। প্রতিদিন তার নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন স্থানে হানা দেওয়া হচ্ছে। তার গাড়িতে চড়ে বিভিন্ন জনকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আছে। তার বাড়িতে নিয়মিত লোকজন যাচ্ছে নানা ধরনের বিচার শালিস নিয়ে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি এক পক্ষের হয়ে কাজ করে দিচ্ছেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বিগত সময়ে এই কুখ্যাত অপরাধী পিজা শামীম কে চর থাপ্পড় দিয়ে গালিগালাজ করলেও থামানো যায় নাই এই অপরাধীদের ।
সেলিম ওসমান একের পর এক বিভিন্ন সভা সমাবেশে সন্ত্রাসী হোন্ডা বাহিনীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যাচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসকল হুঁশিয়ারির কোনোটাই যেন কাজে আসছে না। তিনি পরপর কয়েকটি সভায় হাম্মাজান, খান সাহেব ও সবশেষ মাস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তারপরেও একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেই চলেছে। গত ১৬ মার্চ দুপুরে সাড়ে ১২টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান সেতুর পূর্ব দিকে শীতলক্ষ্যার তীরে বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা বাজারের পাশে হোন্ডা বাহিনীর তাণ্ডব ঘটে।
এর বর্ণনা দিয়ে মনিরুল হক পারভেজ জানিয়েছিলেন, আমাদের জমিতে এসে সাইনবোর্ড গেঁথে দিয়ে যায়। কে বা কারা এটা উঠিয়ে দেয়। পরে ১৪ মার্চ এসে আমাদের বাড়িতে ৩০-৪০টি মোটরসাইকেলে করে লোকজন এসে হুমকি দেয়। পরে ১৬ মার্চ আমাদের জমি দখল করার জন্য শতাধিক লোকজন এসেছিল। তাদের অনেকেই এসেছিল মোটরসাইকেলে করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই ফিল্মী স্টাইলে আমাদের ওপর গুলি ছুড়তে থাকে। এতে আমার পায়ে গুলি লাগে। ওই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল পিজা শামীম। দখলের এই চেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনিই। এ ঘটনার কয়েকদিন পরই পারভেজ মারা যান।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি বন্দরে মহানগর জাতীয় পার্টি কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেলিম ওসমান বলেছিলেন, ‘বন্দরে সন্ত্রাস ছিল না। পুনরায় বন্দরে সন্ত্রাস বেড়ে উঠেছে। এমন কোনো মানুষ নাই যার কাছে চাঁদা দাবি করা হয় না। কোনো এক খান সাহেব এখানে লুটতরাজ চালাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমি কোনো দল বুঝি না, কোনো ভালোবাসা বুঝি না, ছোট ভাই বুঝি না, বড় ভাই বুঝি না, বাপ বুঝি না- আমি যদি জীবিত থাকি বন্দরের মানুষ গত বছরের যেমন নিশ্চিন্তে ছিল এখনও নিশ্চিন্ত থাকবে।’
সেখানে শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘আপনারা যারা ভালো মানুষ আছেন দয়া করে যদি এগিয়ে আসেন। পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মূল করা সম্ভব না। ভালো মানুষ এগিয়ে এলে পঞ্চায়েতভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুললে মাদক সন্ত্রাস চাঁদাবাজ বন্ধ করতে পারি। আল্লাহ যদি আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসেন এবার ফিরে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবো। এ জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জবাসীর একই প্রশ্ন, জেলা প্রশাসনের দূর্বলতার কারণে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম অবনতি ঘটায় সন্ত্রাসী ও শাসক দলের নেতাদের নাম ব্যবহার করে অপরাধী চক্রের আস্ফালন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে ।
এদিকে নগরীতে ব্যাপকভাবে সমালোচনা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লজ্জ তৈলমর্দনকারী কর্মকর্তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডের কারনেই হোন্ডা বাহিনী ছাড়াও ডাকাত গেসু বাহিনীর মতো অপরাধী চক্র আস্ফালন চালিয়ে অতিষ্ঠ করে তুলেছে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ কে । অসাধু কর্মকর্তাদের এমন নির্লজ্জ কর্মকান্ডের বিচার কোন না কো ভাবে হবেই বলে মন্তব্য করেন অনেকেই ।









Discussion about this post