স্বামী আওয়ামী লীগের প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) সায়মা আফরোজ ইভাকে তলব করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
এছাড়াও আসনটির জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলমগীর সিকদার ওরফে লোটনের পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগে আরো চারজনকে কারন দর্শানোর নোটিশের মাধ্যমে তাঁদের তলব করা হয়।
আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তার স্ত্রী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. সায়মা আফরোজ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ও সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার লঙ্ঘন এটি।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) আসনটির নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি সিনিয়র সহকারি জজ ধীমান চন্দ্র মন্ডল নোটিশ পাঠান।
নোটিশ প্রাপ্ত অন্যরা হলেন, রামচন্দ্রদী ঋষিপাড়া এলাকার শ্রী দুলাল, শ্রী নগরবাসী দাস, ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলাম ও দুলাল মিয়া। সোমবার তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনে উপস্থিত হয়ে কিংবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিতভাবে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সায়মা আফরোজ ইভাকে পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমসূত্রে নির্বাচন অনুসন্ধান কিমিটির সভাপতি জানতে পেরেছেন যে, সায়মা আফরোজ আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ৭৭ (১) ঙ এবং ৮৬ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সায়মা আফরোজের এমন কাজের জন্য কেন তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করা হবে না সে বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে ।

স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবারও উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে মিছিল ও গণসংযোগে অংশ নিয়েছেন ডা. সায়মা আফরোজ। ইউনিয়নের বাজবি এলাকা থেকে কালিবাড়ি পর্যন্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচারণা চালান তিনি। এ সময় নৌকার পক্ষে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন সরকারি এ চিকিৎসক।
ওই প্রচারণায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুপ্তারা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শাহিদা মোশারফ, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আহমেদুল কবির, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে উপজেলার পাঁচগাও গ্রামে নৌকার পক্ষে গণসংযোগেও সায়মা আফরোজের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।
একইভাবে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ২৫ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অথবা অন্যত্র কোনো আইন সভার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অথবা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে বা অন্য কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করতে বা প্রভাব খাটাতে পারবেন না।
আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না এবং কোনো প্রার্থী তাদের প্রচারণায় ব্যবহার করতে পারবেন না। এ বিষয়ে বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু নৌকার প্রার্থীর স্ত্রী, যিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, তিনি প্রতিদিন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি, সংসদ সদস্যের নিজের উচিত এ বিষয়টি থেকে স্ত্রীকে বিরত রাখা।’
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তিনি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানাবেন বলেও জানান।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. সায়মা আফরোজ গণমাধ্যম কে বলেন, ‘আমি একজন সরকারি কর্মকর্তার পাশাপাশি একজনের স্ত্রীও। আমি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নয়, সংসদ সদস্যের স্ত্রী হিসেবে প্রচারণায় অংশ নিয়েছি।’
এদিকে, নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ডা. সায়মা আফরোজের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারটি দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে জানান জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। এই বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’









Discussion about this post