কোটা আন্দোলনে টানা চার দিন নারায়ণগঞ্জে চলেছে ব্যাপক সহিংসতা। সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। এখানকার সরকারদলীয় এমপি শামীম ওসমান ‘আসেন খেলি’ বলে প্রায়ই প্রতিপক্ষকে হুমকি দেন। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী বলছেন, আসল খেলার সময় তিনি নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন। তাঁর এলাকায় অবস্থিত পিবিআই অফিস, শিল্প পুলিশ ক্যাম্প, পাসপোর্ট অফিস, গার্মেন্ট, যুব উন্নয়ন কেন্দ্র ও ক্লিনিকে লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। অবশ্য শামীম ওসমান কিছু সময়ের জন্য মাঠে নেমেছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ সদরে জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, জেলা বা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বা অন্য কাউকে। কাঁচপুরে আন্দোলনকারীদের শক্ত অবস্থান থাকলেও অভিযোগ রয়েছে– সোনারগাঁয়েই ছিলেন না স্থানীয় এমপি কায়সার হাসনাত।
কোটা বাতিলের দাবিতে ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চাষাঢ়া, সাইনবোর্ড মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে নারায়ণগঞ্জ অচল করে দেয় ছাত্ররা। আড়াইটা পর্যন্ত তাদের এ অবস্থান ছিল। ছাত্ররা চলে যাওয়ার পর রাজপথ দখল করে অছাত্ররা। তারা নারায়ণগঞ্জ শহর, লিংক রোড, সাইনবোর্ড থেকে চিটাগং রোড, কাঁচপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ শুরু করে।
১৮ জুলাই রাতে শহরের জেলা আওয়ামী লীগ অফিস, ২ নম্বর রেল গেটের পুলিশ বক্স, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ডের অদূরে অবস্থিত পাসপোর্ট অফিস ও পিবিআই অফিস জ্বালিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। অবশ্য একই রাতে নগরীর দেওভোগ আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তা প্রতিরোধ করে।
এ সময় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তখন চাষাঢ়ায় পুলিশের সঙ্গে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে আজমেরী ওসমানের বাহিনী। আজমেরী ওসমান এমপি শামীম ওসমানের ভাতিজা ও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি নাসিম ওসমানের ছেলে। পরের দিন (শুক্রবার) দুপুরে শামীম ওসমান তাঁর দলবল নিয়ে শহরে, সিদ্ধিরগঞ্জ ও লিংক রোডের একাংশে মহড়া দেন।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, আন্দোলন শুরু হলে শামীম ওসমানের অসুখ বেড়ে যায়। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তিনি শহরে আসেন। শামীম ওসমান যখন শহরে, তখন সাইনবোর্ডে ও জালকুড়িতে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ চলছিল। কিন্তু তিনি সাইনবোর্ড বা জালকুড়িতে না গিয়ে পুলিশ প্রহরায় নিরাপদ স্থান শহরে মহড়া দেন।
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের মাঠে না নামার পেছনে মূল কারণ তৃণমূল কর্মীদের মূল্যায়ন না হওয়া।
কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু সারাজীবন বিএনপি করেছেন। শামীম ওসমানের হাত ধরে তিনি এখন আওয়ামী লীগার। সদর উপজেলায় নির্বাচন করতে না দিয়ে বিএনপি নেতা আজাদ বিশ্বাসকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ তিনি ওসমান পরিবারের অনুগত।
এ বিষয়ে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বলেন, ‘আমরা মাঠে ছিলাম। আমাদের অবস্থানের কারণে শহরে লুটপাট হয়নি।’
তবে জেলা ও মহানগর শাখার নেতাকর্মীর রাস্তায় না নামা প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, ‘হাইব্রিডরা দলে ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছিল। দুঃসময়ে তারা মাঠে নেই। তা ছাড়া ঘটনাগুলো হঠাৎ ঘটেছে। ফলে এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি ছিল না।’
এ বিষয়ে আইভীর ঘনিষ্ঠজন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসের রাজনীতি করি না। এবার যারা হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করেছে তারা সশস্ত্র ছিল। তারা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। তা ছাড়া আন্দোলনটি ছিল ছাত্রদের।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুরে ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই ব্যাপক সহিংসতা চালায় আন্দোলনকারীরা। তবে এ সময় মাঠে দেখা যায়নি স্থানীয় এমপি কায়সার হাসনাত বা তাঁর লোকজনকে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে মাঠে ছিলাম। এমপি ও তাঁর লোকজন মাঠে ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে তৃণমূল আওয়ামী নেতাকর্মীর সম্পর্ক নেই।’ এ বিষয়ে কথা বলতে এমপি কায়সারকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। সূত্র : সমকাল









Discussion about this post