নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দ এলাকায় অবস্থিত রপ্তানিমুখী টোটাল ফ্যাশন লিমিটেড সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শুক্রবার গ্যাস পেলেও অন্য দিন সেভাবে পাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাসিব উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গ্যাস-সংকটে কারখানার উৎপাদন তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।’
নারায়ণগঞ্জে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার সংখ্যা আট শতাধিক। ডাইং প্রতিষ্ঠান তিন শতাধিক। সবখানেই গ্যাসের সংকট আছে। পঞ্চবটী বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত রপ্তানিমুখী ফেয়ার অ্যাপারেলস লিমিটেডের প্রতিদিন কাপড় উৎপাদনের ক্ষমতা ৩০ টন। এখন উৎপাদিত হচ্ছে ১০-১২ টন। এমএস ডাইং লিমিটেড বলছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। সক্ষমতা ৪০ টন হলেও উৎপাদিত হচ্ছে ১৫ টন।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে গ্যাসের চাপ ভালো থাকলেও অন্য দিন চাপ কমে যাচ্ছে। রপ্তানির স্বার্থে উৎপাদন ঠিক রাখতে শিল্পে সব সময় গ্যাস সরবরাহ রাখা দরকার।
গত শনিবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গ্যাস পাচ্ছে না মুন্সিগঞ্জের কারখানাগুলোও। প্রত্যাশা ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘লাইনের গ্যাস নেই। তাই জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করছি।’
জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মামুনার রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, গ্যাসের সরবরাহ বাড়েনি। আর তিতাস গ্যাস মুন্সিগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. মেজবা উদ্দিন বলেন, মুন্সিগঞ্জে গ্যাস-সংকট দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে।
জ্বলছে না রান্নার চুলা, ভোগান্তি
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বাগবাড়ি এলাকার গৃহিণী আমেনা বেগম বলেন, ‘গ্যাস না থাকায় ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করছি। এতে প্রতি মাসে বাড়তি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। আবার তিতাস গ্যাসকেও বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।’ শহরের মাসদাইর এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী মাকসুদা বেগম জানান, গভীর রাতে গ্যাস এলেও সকাল ছয়টার আগে চলে যাচ্ছে। বাবুরাইল এলাকার গৃহবধু সাহিদা হোসেন বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশী সময় যাবৎ সেই কবরী এমপি থাকাবস্থায় গ্যাসের দাবীতে আন্দোলন করাকালে যে গ্যাসের শংকট শুরু হয়েছিলো তা আজো ঠিক হয় নাই । মধ্য রাতে টিম টিম করে জ্বলে গ্যাস । চরম কষ্টে কখনো এলপি আবার কখনো ইলেকট্রিক চুলা আবার কখনো লাড়কি কিনে এনে রান্না করতে হচ্ছে । অথচ গ্যাসের বিলতো আর মাফ হবে না ।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর ইসলামপুর এলাকার গৃহিণী বুলবুলি বেগম বলেন, গ্যাস নেই, এলপিজি কেনার সামর্থ্য নেই; তাই মাটির চুলায় রান্না করতে হয়। এমন দুর্ভোগ শুধু তাঁর একার নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশি গ্যাস অনুসন্ধানের তাগিদ
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গ্যাসের দাম গড়ে ৮০ শতাংশ বাড়ানো হয়। শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার নামে দাম বাড়ানো হয় ১৭৯ শতাংশ।
তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. নাছির উদ্দিন বলেন, সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে কিন্তু নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।
এ পরিস্থিতিতে দেশি গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দেওয়ার তাগিদ দেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, এলএনজি আমদানি করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করার কথা বলেই দাম বাড়ানো হয়েছিল। এখন ডলার–সংকটে আমদানি করতে পারছে না। তাই স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশি গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর তৎপরতা না নিলে গ্যাস–সংকট থেকে ভোক্তা সহজে মুক্তি পাবেন না। বরং সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।









Discussion about this post