ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টানা ১৮ ঘণ্টার বর্ষণে ডিএনডির নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ডিএনডির মধ্য এলাকাসহ নিচু এলাকার বাসিন্দারা। এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ী ২ থেকে ৩ ফুট পানির নিচে। রান্নাঘর, টয়লেট ও ঘরের মেঝেতে ময়লা পানি প্রবেশ করেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার (২৮ মে) রাত থেকেই শিমরাইল ও আদমজীর পাম্প হাউজের সকল পাম্প দিয়ে পানি সেচ করা হচ্ছে। এছাড়াও ফতুল্লা, পাগলা ও শ্যামপুরের পাম্পিং প্লান্টের পাম্প দিয়েও পানি সেচ দিচ্ছে। দুর্ভোগ লাগবে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। দ্রুতই পানি নেমে যাবে আশা সেনাবাহিনীর।
জানা যায়, টানা ১৮ ঘণ্টা প্রবল বর্ষণে ডিএনডি অভ্যন্তরে সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী, মিজমিজি, বাতানপাড়া, সাহেবপাড়া, সানারপাড়, নিমাইকাশারী, ভূইঘর, জালকুড়িসহ ডিএনডি’র মধ্য এলাকায় পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার ঘর-বাড়িতেও পানি প্রবেশ করায় জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।
এমন জলাবদ্ধতার কারণে বাড়ির ছোটছোট শিশু-বাচ্চাসহ বয়স্কদের হাত পায়ে নানা চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগ হচ্ছে। বাথরুম, রান্নাঘর থাকার ঘর পানিতে ডুবে গেছে। পানির কারণে ভাড়াটিয়াদের থাকাটাই দায় হয়ে পড়েছে। যদিও সেনাবাহিনী ডিএনডি প্রকল্পটি সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ছোটছোট খালগুলো সেনাবাহিনী পরিষ্কার করে দিলেও স্থানীয় বাসিন্দারা পুনরায় ময়লা ফেলে খালটি দিয়ে পানি চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। যার কারণে পানি ঠিকমতো ডিএনডি খালে নিষ্কাশন হচ্ছে না। স্থানীয় কাউন্সিলরকে এ বিষয়ে জানিয়েছি আমাদের রাস্তাটি সংস্কার করে দেওয়ার জন্য। গত ১০ বছর যাবত দেখছি একটু বেশি বৃষ্টি হলেই পানিতে ভুগছি। যদি সবসময় এমন পরিস্থিতি থাকে তাহলে বাড়িতে থাকা দুষ্কর হয়ে যাবে। আমরা ডিএনডিবাসী চাই জলাবদ্ধতা নিরসনে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সিটি করপোরেশনও যেন জোরদার ভূমিকা রাখে।
গত মঙ্গলবার ২৮ মে সারাদিন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কদমতলী, সানারপাড়, মিজমিজি, রসূলবাগ, জালকুড়ি এলাকায় নিচু বাড়িঘরগুলো পানিতে তলিয়ে আছে। এসময় কদমতলী নয়াপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জানায়, এখন ঘরের মেঝেতে পানি। টানা বর্ষণে রাস্তাঘাট ডুবে ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। পানির সাথে ময়লা থাকায় দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না। এসময় গার্মেন্টস কর্মী সেলিনা বেগম জানায়, সড়কের পানি মাড়িয়েই কাজে যেতে হচ্ছে। একই অবস্থা সানারপাড় এলাকাও। ৩ নং ওয়ার্ডের আদর্শ নগর বাসিন্দা তিতাস গ্যাস টি এন্ড ডি কোং লি: এর অবসরপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন তালুকদার বলেন, আমার ৬টি টিনের বাড়িতে ২৫ টি ভাড়াটিয়ায় রয়েছে। সবমিলে প্রায় ১০০ জন সদস্য হবে। এখন পুরো বাড়িতে সবাই পানিবন্দী।
সরকার ডিএনডিবাসীর দুর্ভোগ লাগবে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে “নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (২য় পর্যায়)” প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন বাস্তবায়ন করছে।
শিমরাইল পাম্প হাউজে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাম্পে ৩ দশমিক ৪০ মিটার পানির উচ্চতা রয়েছে যেখানে স্বাভাবিক ভাবে থাকে ২ দশমিক ৮০ মিটার। এ হিসাবে ডিএনডি এলাকা ২ ফুট পানির নিচে রয়েছে। পাম্প হাউজ সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাশনের জন্য শিমরাইল ও আদমজী পাম্প হাউজের ১৩টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প এবং ফতুল্লা, কদমতলী ও শ্যামপুরের পাম্পিং প্লান্টের সকল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনডি প্রকল্পের এক উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা জানান, দুই পাম্প হাউজে পার সেকেন্ডে সাড়ে পাঁচ কিউবিক মিটার ক্ষমতা সম্পন্ন ১৩টি পাম্প চালুর পাশাপাশি ৩টি পাম্পিং প্লান্টের পাম্প চালু রয়েছে। দ্রুতই পানি কমে আসবে। তিনি ডিএনডিবাসীদের আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।









Discussion about this post